ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ বিলবোর্ড, ব্যানার ফেস্টুন ও তোরণ না সরালে উচ্ছেদ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২০ আগস্ট ২০১৬

অবৈধ বিলবোর্ড, ব্যানার ফেস্টুন ও তোরণ না সরালে উচ্ছেদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদনহীন বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণ নিজ দায়িত্বে দ্রুত সরিয়ে না নিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘ব্যাপক অভিযান’ চালিয়ে তা উচ্ছেদ করার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক। একই সঙ্গে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে হানা দেয়া হবে ও তাদের বিরুদ্ধে জেল জরিমানা করা হবে বলে জানান মেয়র। শুক্রবার রাজধানীর গুলশান ২ নং চত্বর এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তাবিত নতুন কার্যালয়ে সিটি কর্পোরেশন এলাকার অবৈধ বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, দেয়াল লিখন ও তোরণ অপসারণ করা সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশ মানতে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়ে ডিএনসিসি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র এসব কথা বলেন। মেয়র বলেন, আপনারা নিজে থেকে এসব সরিয়ে নিন। নইলে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা এগুলো উচ্ছেদ করবে। এগুলো সরাতে গিয়ে আমাদেরকে কঠোর হতে বাধ্য করবেন না। আমরা সবার সহযোগিতা চাই। মূলত পরিচ্ছন্ন ঢাকা নগরী গড়তে নগরবাসীর সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা আপনার বাড়িতে গিয়ে আপনাকে আটকে রাখতে পারি না। কেউ বিলবোর্ড বানাল আমাদের কাছে রিপোর্ট এলো, ম্যাজিস্ট্রেট নিলাম, পুলিশ নিলাম; উচ্ছেদ করলাম এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিলাম। কিন্তু এই পুলিশিং না করার চেয়ে সবাই যদি আমাদের সাহায্য করেন তাহলে মেয়রকে এত মস্তানি করতে হয় না। তবে আমরা সবাইকে বুঝিয়ে যাতে কাজ করা যায়, সে চেষ্টাই করছি। আনিসুল হক বলেন, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ব্যানার, বিলবোর্ড, ফেস্টুন টানাতে কর্পোরেশনের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচী সামনে রেখে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন টানানোর ক্ষেত্রে তা মানছেন না। কর্মসূচী শেষ হলেও এসব ব্যানার না সরানোয় সিটি কর্পোরেশন ব্যবস্থা নিয়েছে। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলের এরকম ২০০ বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন অপসারণ করা হয়েছে। গত এক বছরে ছোটবড় ২০ হাজার বিলবোর্ড ও ৭০ হাজার ব্যানার অপসারণ করা হয়েছে। এ নিয়ে ১০০ টির ওপর মামলা দায়ের করা হয়েছে। অনেক দোকানও বন্ধ করা হয়েছে। বাকিগুলো অপসারণে ‘ব্যাপক’ অভিযান চালানো হবে। এছাড়া দেয়াল লিখনও নিজ দায়িত্বে বন্ধ করতে হবে। যারা লিখেছেন তারাই তা মুছে ফেলবেন। মেয়র বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন দোকানপাট ও প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন হিসেবে লাগানো সাইনবোর্ডের কোন অনুমোদন নেই। সে ব্যাপারেও দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করব। এগুলো না সরালে জেল-জরিমানা করা হবে। উল্লেখ্য,গত ১৪ অগাস্ট সিটি কর্পোরেশন এলাকার অবৈধ বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, দেয়াল লিখন ও তোরণ অপসারণ করার নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করে ২২ আগস্ট এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতেও দুই সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। ডিএনসিসির মেয়র বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পরই অবৈধ বিলবোর্ড অপসারণের কাজ শুরু করেছি। উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর সিটি কর্পোরেশনের অবস্থান আরও কঠোর হয়েছে। এ সময় তার গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প তুলে ধরে বলেন, ‘নগর এ্যাপের’ সাহায্যে সহজেই নাগরিক ভোগান্তি নিয়ে অভিযোগ করা যাচ্ছে। সেগুলোর সমাধানও দেয়া হচ্ছে। ডিএনসিসির নাগরিক সেবাসম্পর্কিত হটলাইন চালু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা হটলাইনের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ‘নগর’ এ্যাপ চালুর মধ্য দিয়ে আমরা জনসেবাকে আক্ষরিক অর্থেই জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাবার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এছাড়া একটি মনোরম, পরিচ্ছন্ন, সবুজ, মানবিক, স্মার্ট ও নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে ঢাকা মহানগরীকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে হাইকোর্টের এই নির্দেশনা প্রদানের অনেক আগে থেকেই আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নগরীর প্রায় ২০ হাজার বিভিন্ন প্রকারের বিলবোর্ড অপসারণ করা হয়েছে। তবে সিটি কর্পোরেশনের একার উদ্যোগ এক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়, নগরবাসীর সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নগরীতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পয়েন্টে বিলবোর্ড স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সেগুলো অত্যাধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির হলে ভাল হবে। এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রণয়নের জন্যও কাজ করছি। তিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডকে অপরের বিজ্ঞাপনের কাজে ব্যবহার না করে কেবল নিজ প্রতিষ্ঠানের নাম ও বিবরণ প্রচারের কাজে ব্যবহারের জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। সম্প্রতি বনানী, গুলশান, বারিধারা ও নিকেতনের মধ্যে চালু হওয়া সার্কুলার বাস সার্ভিস ‘ঢাকা চাকা’র যাত্রী ভাড়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, সিটি কর্পোরেশন এখানে কোন ব্যবসা করছে না। সব বাসই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন। সিটি কর্পোরেশন জনস্বার্থে প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা নিয়ে এ বাসসার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এটি এখনও একেবারেই প্রারম্ভিক পর্যায়ে রয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের সুবিধার্থে সার্ভিসটিকে আরও সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করা সম্ভব হবে। সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীগণের পাশাপাশি ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মেসবাহুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন বিপন কুমার সাহা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম সালেহ ভূঁইয়া, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ মফিজুর রহমান, মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহনাজ পারভিনসহ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উর্ধতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলরবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
×