ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

২০০ মিটার স্প্রিন্টেও স্বর্ণপদক জিতে উসাইন বোল্টের আরেকটি ‘ট্রিপল’ হয়ে গেল ডাবল হ্যাটট্রিক, অলিম্পিকসের ১২০ বছরের ইতিহাসে এমন বিরল অর্জন আর কারও নেই

আটে আট, বিদ্যুতে মাতল ফের রিও অলিম্পিক পার্ক

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ২০ আগস্ট ২০১৬

আটে আট, বিদ্যুতে মাতল ফের রিও অলিম্পিক পার্ক

তিনি যে সর্বকালের সেরা স্প্রিন্টার তা নিয়ে আর কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়। ১০০ মিটারে হেসেখেলে জাস্টিন গ্যাটলিনকে হারিয়ে সোনার পদক জয়ের পর নিজেই সে কথা সদর্পে ঘোষণা করেছিলেন উসাইন বোল্ট। ‘আই এম দ্য বেস্ট’। ২০০ মিটার স্প্রিন্টে তিনি সময় নিলেন ১৯ দশমিক ৭৮ সেকেন্ড। সোনার মেডেল গলায় ঝুলিয়ে সে কথার উপর সিলমোহর মেরে দিলেন নিজেই। আটে আট, বিদ্যুতে মাতল ফের রিও অলিম্পিক পার্ক। হয়ে গেল আরেকটি হ্যাটট্রিক। সে সঙ্গে দিয়ে রাখলেন ‘টিপল-ট্রিপল পূরণে ৪ল্প১০০ রিলে জেতার হুঙ্কার। এক শ’ মিটারের হ্যাটট্রিক তো পাঁচদিন আগেই করে ফেলেছিলেন। এবার ২০০ মিটারেও একই চিত্র। ডাবল হ্যাটট্রিক হয়ে গেল। এতেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে নিয়েছেন সর্বকালের সেরা এ্যাথলেট হিসেবে। রিলের হ্যাটট্রিকটা হয়ে গেলে এ্যাথলেটিক্সের ইতিহাসে অমরত্ব পেয়ে যাবেন তিনি। এ দুটো মহামূল্যবান পদক জেতার পর ট্র্যাক এ্যান্ড ফিন্ডের মহানায়ক তিনি ছাড়া যে পৃথিবীতে আর কেউ নেই। অতীতেও না বর্তমানেও তার সমকক্ষ কেউ নেই। সেমিফাইনালেই ছিটকে গিয়েছিলেন প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিন গ্যাটলিন। পাশে ছিলেন না কার্ল লুইস বা আসাফা পাওয়েলের মতো বিশ্ব খ্যাত তারকা। যারা ছিলেন সবাই প্রায় নতুন মুখ। অনেকটা ফাঁকা ময়দানেই আরেকটা গোল করে ফেললেন জ্যামাইকান গতিদানব। লড়াই শেষে সেই চিরাচরিত পোজ ‘দ্য লাইটনিং বোল্ট’। ২০ দশমিক ০২ সেকেন্ড সময় নিয়ে রৌপ্য জিতে আগামীর তারকা হিসেবে নিজেকে উঁচুতে নিয়ে গেলেন কানাডার আন্দ্রে ডি গ্রাসে। আর ব্রোঞ্জ জয়ী ফ্রান্সের ক্রিস্টেফে লেমিট্রি সময় নিলেন ২০ দশমিক ১২ সেকেন্ড। এই হচ্ছে ২০০ মিটার স্প্রিন্টের মূল চালচিত্র। কিন্তু বিদ্যুত বোল্টের যে এখানেই শেষ নয়। স্টাটিং মার্কে পা রাখার আগেই ট্র্যাকে দাঁড়িয়ে হাসছিলেন। দু’হাত নেড়ে নানা অঙ্গভঙ্গি। শরীরটাকে নাড়িয়ে অদ্ভুত নৃত্য। স্বর্ণপদক জয়ের প্রবল আত্মবিশ্বসটা যে এখানেই লুকিয়ে। ঈশ্বরকে স্মরণ করলেন, আশীর্বাদ কামনা করলেন আকাশপানে তাকিয়ে। আর দৌড় শেষে মুখে হাসির রেখা টেনে গোটা মাঠ প্রদক্ষিণ। গ্যালারিতে তখন কেবলই বোল্ট ধ্বনিতে মুখরিত। দর্শক-ভক্তদের অভিবাদন গ্রহণ করলেন হাত উঁচিয়ে। সামনে থাকা ভাগ্যবান দর্শকেরা হ্যান্ডসেক করার সুযোগ পেলেন। আবদার মিটালেন বোল্ট অনেকের সঙ্গে সেলফি তুলে। প্রায় ২০ সেকেন্ডেই মামলা শেষ। কিন্তু বোল্ট মাঠ ছাড়লেন অন্তত মিনিট বিশেক পরে। জ্যামাইকার জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে নিজের স্টাইলের সেই নৃত্য, দুই পা ওঠানামা করে নানা কসরত। এই আবেগী হয়ে পড়টা তার নতুন নয়। বেজিং ও লন্ডনের পর রিওতে