ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চীনা প্রেসিডেন্টের সফরে আর্থিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়বে

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২০ আগস্ট ২০১৬

চীনা প্রেসিডেন্টের সফরে আর্থিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়বে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আগামী ১০ অক্টোবর তিনদিনের সফরে ঢাকা আসছেন। চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে ঢাকা-বেজিং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে আরও গতি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও বাড়বে। এদিকে চীনা প্রেসিডেন্টের সফরের আগেই দুই দেশের মধ্যে যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠক হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী ১০-১২ অক্টোবর তিনদিনের সফরে চীনা প্রেসিডেন্ট ঢাকায় আসছেন। চীনের প্রেসিডেন্টের সফরকালে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অবকাঠামো, সামরিক সহযোগিতার বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। এসব বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে প্রায় হাফ ডজন চুক্তি করার জন্য প্রস্তুতি চলছে। চীনা শি জিনপিং প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফরকালে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন। বাংলাদেশে সফরে এসে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করতে পারেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চীনের সহযোগিতায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে দুই দেশের সঙ্গে একটি চুক্তিও হয়েছে। এই টানেলের দৈর্ঘ্য হবে ৩ হাজার ৪০০ মিটার। চলতি বছর শুরু হয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে টানেল নির্মাণ কাজ শেষ হবে। টানেল নির্মাণে খরচ পড়বে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন দিবে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। বাকি খরচ বাংলাদেশ সরকার বহন করবে। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য হবে ৩ হাজার ৪০০ মিটার। এছাড়া টানেলের পশ্চিম পাশে ৭৪০ মিটার এবং পূর্ব পাশে ৪৫২ মিটার দৈর্ঘ্যর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। বাংলাদেশ সফরকালে চট্টগ্রামে চীনা প্রেসিডেন্টের টানেল উদ্বোধনের বিষয়ে প্রস্তুতি চলছে। এদিকে চীনের উদ্যোগে বাংলাদেশে একটি বিনিয়োগ পার্ক গড়ে তোলার বিষয়ে আলোচনা চলছে। বিনিয়োগ পার্ক নির্মাণের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের সময় বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে। চীন ইতোমধ্যে বাংলাদেশে সাতটি বড় বড় সেতু নির্মাণ করে দিয়েছে। প্রেসিডেন্টের আসন্ন বাংলাদেশ সফরকালে আরও চারটি বৃহৎ গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ করে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হতে পারে। এছাড়া বঙ্গোপসাগরের সোনাদিয়ায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে চীন দীর্ঘদিন ধরেই আগ্রহ ব্যক্ত করে আসছে। এ ইস্যুতে বাংলাদেশ এখনও কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। অবশ্য চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তৃতীয় কোন দেশকে যুক্ত করা হলেও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে আগ্রহী দেশটি। সোনাদিয়ার পাশাপাশি পটুয়াখালীর পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণেও বাংলাদেশ সরকারের আগ্রহ রয়েছে। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের বিষয়েও চীন আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চীনের প্রেসিডেন্টের আসন্ন বাংলাদেশ সফরকালে গভীর সমুদ্রবন্দর একটি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হিসেবে থাকছে। চীনা প্রেসিডেন্টের সফরের প্রস্তুতি হিসেবে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ১৪তম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) সভা আগামী ২২ আগস্ট ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ২০১৪ সালের ৪ জুন চীনের কুনমিং শহরে ১৩তম জেইসি সভা হয়েছিল। এবারের বৈঠকে চীনের সহকারী বাণিজ্যমন্ত্রী গাও ইয়ান তার দেশের পক্ষে চীনা প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। আর বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন। সভায় চীনের কাছে কোটা ও শুল্কমুক্ত বাংলাদেশী পণ্য প্রবেশের দাবি জানাবে বাংলাদেশ। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি, বাংলাদেশ থেকে চীনে রফতানি, চীন থেকে বাংলাদেশে আমদানি, চীন থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ, চীনা অর্থায়নে প্রকল্পের অভ্যন্তরীণ দরপত্র প্রক্রিয়া এবং বায়ার্স ক্রেডিটসহ আরও বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। জেইসি সভায় চীনা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার জন্য ইআরডি সচিবের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাছাই করা হয়েছে। এ প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করবেন ইআরডি’র অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আসিফ উজ জামান, যুগ্ম সচিব মতিয়ার রহমান, উপসচিব মতিউর রহমান এবং সিনিয়র এ্যাসিসটেন্ট চীফ মাসুমা আকতার।
×