ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণের দ্বার

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২০ আগস্ট ২০১৬

দক্ষিণের দ্বার

আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হলো দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রার। এটি দক্ষিণের দ্বার হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে যাচ্ছে। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার রামনাবাদ চ্যানেলে প্রতিষ্ঠিত এ বন্দরের কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি বন্দরের বহির্নোঙ্গরে চীনের জাহাজ এমভি ফরচুন বার্ড থেকে পদ্মা সেতুর জন্য আনা পাথর খালাসের মধ্য দিয়ে কাজের সূচনা করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরটি চালু হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের আমূল পরিবর্তন হবে। বন্দরকে ঘিরেই মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সমগ্র অঞ্চলটিই অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় দক্ষিণাঞ্চল সফর করার সময় ওই অঞ্চলের সম্ভাবনার বিষয়টি নজরে এলে পায়রা বন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পায়রা সমুদ্রবন্দর কেবল দক্ষিণাঞ্চল নয়, সমগ্র দেশ, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের জন্য শুভ সূচনা। সবচেয়ে আশা জাগানিয়া খবর হলোÑ সামুদ্রিক এই বন্দরটিকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের বিরাট অংশে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হলো। রেল যোগাযোগের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অগ্রগতির ছোঁয়া লাগবে। কার্যক্রম শুরুর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি এই পায়রা বন্দরকে গুরুত্ব দিল সরকার। ২০১৩ সালের ১৯ নবেম্বর দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর হিসেবে পায়রার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বন্দরটিকে ঘিরে গড়ে উঠছে তিনটি কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রও। নতুনভাবে বন্দরের কার্যক্রম চালুর সুবাদে সামগ্রিকভাবে দ্রুত বদলে যাচ্ছে এ অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক চালচিত্র। বন্দরটি পুরোদমে চালু হলে অর্থনৈতিক অঞ্চল, তৈরি পোশাক, ওষুধ শিল্প, সিমেন্ট, মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, সার কারখানা, তেল শোধনাগার ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পসহ অনেক শিল্প-কারখানাও গড়ে তোলা সম্ভব হবে। দেশের প্রায় ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল। এই দীর্ঘ উপকূলবর্তী এলাকায় রয়েছে অসংখ্য চ্যানেল। এটা আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ বলা যায়। বাংলাদেশের আমদানি-রফতানির ৯৫ শতাংশ সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে সিংহভাগই চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এতে সহজেই বোঝা যায়, দুটি বন্দরের ওপর কি পরিমাণ চাপ ও নির্ভরশীল হতে হয়। প্রাকৃতিক কারণেই চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের সম্প্রসারণ সীমিত হয়ে যাচ্ছে। তাই পায়রা সমুদ্রবন্দরের গুরুত্ব বেড়ে যাবে এবং অন্য দুটির ওপর চাপ কমে যাবে বহুলাংশে। দক্ষিণাঞ্চল থেকে মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ ও রফতানিকরণ সহজ হবে। শিল্প-কল-কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে বৃদ্ধি পাবে কর্মসংস্থান। এতে এখানকার আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বড় ধরনের রূপান্তর ঘটতে পারে। এই সমুদ্রবন্দরের পাশেই ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’ নামে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ নৌঘাঁটি রয়েছে। এতে থাকবে নৌকমান্ড, এ্যাভিয়েশন, জাহাজ ও সাবমেরিন বাথিং সুবিধা। ফলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং দুর্যোগকালে এই এলাকার মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। রাজধানী ঢাকা থেকে রামনাবাদ চ্যানেলের দূরত্ব প্রায় ৩৪০ কিলোমিটার। এক্ষেত্রে রাজধানীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে পায়রা সমুদ্রবন্দর আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। বিশ্লেষকদের অভিমত এই অঞ্চলের পাথরঘাটায় আরেকটি সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে এখনই পরিকল্পনা গ্রহণ করে অগ্রসর হওয়া যায়। কোন দেশের বন্দর, সেটা স্থল, সমুদ্র বা বিমান যাই হোকÑ তা সেই দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। তবে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকা-ে সমুদ্রবন্দরের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই খাতে আরও সুবিধাদী বাড়ানো জরুরী। এই বন্দরকে ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অনেক স্বপ্ন। তাই বন্দর সংক্রান্ত পরিকল্পনাগুলো যথাযথ ও দ্রুত বাস্তবায়ন দরকার।
×