ক্যারিয়ারের শেষ অলিম্পিকসেও একই মহড়া। জাদুর পরশ মাখা দুই পায়ে দৌড়িয়ে তিনি কেবল আনন্দ দেন না। দৌড় শেষে ট্র্যাকেও অনেকক্ষণ শিল্পীর মতোই নেচে গেয়ে মাতিয়ে তোলেন দর্শক গ্যালারি। এখানেই অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম আধুনিক এ্যাথলেটিক্সের মহাতারকা বনে যাওয়া উসাইন বোল্ট। যদিও ১০০ মিটারের মতো ২০০ মিটার স্প্রিন্টেও নিজের সেরা টাইমিং টপকাতে পারেননি। লন্ডন অলিম্পিকে সময় নিয়েছিলেন ১৯ দশমিক ৩২ সেকেন্ড। ২০০৮ বেজিং অলিম্পিকে রেকর্ড গড়েছিলেন ১৯ দশমিক ৩০ সেকেন্ড সময়ে। নিজের টাইমিং অতিক্রম করতে পারেননি তাতে কি? সোনার পদক তো জিতলেন অপ্রতিরোধ্য গতিতে। ১৫০ মিটার পর তার আশপাশে কেউ নেই। বাকি ৫০ মিটার পার কলেন বুক চাপড়ে হাসতে হাসতে। ট্র্যাকে চুমু খেয়ে চক্কর দিলেন গোটা মাঠ। যার চারপাশ ঘিরে দর্শকে ঠাসা গ্যালারি। রেস শেষ হতে না হতেই শুরু হলো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। বাইরে তাপমাত্রা নিচে নেমে গেলেও গোটা স্টেডিয়াম উত্তপ্ত বোল্ট ম্যাজিকে। ক্যামেরার সব ফোঁকাস ট্র্যাক আলোকিত করে দেয়া তাকে ঘিরে। আর দু’দিন পরেই জন্মদিন। ৩০ বছরে পা রাখবেন উসাইন বোল্ট। জন্মদিনের আগাম উৎসবটাও যেন হয়ে গেল আটে আট মেরে। অর্থাৎ টানা তিন অলিম্পিকে ১০০ ও ২০০ মিটারে স্বর্ণপদক। আর বেজিং ও লন্ডন অলিম্পিকেসের রিলের পদক মিলে ভা-ারে জমা পড়ল সোনায় মোড়ানো আট পদক। রিওতে অবশিষ্ট বলতে এখন রিলের প্রত্যাশিত পদক। ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের আরেক কিংবদন্তি কার্ল লুইস টানা দুইবার ১০০ মিটারে অলিম্পিক স্বর্ণপদক জিতেছিলেন। কিন্তু নিজের প্রথম ইভেন্টের ফাইনাল জিতে লুইসকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন বোল্ট এবারের গেমসে। আর ২০০ মিটারে বাজিমাত করে নিজেকে নিয়ে গেলেন এভারেস্টের চূড়ায়। এমনিতেই ১২০ বছরের অলিম্পিক ইতিহাসে এমন অভাবনীয় কীর্তি কখনও দেখা যায়নি। রিওতে ২০০ মিটার জিতে ব্রাজিল সময় বৃহস্পতিবার রাতে যেমনটা করলেন জ্যামাইকান তারকা। সর্বকালের সেরা এ্যাথলেট হিসেবে প্রশ্নাতীত ছাপ রেখে দিলেন তিনি। বলে রাখা দরকার, কিংস্টনে ২০০২ জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ২০০ মিটার স্প্রিন্টে সবচেয়ে কম বয়সী বোল্ট সোনার পদক গলায় ঝুলিয়ে ছিলেন রেকর্ড গড়ে। সেই শুরু। আর কয়েক বছরের মধ্যে রেকর্ড ভাঙ্গা-গড়াটা অভ্যাসে পরিণত করেন স্প্রিন্টের অবিসংবাদিত সম্রাট হয়ে উঠা এই এ্যাথলেট। কোন মন্ত্রে এত সফল বোল্ট? পরিষ্কার বলে দিলেন, নিজের প্রতি আস্থা আর সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস। ২০০৪ এ্যাথেন্স অলিম্পিকে ইনজুরির কারণে প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে গিয়েছিলেন। কেবল হাতাশ নয়, দারুণ এক যন্ত্রণা নিয়ে ঘরে ফিরতে হয়েছিল। সেই হতাশাই ১২ বছরে বদলে দিয়েছে গতিদানবের ক্যারিয়ার। পৌঁছে দিয়েছে সাফল্যের শিখরে। সেটাকে এবার আরও পোক্ত করার মিশনে নিজেকে সফল হিসেবে প্রমাণ করলেন বোল্ট এ্যাথলেটিক্সের সবচেয়ে মর্যাদার স্প্রিন্টের দুই সোনার পদক জিতে। উল্লেখ্য, বোল্টের প্রতিক্রিয়া প্রথম পাতায়।
×