ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সুপার স্ট্রাকচার স্থাপনে প্রস্তুতি, পাইলে কংক্রিটিং চলছে

পদ্মা সেতু প্রথম দৃশ্যমান হচ্ছে ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারে

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২০ আগস্ট ২০১৬

পদ্মা সেতু প্রথম দৃশ্যমান হচ্ছে ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারে

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতু প্রথম দৃশ্যমান হচ্ছে ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারে। জাজিরা প্রান্তের এই তিনটি পিলারে দু’স্প্যান সুপার স্ট্রাকচার ফিটিংয়ের এখন চলছে প্রস্তুতি। অনুযায়ী এখন এখন বিশেষ ব্যস্ততা চলছে। এই তিন পিলারসহ ২৭টি পিলারে তিনটি করে বটম পিলার স্থাপন হয়ে গেছে। এর মধ্যে জাজিরা প্রান্তের সাতটি পিলারে ২১টি পাইল স্থাপন হয়েছে। তিটি পিলারে ছয়টি করে পাইল স্থাপন হবে। তবে বটম পাইলগুলো এখন কংক্রিটিংসহ রিভিও ডিজাইন অনুযায়ী প্রস্তুত করা হচ্ছে। এরপরই বাকি তিনটি করে পাইল এবং টপ পাইল স্থাপনের প্রক্রিয়াও অনেক দূর এগিয়েছে। এদিকে চীনে তৈরি করা পিলারের উপরের অংশ অর্থাৎ সুপার স্ট্রাকচারের প্রথম চালানের একটি অংশ মাওয়ায় পৌঁছে গেছে। বাকি অংশ নিয়ে আরও দু’টি বার্জ এখন কাছাকাছি রয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে বার্জ দু’টি চাঁদপুরের কাছাকাছি নোঙ্গর করা হয়েছিল। এদিকে পদ্মার উপরের পাইল স্থাপানের পাশাপাশি এখন তীরের ভায়াডাক্টের (সংযোগ সেতু) মূল পাইল স্থাপন চলছে। গত ৮ আগস্ট এই মূল পাইল স্থাপানের কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যেই জাজিরা প্রান্তের ২২ নম্বর পিলারের একটি পাইল স্থাপান হয়েছে। এখন একযোগে আরও তিনটি পাইল স্থাপনে কাজ চলছে। এরমধ্যে ভায়াডাক্টের ২২ নম্বর পিলারে দু’টি এবং ২০ নম্বর পিলারে একটি পাইল স্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়া পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার কাজ এখন চূড়ান্ত প্রায়। আগামী মাস সেপ্টেম্বরেই এই অংশ কর্তৃপক্ষের হস্তান্তরের কথা রয়েছে। দু’পারের এ্যাপ্রোচ রোডের কাজেও বেশ অগ্রগতি। এই প্যাকেজের কাজ ৯৩ শতাংশেরও বেশি এগিয়েছে। এছাড়া ভরা বর্ষায়ও চলছে নদী শাসনের কাজ। জাজিরা প্রান্তে চলছে এখন নদী শাসন। অক্টোবরের দিকে নদী শাসনের কাজের আরেক ধাপ শুরু হবে মাওয়া প্রান্তে। পদ্মা সেতুর সুপার স্ট্রাকচারের পাঁচটি বার্জেও মধ্যে তৃতীয়টি মঙ্গলবার মাওয়ায় নোঙ্গর করে। প্রথম ও দ্বিতীয়টির মতো এটির মালামালও খালাস করে মাওয়ার পাশের কুভাররোভ কন্সট্রাকশন বইয়ার্ডের বিশেষ ওয়ার্কশপে রাখা হয়েছে। সেখানেই এখন ফিটিংয়ের প্রস্তুতি চলছে। এর আগে চায়না থেকে সমুদ্র পথে মাদারভ্যাসেল করে আসে কুতুবদিয়া চ্যানেলে। সেখান থেকে পাঁচটি বার্জ করে নদী পথে মাওয়ায় আনা হচ্ছে। এই নিয়ে এ পর্যন্ত তিনটি বার্জ পৌঁছেছে। বাকি দু’টি বার্জ মাওয়ার পথে রয়েছে। এছাড়া চীন থেকে