ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘মার্কিন বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে ইরানকে ৪০ কোটি ডলার শোধ করা হয়েছে’

স্বীকার করল ওবামা প্রশাসন

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২০ আগস্ট ২০১৬

স্বীকার করল ওবামা প্রশাসন

ওবামা প্রশাসন বৃহস্পতিবার বলেছে যে, কয়েক মাস আগে ইরানকে ৪০ কোটি ডলারের নগদ অর্থ পরিশোধ একদল আমেরিকান বন্দীর মুক্তিদানের শর্তসাপেক্ষ ছিল। যুক্তরাষ্ট্র দুটি ঘটনার মধ্যে সম্পর্ক থাকার কথা এই প্রথম বারের মতো স্বীকার করল। সমালোচকরা এগুলোকে এক জিম্মির মুক্তিপণ বন্দোবস্ত বলে চিত্রিত করেন। পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জন কারবি প্রশাসনের এ বক্তব্য আবারও উল্লেখ করেন, ইরানী অর্থ ফেরত দেয়ার আলোচনা ইরানে আটক চার মার্কিন নাগরিকের মুক্তি সম্পর্কিত আলোচনা থেকে পৃথকভাবে পরিচালনা করা হয়। এ অর্থ ১৯৭০-এর দশকে মার্কিন সমর্থিত শাহের সঙ্গে স্বাক্ষরিত এক সামরিক সাজসরঞ্জাম চুক্তির বিনিময়ে ইরানের পাওনা ছিল। তিনি বলেন, ইরান আমেরিকানদের সেদেশ ত্যাগ করতে না দেয়া পর্যন্ত চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র অর্থ প্রদান আটকে রেখেছিল। কারবি বলেন, ইরান বন্দীদের মুক্তি দেয়ার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে যেতে পারে বলে আমরা চিন্তিত ছিলাম। তিনি এ প্রসঙ্গে মুক্তিদানের ক্ষেত্রে বিলম্ব ঘটা এবং ৩৬ বছর আগের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা দুটি দেশের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাসের কথা উল্লেখ করেন। তিনি ব্যাখ্যা দেন যে, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই আমেরিকান নাগরিকরা মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সর্বোচ্চ মাত্রায় চাপ প্রয়োগের উপায় হাতে রাখতে চেয়েছিল। সেটিই ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার। উভয় ঘটনাই ঘটে জানুয়ারির ১৭ তারিখ। এতে কোন কিছু বিনিময়ে কোন কিছু দেয়া হয়েছে বলে রিপাবলিক আইনপ্রণেতারা সন্দেহ ব্যক্ত করেন এবং প্রেসিডেন্ট পদে দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এ নিয়ে অভিযোগ করেন। তাদের মতে, এ বিনিময়ের ফলে মুক্তিপণ দানের প্রতি আমেরিকার দীর্ঘদিনের বিরোধিতা ক্ষুণœœ হয়েছে। কারবির ঐ বক্তব্য দেয়ার এক দিন আগে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ১৭ জানুয়ারি বিমানগুলোর ওঠানামার নতুন বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে। পত্রিকাটি জানায়, মুক্ত আমেরিকানদের তিনজনকে নিয়ে সুইস বিমান বাহিনীর একটি বিমান তেহরান না ছাড়া পর্যন্ত মার্কিন কর্মকর্তারা ইরানকে জেনেভার একটি বিমান বন্দর থেকে নগদ অর্থ দেশে নিতে দেননি। চতুর্থ আমেরিকান এক বাণিজ্যিক বিমানে ইরান ত্যাগ করেন। চলতি মাসের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্র কাঠের বাক্সে করে নগদ অর্থ ইরানে পাঠিয়েছিল বলে খবর ফাঁস হলে প্রশাসন অর্থ পরিশোধ ও বন্দীদের মধ্যে কোন সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করে। কেরি সেই সময়ে টুইট করেন, বন্দীমুক্তি ও ইরানের কাছে অর্থ পরিশোধের মধ্যে কোন সম্পর্ক থাকার খবর পুরোপুরি মিথ্যা। শাহের আমলে আমেরিকা ইরান থেকে সামরিক যন্ত্রপাতি কিনতে ইরান সরকারের ব্যবহৃত একটি এ্যাকাউন্ট থেকে ঐ অর্থ আসে। ১৯৭৯ সালে শাহের সরকার উৎখাত হলে যন্ত্রপাতি কখনও সরবরাহ করা হয়নি এবং বিপ্লবীরা তেহরানের মার্কিন দূতাবাসে আমেরিকানদের জিম্মি করে। সেই সময় থেকে দু’পক্ষের মধ্যে ঐ এ্যাকাউন্ট ও অন্য অসংখ্য আর্থিক দাবিদাওয়া নিয়ে বিরোধ চলে এসেছে। ঘটনার পরপরই কোন কোন ইরানী কর্মকর্তা ঐ অর্থ পরিশোধকে চার আমেরিকানের মুক্তির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বলে দেখান। ওয়াশিংটন পোস্টের সংবাদদাতা জ্যাসন রেজাইয়ানও তাই করেন। তিনিও বন্দীদের মধ্যে ছিলেন। আরেক বন্দী প্যাস্টর সাঈদ আমেদিনিও দুটি ঘটনা সম্পর্কযুক্ত বলে দেখান। তিনি বলেন, যখন বন্দীরা ইরান ত্যাগের জন্য একটি বিমানবন্দরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছিলেন তখন এক সিনিয়র ইরানী গোয়েন্দা কর্মকর্তা তাদের যাত্রা অর্থ নিয়ে বিমান আসার ওপর নির্ভর করছে বলে তাদের জানান। মার্কিন কর্মকর্তারা বিলম্বের কারণ হিসেবে রেজাইয়ানের স্ত্রী ওমাকে খুঁজে বের করা এবং তারা যাতে তার সঙ্গে ইরান ত্যাগ করতে পারেন তা নিশ্চিত করার সমস্যার কথা উল্লেখ করেন। রিপাবলিকান সিনেটর বেন স্যাস বৃহস্পতিবার বলেন, যদি এটি হাঁসের মতো প্যাঁক-প্যাঁক করে, তবে এটি হাঁস। যদি অর্থ পরিশোধ জিম্মি মুক্তির শর্তসাপেক্ষ হয়, তবে সেটি মুক্তিপণ। এ সত্য গুরুত্বপূর্ণ এবং সেজন্য আমেরিকান জনগণ প্রেসিডেন্টের কাছে ব্যাখ্যা চাইতে পারেন। Ñটেলিগ্রাফ অনলাইন
×