ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুই টাকার নোট পাচারের রহস্য উন্মোচনে মাঠে গোয়েন্দা সংস্থা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২০ আগস্ট ২০১৬

দুই টাকার নোট পাচারের রহস্য উন্মোচনে মাঠে গোয়েন্দা  সংস্থা

আজাদ সুলায়মান ॥ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে চীনে দুই টাকার নোট পাচারের ঘটনা তদন্তে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তৎপর হয়ে উঠেছে। চোরাচালানের তালিকায় দুই টাকার নোট যোগ হবার কারণ সম্পর্কে এখনও কিছুই বলতে পারছে না শুল্ক গোায়েন্দা। আকৃতিতে ছোট এই নোটগুলো কি ধরনের কাজে ব্যবহার হতে পারে তার সম্ভাব্য কারণ খুঁজে বের করতে শুক্রবার বেশ কজন পেশাদার চোরাচালানির সঙ্গে কথাও বলেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। তবে প্রাথমিকভাবে শুল্ক গোয়েন্দার ধারণা-দুই টাকার নোটের ভেতরে যে সূক্ষ্ম সুতা থাকে- সেটা নকল টাকায় ব্যবহার করা হতে পারে। দেশে এ পর্যন্ত যত জাল টাকা ধরা পড়েছে তা শুধু এই সুতার কারণেই। নকলকারীরা টাকার সবটুকু নকল করতে পারলেও সুতা নকল করতে পারছে না। এটাই হতে পারে দু’ টাকার নোট পাচারের প্রধান কারণ। এ সম্পর্কে শুল্ক গোয়েন্দার একজন কর্মকর্তা জানান- ঢাকায় অতি সহজে জাল টাকা তৈরিতে যারা দক্ষ- এটা তাদেরই কাজ হতে পারে। তারাই চীন কিংবা হংকং থেকে ওই সুতা ব্যবহার করে নকল পাঁচ শ’ ও এক হাজার টাকার নোট তৈরি করে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে আনার জন্যও এটি করে থাকতে পারে। বইয়ের পার্সেলের আড়ালে যে ডাক্তারের নাম লেখা রয়েছে সেটাও ভুয়া হতে পারে। এখানে বিশেষ কোড ব্যবহার করে প্রকৃত পাচারকারীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখা হয়েছে। ওই ঠিকানায় গিয়ে এ নামের কোন ডাক্তারকে পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত হয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা। বৃহস্পতিবার রাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুই টাকার নোট সংবলিত ২৮টি প্যাকেট জব্দ করার পর শুক্রবার তদন্তে নামে র‌্যাবসহ আরও একটি গোয়েন্দা সংস্থা। বই আকৃতি বানিয়ে ওই দুই টাকা নোটের বান্ডিল সংবলিত ২৮টি প্যাকেট করে পাচার করা হচ্ছিল। অভিনব পদ্ধতিতে দুই টাকার মুদ্রা পাচারের কাহিনী নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ সম্পর্কে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান জানান, শাহজালালে ফরেন পোস্ট অফিসের মাধ্যমে মুদ্রা পাচারের সংবাদে দু’টি পার্সেল নজরদারি করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে কার্টনে ভরে মুদ্রা পাচারের সময় তাতে সন্দেহ হলে দেয়া হয় স্ক্যানিং মেশিনে। দেখা মেলে সাদা বই আকৃতির কিছু। কার্টনের গায়ে ‘হেলথ কেয়ার সার্ভিস’ লেখা আর প্রেরক ডাঃ রেদওয়ান দেখে এক নিমেষে বিশ্বাস করা যায় চিকিৎসার কোন বই। কার্টনে ‘হেলথ কেয়ার সার্ভিস’ লেখা। স্ক্যানিং এ দেখা যায় সাদা বই। হেলথ কেয়ার হলে মেডিক্যাল বই হবে। কিন্তু খোলার পর বের হলো চকচকে ২ টাকার নোট! কার্টনে লেখা ঠিকানা অনুযায়ী রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ডাঃ রেদওয়ান আল করিম ভূঁইয়া (১৪/৩, বি, উত্তর-পূর্ব যাত্রাবাড়ী, দ্বিতীয় তলা, ঢাকা-১২০৪) হংকং ও বেজিংয়ে এটি পাঠাচ্ছিলেন। প্রথম কার্টনের ওপরে হংকংয়ের বাও রুই নামের একজন ও দ্বিতীয় কার্টনে শেইফেঙ জিন, বেজিং, চীন নামে আরেকজন প্রাপকের ঠিকানা লেখা রয়েছে। এ প্রশ্নের জবাবে মইনুল খান বলেন, কার্টন খোলার পর বেরিয়ে আসে বই আকৃতির প্যাকেট। স্ক্যানিং এ দুই টাকার নোটে কোন চিহ্ন ধরা পড়েনি। পরে ওই কার্টন খোলার পর ২টাকার নোটের সারি সারি বান্ডিল। স্ক্যানিং থেকে রক্ষা পেতে ওপরে ও নিচে দেয়া হয়েছিল কার্বন কাগজ। তিনি আরও বলেন, বই আকৃতির প্রতি প্যাকেটে ২ টাকার ১ হাজার নোটে ২ হাজার টাকা হলেও প্যাকেটের ওজন অনুযায়ী লাগানো হয় ৭৫৮ টাকার ডাক টিকেট। ৭৫৮ টাকা করে ২৪ প্যাকেটে ডাক টিকেট লাগানো হয়েছে। ২ হাজার নোট পাঠাতে ৭৫৮ টাকা খরচ কেন করবে, এর পেছনে নিশ্চয় কোন অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। তবে পাচারের চেষ্টা ব্যর্থ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা। এতে ছিল হংকংয়ের ঠিকানায় ২৪টি প্যাকেটে ২৪ হাজার ও চীনের ঠিকানায় ৪টি প্যাকেটে ৪ হাজার দুই টাকার নোট। দুই কার্টনের ২৮টি প্যাকেটে মোট ৫৬ হাজার টাকা। প্রথমবারের মতো অভিনব কৌশলে কি কারণে, কেন দু’টাকার নোট পাচারের চেষ্টা করা হয়েছে প্রেরককে খুঁজে বের করে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য মাঠে নেমেছে বিশেষ টিম। নতুন এ নোটের মধ্যে যে সিকিউরিটি সুতা রয়েছে তা বের করে ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট তৈরি করাই ওদের টার্গেট ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
×