ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অজয় দাশগুপ্ত

তিনিই অন্ধকারের আলোকবর্তিকা

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২০ আগস্ট ২০১৬

তিনিই অন্ধকারের  আলোকবর্তিকা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যারা অপছন্দ করেন তাদের কেউ কেউ বেশ লেখাপড়া জানা মানুষ। আমি খেয়াল করে দেখেছি মধ্যবিত্ত নামে পরিচিত উ™£ান্তের সুবিধাবাদী শ্রেণীটি তাঁর বিরুদ্ধে সোচ্চার। প্রান্তিক বা গরিব জনগণ আফসোস বা হাতাশা থাকলেও তাদের বিরোধিতা নেই। যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের বিচার ও শাস্তি হওয়ার পর থেকে এই গাত্রদাহ অনেক বেড়ে গেছে। শেখ হাসিনা আজও বেঁচে আছেন, আজও তিনি অটুট মনোবলের অধিকারী এটাই তাদের অন্তর্জ্বালার মূল কারণ। তাঁকে হত্যা করার একটি চেষ্টা আমরা দেখেছিলাম চট্টগ্রামে। আমি তখন লালদীঘির পাড়েই কাজ করি। তিনি আসবেন জেনে সবাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে বেরিয়ে দেখছিল কখন তিনি ওই পথ দিয়ে যাবেন। একটু পরেই বদলে গেল দৃশ্যপট। উ™£ান্তের মতো দৌড়ে পালানো মানুষজন আর পুলিশের ছোটাছুটি বলে দিয়েছিল কিছু একটা ঘটেছে। সে যাত্রায় তাঁকে মেরে ফেলার নির্মম ষড়যন্ত্র বানচাল করে দিয়েছিল ভালবাসার সাধারণ মানুষ। পদ-পদবিহীন আমজনতা তাঁকে ভাল না বাসলে আজ অবধি বেঁচে থাকতে পারতেন না জননেত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু সবচেয়ে নির্মম ও জঘন্য হত্যা চেষ্টা হয়েছিল একুশে আগস্টে। যারা বিএনপির দোষ দেখেন না, জিয়াকে ধোয়া তুলসীপাতা মনে করেন তাদের বলি, পিতা ছিলেন প্রচ্ছন্ন ভূমিকায়। আর পুত্র নেমে এসেছিল ঘাতকের পর্যায়ে। আইন কি বলে জানি না, তবে এটুকু মানতে হবে এদের কুপরামর্শ আর মদদ ছাড়া ঢাকার রাস্তায় অতবড় ঘটনা ঘটানো ছিল অসম্ভব। একশ্রেণীর সুবিধাবাদী বাঙালীর কথা হলো আওয়ামী লীগকেই উদারতা দেখাতে হবে। তারা বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আহা উহু করেন জীবিতকালে তাঁকে মারার ব্যাপারে ছিল সরব। তারা চায় আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে দিতে। আজকাল আরও বিপদ। তাঁর মত ও কথা অপছন্দ হলে উন্মুক্ত সামাজিক মাধ্যমে গালাগালি খিস্তি-খেউরের বন্যা বইয়ে দেয় এরা। একেকজন হাজার নামে গালি দিয়ে দেখায় কত শক্তি আছে তাদের। কিন্তু কথায় বলে বিধাতা যদি কাউকে বাঁচায় তো মারে কে? আমি প্রধানমন্ত্রীর অতিকথনের বিষয়ে সজাগ। তাঁর সবকিছু আমার ভাল লাগে এমনও না। কিন্তু এটা মানতে হবে তিনি না থাকলে আওয়ামী লীগ এ জায়গায় আসতে পারত না। কার বুকের পাটা এত বড় যে, যুদ্ধাপরাধীদের গায়ে হাত দেয়? তাদের লবিং আন্তর্জাতিক কানেকশনের নমুনা তো আমরা দেখেই চলেছি। স্বয়ং জন কেরি ফোন করে। তুরস্ক ভয় দেখায়। পাকিস্তান শিষ্টাচারের বাইরে গিয়ে হুমকি দেয়। এরপরও তিনি দমেননি। তিনি ছাড়া দ্বিতীয় একজন দেখান যে তা সহ্য করেও অবিচল থাকতে পারবে? একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলাই এ দেশের প্রথম বড় জঙ্গী হামলা। সে হামলায় আইভি রহমানসহ কত মানুষের জীবন গেল। রাজধানীর রাজপথে বিরোধী দলের নেত্রীকে উড়িয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রের বিচার করেছিল সেই সরকার? তার বদলে আমরা দেখলাম বিচার প্রহসন। জজ মিয়া নাটক। আর এরাই এখন সুবিচারের কথা বলে মানুষ হাসায়। যে সব বুদ্ধিজীবী আজকাল টক-শো আর লেখায় শেখ হাসিনার ছিদ্রান্বেষণে ব্যস্ত তারা কিন্তু এতবড় অমানবিক আক্রমণ নিয়ে কথা বলেননি বা এখনও বলেন না। এখনও সে প্রসঙ্গ উঠলে সাত পাঁচ বলে ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সবচেয়ে ভয়াবহ হলো কিছু মিডিয়ার ভূমিকা। জনপ্রিয় বা বহুল প্রচারিত একটি দৈনিক শেখ হাসিনার দ্বিতীয়বার শাসনভার গ্রহণের পর পর এ নিয়ে ক্রোড়পত্র বের করে ফেলে। সে দিনই আমি জানতাম এর নাম মায়াকান্না। নিজেদের ভূমিকা অস্পষ্ট বলেই পরের বার দায়সারা গোছের তারপর এ ঘটনাকে কোন রকমে জায়গা দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব সেরেছে