ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে এবার শুরু হবে ভর্তিযুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২০ আগস্ট ২০১৬

উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে এবার শুরু হবে ভর্তিযুদ্ধ

বিভাষ বাড়ৈ ॥ ১২ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর এবার শুরু হবে উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশের পরীক্ষা। অনার্স ভর্তিযুদ্ধে রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে পাস করা লাখ লাখ পরীক্ষার্থীকে। তবে এতদিন আশার সঞ্চার হলেও শেষ পর্যন্ত এবারও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছে না ক্লাস্টার বা গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে সেশনজট কমানো ও কোচিং বাণিজ্যের দাপট সামলাতে ভর্তি পরীক্ষা কিছুটা এগিয়ে আনা সম্ভব হলেও তাদের বহু বছরের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিক্যাল কলেজের মতো একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে উদ্যোগে সাড়া নেই বড় কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের। এবার উচ্চ মাধ্যমিকের এ পরীক্ষায় ১২ লাখ ৩ হাজার ৬৪০ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাস করেছে প্রায় ৯ লাখ। ফল প্রকাশের পর এখন কয়েক লাখ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের দুশ্চিন্তাÑ এবারও কি অনার্স ভর্তির জন্য লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য দৌড়াতে হবে? নাকি মেডিক্যালের মতো একই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা হবে? শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষার্র্থী ও অভিভাবকদের গুচ্ছভিত্তিক পরীক্ষার দাবি এবারও পূরণ হচ্ছে না। বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের আপত্তির কারণে গেল বছরের মতো এবারও ভেস্তে গেছে এ প্রক্রিয়া। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সব সময়েই বলে আসছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি গুচ্ছভিত্তিক পরীক্ষা গ্রহণ না করে নিজস্ব নিয়মেই পরীক্ষা নেয় তাহলে করার কিছু নেই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উদ্যোগ নিলে আমরা সব ধরনের সমর্থন দেব। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। আমরা তাদের জোরও করতে পারি না। কোন সিদ্ধান্ত আমরা তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারি না। তবে সূত্রগুলো বলছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা গুচ্ছভিত্তিক পরীক্ষা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলছেন, বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের মতো করে পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট নিজেদের স্বতন্ত্র মান বজায় রাখতে চায়। একই মত দিয়েছে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও। দুই বছর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠকে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সে অনুসারে গত বছর তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হলেও বলা হয়েছিল পরবর্তী (এ বছর) বছর থেকে শুরু হতে পারে। কিন্তু এবার কোন বিশ্ববিদ্যালয় সে ওয়দা পূরণ করছে না। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিদ্যমান ভর্তি পদ্ধতিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলে অভিহিত করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার কারণে প্রতিবছর কোচিং সেন্টারগুলো ৩২ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য করে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ভর্তি পরীক্ষার কারণে শিক্ষার্থীদের বহু টাকা ব্যয় করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের সংসদে পাস করা আইন দিয়ে পরিচালিত হয় বিধায় তাদের আমরা কিছু চাপিয়ে দিতে পারি না। বহুদিন ধরে আলোচনা হলেও গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা না হওয়ায় হতাশ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। গত বছর ব্যর্থ হলেও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এবার একই ধরনের প্রতিষ্ঠানে মেডিক্যাল কলেজের মতো একসঙ্গে পরীক্ষা নেয়া হবে বলে আশা করেছিলেন তারা। জানা গেছে, এরই মধ্যে ক্লাস্টার পদ্ধতি গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করে সরকারকে অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। নতুন কোন পদ্ধতি গ্রহণে আপত্তি জানিয়েছে বাকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল। এ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে সরকারের ঘোষণা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতিবাচক অবস্থানের কারণে এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এনিয়ে কোন উদ্যোগই নেয়নি। একই ধরনের ভর্তি পরীক্ষা চালু করতে না পেরে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি ‘বড়’ বিশ্ববিদ্যালগুলোকে দায়ী করে সব সময়। তারা বলছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসন ভোগ করার চাপও দেয়া যায় না। এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী এনজয় বলছিলেন, কয়েক বছর ধরেই শুনছিলাম সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে। কিন্তু এবারও হচ্ছে না শুনে হতাশ আমরা। শিক্ষার্থীদের একটু সুবিধার হোক, এটা দেখার কি কেউই নেই। গুচ্ছভিত্তিক ভর্তির ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে জানা গেছে, ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশে পরিচালিত চার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটি কমিটি, পাঁচটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটি এবং চারটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটিসহ মোট তিনটি কমিটি গঠন করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল তিন বছর আগে। এছাড়া গঠন করা হয়েছিল একটি কেন্দ্রীয় কমিটি। পরিকল্পনা অনুসারে, ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এক সঙ্গে গ্রহণ করার পরিকল্পনা ছিল। এ ক্ষেত্রে অনুষদভিত্তিক চারটি থেকে পাঁচটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এক সঙ্গে নেয়ার চিন্তা ছিল। এছাড়া বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা একসঙ্গে নেয়ার পরিকল্পনা ছিল।
×