ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সিটি কর্পোরেশনের মধ্যেই এমন দৃশ্য দেখা গেলেও এ নিয়ে কারও কোন দায় নেই

রাজশাহীতে এখনও বাঁশের খুঁটিতে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুতের সংযোগ

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২০ আগস্ট ২০১৬

রাজশাহীতে এখনও বাঁশের খুঁটিতে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুতের সংযোগ

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী নগরীর পূর্বপ্রান্তে কোর্ট এলাকার একটি মহল্লা বুলনপুর। কোর্ট ঢালান পেরিয়ে পূর্বদিকে সামনে এগোতেই পদ্মা নদীর পাশ ঘেঁষে গড়ে উঠা ঘরবাড়ি, বসতিতে যে কেউ চোখ দিলেই মিলবে শত শত বাঁশের খুঁটি। সেই খুঁটি ব্যবহার হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুত সঞ্চালনের কাজে। একেকটি বাঁশের খুঁটির সঙ্গে ঝুলে আছে হাজারও বিদ্যুতের সংযোগ। এভাবেই ওই এলাকাকার বাসিন্দারা বিদ্যুতের সংযোগ নিয়েছেন যত্রতত্র বাঁশের খুঁটিতে। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হলেও খোদ সিটি কর্পোরেশনের মধ্যেই এখনও এমন দৃশ্য দেখা যায় ওই এলাকায়। এ নিয়ে কারও কোন দায় নেই। দৃষ্টি নেই বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তাদের। অভিযোগ রয়েছে বাঁশের খুঁটিতে বিদ্যুত সঞ্চালন অবৈধ হলেও বিদ্যুত বিভাগের লোকজন অর্থের বিনিময়ে এসব হাজারও বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে রেখেছেন ওই এলাকায়। অর্থের বিষয়টি বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তারা অস্বীকার করলেও বাস্তবতা হলো শত শত বাড়িঘর আর হঠাৎ গড়ে উঠা স্থাপনায় যত বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হয়েছে তার সবই বাঁশের খুঁটির মাধ্যমে। যে কেউ ওই এলাকায় দৃষ্টি দিলেই মনে হবে বিদ্যুত ব্যবস্থায় আদিম রূপ যেন পুরো এলাকায় বিদ্যমান। বুধবার নগরীর বুলনপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বুলনপুর থেকে জিয়ানগর হয়ে রায়পাড়া পর্যন্ত পদ্মা নদীর বাঁধ ঘেঁষে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পদ্মার তীরবর্তী এলাকার যত স্থাপনা রয়েছে সেসব স্থাপনায় বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হয়েছে শুধুই বাঁশের খুঁটিতে। সড়কের ওপর প্রধান বিদ্যুতের লাইন থেকে যত্রতত্রভাবে যে যেভাবে পেরেছে বিদ্যুতের সংযোগ নিয়েছে ইচ্ছেমতো। কয়েক শ’ স্থাপনায় হাজারও বাঁশের মাধ্যমে এসব বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হয়েছে। বালু মহালের টং থেকে শুরু করে ছোট ছোট খুপরি ঘর এমনকি পাকা ঘরবাড়িতেও বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হয়েছে বাঁশের খুঁটিতেই। এতে জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি বাড়লেও মাথা ব্যথা নেই কারও। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এখানে বিদ্যুতের কোন ‘মা-বাপ’ নেই। যে যার মতো পারে সেভাবে বাঁশের খুঁটি পুঁতে মূল লাইন থেকে বিদ্যুতের সংযোগ নিয়ে নেন। বিদ্যুত বিভাগের লোকজন এসে মাঝে মাঝে টাকা পয়সা নিয়ে যান। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর ধরে। বিদ্যুতের পোল না বসানোর কারণে এ অবস্থা বলে জানান স্থানীয়রা। পদ্মার তীরবর্তী বুলনপুরে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) সীমান্ত চৌকি রয়েছে। তার সংলগ্ন সব এলাকায় বিদ্যুতের পরিবাহী মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে শুধুই বাঁশের খুঁটি। এসব বাঁশের খুঁটিতে বিদ্যুতের সংযোগ নিয়ে রাতদিন চলছে বালুমহালের কাজ। ওই এলাকা সংশ্লিষ্ট নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুনসুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুধু বুলনপুর, জিয়ানগর ও পদ্মা তীরবর্তী এলাকা নয়, তার ওয়ার্ডের কয়েক শ’ ফ্ল্যাট ও বাসাবাড়িতের বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের খুঁটিতেই। এসব সংযোগে বিদ্যুত বিভাগ থেকে মিটার বসানো হলেও বিদ্যুতের পোল সরবরাহ করা হয় না। বছরের পর বছর ধরে বাঁশের খুঁটিতেই চলছে বিদ্যতের সংযোগ। বারবার বাঁশের খুঁটি পরিবর্তন করে বিদ্যুতের পোল সরবরাহের জন্য বিদ্যুত বিভাগে যোগাযোগ করলেও কোন কাজ হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড রাজশাহীর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ বলেন, বাঁশের খুঁটিতে বিদ্যুতের সংযোগ সম্পূর্ণ অবৈধ। এটির কোন নিয়ম নেই। তবে ওই এলাকায় কেন বিদ্যুতের পোল নেই, সে বিষয়টি তদারকি করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি একজনকে এলাকা পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেন।
×