ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী সম্পৃক্ততা

যশোরে প্রভাষক, সাভারে অধ্যক্ষ গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২০ আগস্ট ২০১৬

যশোরে প্রভাষক, সাভারে অধ্যক্ষ গ্রেফতার

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যশোর ও সাভারে পৃথক অভিযান চালিয়ে দুই কলেজশিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। যশোরে আটক তালিকাভুক্ত জঙ্গী-সন্ত্রাসী এসএম সাদিকুর রহমান ওরফে পলাশ (২৯) নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীর সদস্য ও ঝিনাইদহ সরকারী নুরুননাহার মহিলা কলেজের অর্থনীতির প্রভাষক। তিনি যশোর সদরের আন্দোলপোতা গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আটকের পর শুক্রবার বিকেলে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। সিআইডি যশোর জোনের বিশেষ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এদিকে ঢাকার সাভারের জামায়াতের শীর্ষ নেতা, সাভার মডেল কলেজের অধ্যক্ষ তৌহিদ হোসেনকে (৫০) অবশেষে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। নাশকতার অভিযোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার এবং শুক্রবার দুপুরে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে প্রেরণ করে। তিনি যশোরের কোতোয়ালি থানার খোলাডাঙ্গা গ্রামের মৃত শামসুল হকের পুত্র। বর্তমানে তিনি সাভার পৌর এলাকার ডগরমোড়া মহল্লার ‘রোজ গার্ডেন’র তৃতীয় তলার পূর্ব পাশের ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার পাঠানো। সিআইডি যশোর জোনের বিশেষ পুলিশ সুপার শামসুল আলম জানান, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সিআইডি পুলিশ জঙ্গীবিরোধী অভিযান চালিয়ে যশোর উপশহরের সারথী মিল এলাকা থেকে পলাশকে আটক করে। এ সময় তার বাসা থেকে জিহাদী বই এবং কম্পিউটার ও পেনড্রাইভ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, পলাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় জঙ্গী কার্যক্রমে সক্রিয় ছিল। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ঢাকার কাঁটাবন এলাকায় নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীরের পোস্টার লাগানোর সময় পলাশ পুলিশের কাছে আটক হয়েছিল। সে সময় তার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা হয়। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। এ মামলার তথ্য গোপন করে ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি শিক্ষা ক্যাডার হিসেবে গত ১ জুন ঝিনাইদহ সরকারী নুরুননাহার মহিলা কলেজের অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। উল্লেখ্য, সরকারের তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা তখন পলাশের নামে ভাল রিপোর্ট দেয়ার পর তার চাকরি হয়। সাভার ॥ আটক তৌহিদ হোসেন জামায়াতের রোকন, কেন্দ্র্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য। তিনি দলটির ঢাকা জেলার শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের শিবিরের সাবেক সেক্রেটারি। ১৯৮৯ সালে কবীর হত্যা মামলার আসামি হিসেবে বিশ^বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। পরবর্তীতে তিনি শিবিরের ঢাকা জেলার সভাপতি ও সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ‘মুসলিম এইড’ নামে একটি মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক মৌলবাদী এনজিও প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তার বিরুদ্ধে এলাকায় ইতোপূর্বে সংঘটিত বিভিন্ন নাশকতার ঘটনার পরিকল্পনা, মদদদাতা ও অর্থের যোগানদাতা হিসেবে অভিযোগ রয়েছে। মডেল কলেজে তার অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগও নিয়ম পরিপন্থী বলে জানা গেছে। কারণ্র তিনি ‘পাস কোর্স’ ডিগ্রীধারী এবং ডিগ্রী ও মাস্টার্সের কোনটিতেই তার প্রথম শ্রেণী নেই। অধ্যক্ষ হওয়ার জন্য বিশ^বিদ্যালয়ের অনার্স ও মাস্টার্সসহ শিক্ষক হিসেবে ১২ বছরের অভিজ্ঞতার শর্ত থাকলেও এর কোনটিই তার ছিল না। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তৌহিদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২০০৯ সালের ৫ নবেম্বর তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য তালুকদার মোঃ তৌহিদ জং মুরাদ ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের নিকট লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তৌহিদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অন্যতম সহযোগী কলেজের অপর শিক্ষক বিল্লাল হোসেনকে পুলিশ ৮ আগস্ট গ্রেফতার করার পর তৌহিদ চলাফেরায় অনেক সর্তক হয়ে ওঠে। কলেজে এলেও তা ছিল অল্প সময়ের জন্য। অনেক চেষ্টার পর অবশেষে ঢাকা জেলা (উত্তর) ডিবি পুলিশের একটি টিম তাকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রেফতার করে। কলেজ থেকে বের হওয়ার পর পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। শুক্রবার দুপুরে তাকে সাভার মডেল থানার এসআই শরীফুল নাশকতার মামলার (নং- ১৩(৩)১৫ইং) আসামি হিসেবে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে প্রেরণ করেন। সাভার মডেল থানার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান জানান, নাশকতা করতে পারে- এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া বিএনপি-জামায়াতের সরকারবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সাভারে গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমা হামলাসহ বিভিন্ন ধরনের নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নওগাঁয় শিবির নেতা গ্রেফতার ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, নাশকতার পরিকল্পনা এবং গোপন ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে নওগাঁর ধামইরহাটে জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মারুফ আহমেদকে (৩০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মারুফ আহমেদ উপজেলার হযরতপুর গ্রামের মোজাফফর রহমানের ছেলে। পুলিশ জানায়, গত ২৩ জুন জামায়াত নেতা ওসমান আলীর বাড়ি থেকে জিহাদী বইসহ বিভিন্ন জঙ্গীবাদ-উগ্রবাদী কাগজপত্র জব্দ করা হয় এবং ওই দিন ধামইরহাট থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয় (মামলা নং- ২৮)। শুক্রবার ভোরে মারুফ আহমেদ নাশকতার জন্য গোপন মিটিং-মিছিলের পরিকল্পনার করছেÑ গোপন সূত্রে এমন খবর পেয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
×