তারা। এটাই এখনকার বড় ট্র্যাজেডি। যারা আসলে তাঁকে ভালবাসে না বা চায় না তিনি রাষ্ট্র চালনার কা-ারী থাকুন তারাই আবেগের আতিশয্যে ভাসে। এ লেখা যখন লিখছি তখন সুবিদ আলী ভূঁইয়াকে নিয়ে তোলপাড় সামাজিক মিডিয়ায়। এই ভদ্রলোক আওয়ামী লীগের এমপি। তার পরও বলছেন, জিয়াউর রহমানই এ দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। নিজের বইতেও নাকি এমনটাই লিখেছেন তিনি। অবশ্য পরের দিন তিনি বিষয়টি সত্য নয় বলে প্রেস কনফারেন্স করে সাংবাদিকদের জানিয়ে দিয়েছেন। অবাক হওয়ার কি আছে? এই তো তিনি যিনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ অবধি বেগম জিয়ার পিএসও ছিলেন। আরও আছে। জিয়া নাকি তাঁকে বোকা ভেবেই বড় পদে আসীন করেননি। মানে পুরো বিষয়টাই বিএনপি বা ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে সম্পর্কিত। এমন রাজনৈতিক ঘরানার একজন মানুষকে আওয়ামী লীগের এমপি করার খুব দরকার ছিল কি? কত ত্যাগী আদর্শবান মানুষ কল্কে পায় না। যারা সারা জীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করল, মার খেল তাদের বাদ দিয়ে এসব মানুষকে পদ-পদবি দিলে শেখ হাসিনা কিভাবে নিরাপদে থাকবেন? বলছিলাম একুশে আগস্টের কথা। এই ঘটনাটি দেশের বাইরেও যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল। আওয়ামী লীগের ভেতরে শুধু না নানা পেশা ও মতাদর্শের মানুষের মনে একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল, একি তবে আরেকটি পনেরো আগস্টের প্রতিচ্ছবি? আসলেই কিন্তু তার মতো এই ঘটনা। সেদিন যেসব নেতা প্রাণে বেঁচেছেন যারা এখনও আঘাত বয়ে বেড়াচ্ছেন। প্রয়াত হানিফ সাহেবের মতো যেসব নেতা শেখ হাসিনাকে আগলে ধরে পরে বাঁচতে পারেননি তাদের সংখ্যা ও গুণগত মান হিসাবে ধরলে দেখবেন বিএনপি চেয়েছিল আওয়ামী লীগ আরও একবার নেতাশূন্য একটি দল হয়ে উঠুক। কিন্তু ’৭৫ আর এই সময় এক নয়। আজ মানুষ অনেক সচেতন। আজ মিডিয়ার কল্যাণে বহু অজানা ষড়যন্ত্রও নিমিষে বেরিয়ে পড়ে। আমি বলি সময়ের বরমাল্য। সেদিন যদি তিনি না বাঁচতেন বাংলাদেশের পাপ ও কলঙ্কমুক্তি হতো না। যারা ধরে নিয়েছিল এ দেশে চলবে ককটেল পলিটিক্স, এ দেশে মুক্তিযুদ্ধের অবিকল কিছু আর চলবে না তাদের ধরে বিচার করত কে? তিনি এ কারণে বেঁচে গিয়েছিলেন। তিনি না থাকলে জাতির জনক ও পনেরো আগস্টের সব হত্যাকা-ের খুনীদের ফাঁসি দিত কে? কে করত দেশ ও জাতিকে দায়ভার মুক্ত? এ কারণেই মধ্যপন্থী নব্য রাজাকার আর আপোসকামীদের দুই চোখের বিষ তিনি। তাঁর অপরাধ তিনি মানিবকতার কারণে জঙ্গীদের বিরুদ্ধে কঠোর। তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের নির্মূল চান, তাঁর ধমনীতে আছে বঙ্গবন্ধুর নির্মল রক্তস্র্রোত। বাংলাদেশ হওয়ার সূতিকাগার ৩২ নম্বরের অনেক অজানা তথ্য আর ইতিহাস সমৃদ্ধ শেখ হাসিনাকে তাই সুবিধাবাদীদের মনে লাগে না। তারা সব জেনেশুনেও তাঁর বিরোধিতা করতে পছন্দ করেন। বেশ কয়েকবার বেঁচে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী যেন ন হন্যতে হন্যমান শরীর চ :। তাঁকে হত্যা করতে আসলেও খুনীর ভুল হয়ে যায়। একটুর জন্য মিস হয় তার টার্গেট। আজও তাই আমাদের রাজনীতির ঘন অন্ধকারে শেখ হাসিনাই আলোকবর্তিকা। একুশে আগস্টের ঘটনার পুনর্বিবেচনা আর কঠিনতম বিচার চাই আমরা। দেশে অরাজকতা, জঙ্গীবাদ আর হত্যাকা-ের সূচনা পর্ব এই দিনটিকে কালো দিন মেনে নিয়ে আমরা চাই সুবিচার। অপরাধী যত বড় হোক না কেন তাকে বা তাদের কাঠগড়ায় আনতে হবে। মানুষের মনে এই ভরসা দিতে হবে এমন হামলার বিচার পানিতে ভেসে যেতে পারে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এখনও অনেক কাজের জন্য প্রয়োজন। আমরা তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করি। সঙ্গে বলি : শেখ হাসিনাকে যারা আক্রমণ করতে চায় বা তাঁকে ঘিরে আরেকটি একুশে আগস্টের মহড়া চায় তারা জেনে রাখুক শকুনের শাপে কখনও গরু মরে না। একুশে আগস্টের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় এনে বিচার করার ভেতর এ দেশে জঙ্গীবাদ দমনেরও যোগসূত্র রয়েছে। এটাই যেন মনে রাখি আমরা।
×