সম্প্রতি রওনা হওয়া সুপার স্ট্রাকচারের দ্বিতীয় চালানটিও এখন কুতুবদিয়া চ্যানেলের পথে রয়েছে। প্রথম চালানের প্রথম বার্জটি মাওয়ায় আসে গত ৮ আগস্ট। প্রথম চালানে রয়েছে ৩ হাজার ৮৯২ টন ওজনের ১৫২টি স্ট্রিলের খ-ে বিভক্ত। এগুলো জেডির ক্রেনে বার্জ থেকে নামিয়ে ট্রেইলরে করে ওয়ার্কশপে নেয়া হয়। এই অবকাঠামোর মধ্যে জয়েন্ট, সেকশন, ডয়াগনাল মেম্বার, গার্ডার, টপকর্ড ও বটমকর্ড উল্লেখযোগ্য। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের জানান, ডিসেম্বরের অন্তত দু’টি স্প্যান পরিমাণ সেতু দৃশ্যমানে কাজ চলছে। পদ্মা সেতুর একটি পিলার থেকে আরেকটি পিলারের দূরত্ব হচ্ছে ১৫০ মিটার। দুই পিলারের মাঝখানের ফাঁকা জায়গাকে ¯প্যান বলা হয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুতে এ রকম ৪১টি ¯প্যান হবে। এই চালানে ১৫০ মিটার দীর্ঘ এক স্প্যান পরিমান সুপার স্ট্রাকচার ছাড়াও আরেকটি স্প্যানেরও কিছু অংশ রয়েছে। প্রতিটি ¯প্যানের গড় ওজন দুই হাজার ৯শ’ টন। সেতুর পিলার হবে ৪২টি। তার মধ্যে ৪০টি পিলারের ছয়টি করে পাইল থাকবে ২৪০টি। দুই প্রান্তে ১২টি করে ২৪টি পাইল থাকবে। বড় আকারের ৪২টি পিলারের ওপর ভর করে দাঁড়াবে সেতু। চীনের কারখানায় ২০ থেকে ৮০ মিলিমিটার পুরু স্টিলপ্লেট কেটে ওয়েল্ডিং করে প্রতিটি মেম্বার তৈরি করা হচ্ছে। এ ধরনের ১২৯টি মেম্বার দিয়ে তৈরি হবে একেকটি ¯প্যান। প্রতিটি ¯প্যানের ওজন হবে দুই হাজার ২শ’ টন। তার ওপর কংক্রিটের ডেক হবে ৭শ’ টন ওজনের। সব মিলে প্রতিটি ¯প্যানের ওজন হবে দুই হাজার ৯শ’ টন। পাইলিংয়ে এগিয়ে যাওয়ায় চীন থেকে ¯প্যানের অংশগুলোও আসতে শুরু করেছে। চায়না রেলওয়ে সানহাইগুয়ান ব্রিজ গ্রুপ কো¤পানি লিমিটেডের (সিআরএসবিজি) অধীনে চীনের সিনহোয়াংদাওয়ের কারখানায় এগুলো তৈরি হচ্ছে। কারখানার অদূরে সিনহোয়ান বন্দর থেকে জাহাজে করে মংলা বন্দর হয়ে পরে বার্জে করে মাওয়ায় আসছে। সিনহোয়াংদাও বন্দরে আরও একটি ¯প্যানের কাঠামোর বিভিন্ন অংশ মাদারভ্যাসেলে করে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে সমুদ্র পথে রওনা হয়েছে। মূল সেতু প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রকৌশলীরা জানান, চীনের রাজধানী বেজিং থেকে সাড়ে তিন শ’ কিলোমিটার দূরের ওই কারখানায় সংশ্লিষ্ট কো¤পানির প্রোগ্রাম ম্যানেজার লসি লি প্রতিদিনই সেখানকার কাজের অগ্রগতি জানাচ্ছেন বাংলাদেশ সেতু বিভাগের প্রকৌশলীদের। এদিকে সেতুর সুপার স্ট্রাকচার আসার পর বিশেষ উৎসব আমেজ বিরাজ করছে। অনেক কৌতূহলী মানুষ আসছেন এগুলো দেখতে। সেনাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে না পারলেও দূর থেকে প্রত্যক্ষ করছে এসব দৃশ্য। নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, সুপার স্ট্রাকচার ফিটিংয়ের চীনা বিশেষজ্ঞরা প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই কাজের সাথে বাংলাদেশীরাও রয়েছে। বিশাল এই কাজে বাঙালীদের অভিজ্ঞতার বাড়বে। যা আলোকবর্তিকা হিসেবে ছড়িয়ে পড়বে।
×