ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘আমার নামটি গয়া বাইদ্যা বাবু বাড়ি পদ্মাপাড়’

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২০ আগস্ট ২০১৬

‘আমার নামটি গয়া বাইদ্যা বাবু বাড়ি পদ্মাপাড়’

বাবু সেলাম বারেবার, আমার নামটি গয়া বাইদ্যা বাবু বাড়ি পদ্মাপাড়Ñ পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের এক সময়ের সাড়া জাগানো কালজয়ী নাটকের সেই আবেদন আর নেই। সাপ খেলা দেখাই, মাজার বিষ নামাই, সিঙ্গা লাগাই-দাঁতের পোকা নামাই’ এমন সব অদ্ভুত হাঁকডাক গ্রামীণ জনপদে জীবিকার জন্য ঘুরে বেড়ানো বেদে সম্প্রদায়কে মাদারীপুর অঞ্চলে এখন খুব একটা দেখা যায় না। এক সময় জীবন ও জীবিকার তাগিদে বেদে নারীরা গ্রামগঞ্জে ঘুরে ঘুরে রোগ-ব্যাধি সারানোর নামে নানা কৌশলে অর্থ উপার্জন করেছে। এরা সাধারণত আকৃষ্ট করেছে গ্রামের সহজ সরল অশিক্ষিত নারীদের। বেদেনীদের খপ্পরে পড়ে অনেকের ঘর-সংসারও ভেঙ্গেছে শোনা যায়। কিন্তু বর্তমান সময়ে শিক্ষার উন্নয়নের পাশাপাশি চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন হওয়ায় মানুষ এখন আর অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির চিকিৎসা নিতে রাজি নয়। যে কারণে আশঙ্কাজনকহারে হ্রাস পেয়েছে বেদে সম্প্রদায়ের আনাগোনা। এ সম্পদায়ের অস্তিত্ব এখন সঙ্কটাপন্ন। বেদেদের পুরনো ও নতুন প্রজন্ম তাদের পেশায় থাকছে না। তারা নতুন নতুন পেশা বেছে নিচ্ছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বেদেনির্ভর অপচিকিৎসা থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এসব কারণে তাদের আয়ও কমে গেছে। বিশেষ করে গ্রামের হাটবাজারকেন্দ্রিক বেদে সম্প্রদায়ের ব্যবসা-বাণিজ্যও কমে এসেছে। অঞ্চলভেদে এরা বাদিয়া, বাইদিয়া, বেদে, বেদেনি, বাইদ্যা, বাইদ্যানি, সাপুড়ে ইত্যাদি নামে পরিচিত। যে নামেই পরিচিতি পাক না কেন নিজেদের জীবন-জীবিকার ও অস্তিত্ব ধরে রাখতে তারা এখন কঠিন সময় পার করছে। এক সময় দেশের নদ-নদী ছিল এদের চলাচলের বড় মাধ্যম। জীবিকার সন্ধানে এই যাযাবর সম্প্রদায় নৌকা ও ডিঙিতে করে এঘাট-ওঘাট ঘুরে বেড়িয়েছে। এরা ঘাটে ঘাটে নৌকা বেঁধে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসার নামে টোটকা, সিঙা লাগানোর নামে অপচিকিৎসা করে মানুষের কাছ থেকে অর্থ রোজগার করেছে। তাদের একটি অংশ চুড়ি, থালাবাসন বিক্রি, সাপের খেলা দেখানোর কাজ করেও আয় করেছে। এ আয় দিয়েই বেদে সম্প্রদায়ের জীবন চলেছে। সাপের বিষ নামানোর ওঁঝা হিসেবে বেদে সম্প্রদায়ের খ্যাতি ছিল। ১০-১৫ নৌকা বা ডিঙি নিয়ে বেদেরা সপরিবারে নদ-নদীর পাড়ে নৌকার বহর ভিড়িয়েছে। যখন নদী দিয়ে এক ঘাট থেকে অন্য ঘাটে বেদে নৌকার বহর গেছে, তখন মানুষ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেছে। এদের কোন কোন পরিবার ডাঙ্গায় ছই অথবা তাঁবু টাঙিয়ে এক সঙ্গে মাসের পর মাস বসবাস করে। এক সময় খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড়, নদ-নদীতে বারো মাস বেদে নৌকা দেখা গেছে। হাঁক ছেড়ে পাড়া-মহল্লার বউদের আকৃষ্ট করেছে। ঝাড়ফুঁক, গাছ-গাছড়ার লতা-পাতা দিয়ে ওষুধ তৈরি করে দেয়া, সিঙা লাগানো, সাপ খেলা দেখিয়ে এবং সাপ গলায় পেঁচিয়ে মানুষকে ভয় দেখিয়ে পয়সা উপার্জন করেছে। নতুন ধান-পাট কৃষকের ঘরে উঠলে বেদে-বেদেনীরা বেশি এসেছে। মাদারীপুরে এদের বেশি দেখা গেছে সদরের লঞ্চঘাট, মহিষেরচর, মস্তফাপুর, কেন্দুয়া, কলাগাছিয়া, আড়িয়ালখাঁ ঘাট, কুলপদ্মী, তালতলা, মাদ্রাঘাট, ছিলারচর, কালকিনির ঠ্যাঙ্গামারা, সাহেবরামপুর, বাঁশগাড়ি, খাশেরহাট, ভাদুরী, আউলিয়াপুর, ভুরঘাটা, ফাঁসিয়াতলা, হোগলপাতিয়া, লক্ষ্মীপুর, ঝুরগাঁও, রাজৈরের টেকেরহাট বন্দর, সাধুর ব্রিজ, আমগ্রাম, কবিরাজপুর, শিবচরের উৎরাইল, হাজী শরীয়তউল্লাহ সেতু, পাচ্চর, উমেদপুর, চান্দেরচর, কাদিরপুর, কাওড়াকান্দি, সন্ন্যাসীরচর, শেখপুর, বিলপদ্মা, বহেরাতলায়। এসব এলাকা ছিল বেদে সম্পদ্রায়ের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। Ñসুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর থেকে
×