ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফিরে আসছে রূপালী ইলিশের হারানো ঐতিহ্য

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২০ আগস্ট ২০১৬

ফিরে আসছে রূপালী ইলিশের হারানো ঐতিহ্য

কাওসার রহমান ॥ ইলিশ মাছ সংরক্ষণের নানা পদক্ষেপের ফল দিতে শুরু করেছে। ইলিশের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০০২-০৩ সালে যেখানে ১ লাখ ৯১ হাজার টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছিল, বর্তমানে সেখানে বছরে ৩ লাখ ৮৫ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে বাঙালীর প্রিয় মাছ ইলিশের উৎপাদন ৫ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। ইলিশ উৎপাদনে দেশে নতুন এক মাইলফলক স্থাপিত হবে বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ল্ড ফিশের পর্যবেক্ষকরা। তবে ইলিশ নিয়ে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়লেও আগামী ১০ বছর পর এ ধারা অব্যাহত থাকবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের ইলিশ মিয়ানমারের দিকে চলে যেতে পারে। এ কারণেই ইলিশ মাছের বংশবৃদ্ধি, উৎপাদন ও সংরক্ষণে গ্রহণ করা হয়েছে ত্রিদেশীয় উদ্যোগ। বাংলাদেশ, ভারত এবং মিয়ানমার এ লক্ষ্যে পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতার অঙ্গীকার করেছে। ওয়ার্ল্ড ফিশের টিম লিডার আব্দুল ওহাব বলেন, ‘নানা পদক্ষেপের কারণে ইলিশের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বছরে প্রায় ৪ লাখ টন ইলিশ উৎপাদিত হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন নতুন মাইলফলক স্পর্শ করবে। আমরা আশা করছি, উৎপাদন ৫ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ইলিশকে সর্বজনীন করতে চাই। শুধু বৈশাখ মাস কেন, আমরা সব সময় ইলিশ মাছ খেতে চাই। দেশে ইলিশ কেউ খাবে, কেউ খাবে না তা হবে না। সবাই যেন সস্তায় ইলিশ খেতে পারেন, সে ব্যবস্থা করে ছাড়ব।’ পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও বঙ্গোপসাগরে ২০০৯-১০ অর্থবছরে ইলিশ ধরা পড়েছিল দুই লাখ টন। এর পর ইলিশ সংরক্ষণে নানা পদক্ষেপ নেয়ায় ২০০২ সালের পরে ইলিশ উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইলিশ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল ওহাব বলেন, ‘সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইলিশ বাইরে চড়া দামে পাচার হয়ে যাচ্ছে। আমাদের কাছে তথ্য আছে, মালয়েশিয়া ও আমাদের প্রতিবেশী দেশে ইলিশ পাচার হচ্ছে।’ ইলিশের অভয়াশ্রম গড়ে তুলে জাটকা মাছ রক্ষার মাধ্যমে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে মার্চ-এপ্রিল মাসে পদ্মা-মেঘনা নদীর প্রায় সাড়ে তিন শ’ কিলোমিটার এলাকায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। পাশাপাশি ইলিশ মাছ ধরে যেসব জেলে জীবিকা নির্বাহ করেন, তারা যেন সমস্যায় না পড়েন সে লক্ষ্যে বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, উপকূলীয় এলাকায় ২ লাখ ২৬ হাজার ৮৫২ জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। এর মোট পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার ২৭১ মেট্রিক টন। এছাড়া জেলে পরিবারকে স্বল্প সুদে ঋণ, সেলাই মেশিন ও আয়বর্ধক নানা কাজে উৎসাহী করা হয়েছে। বিশেষ করে ইলিশ ধরেন, এমন জেলেদের নানা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এসব উদ্যোগের কারণে ইলিশ উৎপাদনে সফল হয়েছে সরকার। এ প্রসঙ্গে মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সৈয়দ আরিফ আজাদ বলেন, ‘দেশের সকল মানুষের সামগ্রিক প্রচেষ্টায় ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। ইলিশ মাছ সংরক্ষণেও নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ইলিশ মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের জীবিকা নির্বাহে নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া জেলে পরিবারকে চাল দিচ্ছি। সেলাই মেশিন, গরু, ছাগল ও ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে জেলে পরিবারের মাঝে।’ তিনি বলেন, ‘এর পরও যদি কোন জেলে আইন অমান্য করেন, তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। কারণ, উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সকল যন্ত্র ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। যার ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে ইলিশ মাছের উৎপাদন।’ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, ইলিশ মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের কাছে রোল মডেল। অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে ইলিশ। কারণ, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ আসে ঝকঝকে রূপালি ইলিশ থেকে। দেশে উৎপাদিত মোট মৎস্যসম্পদের ১২ শতাংশ এককভাবে যোগান দেয় ইলিশ। এ ছাড়া এর সঙ্গে সরাসরি পাঁচ লাখ জেলে এবং আরও ২৫ লাখ মানুষ কোন না কোনভাবে ইলিশ শিকার থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক নানা রকম ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তারা পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করছে ইলিশ মাছের মাধ্যমে। বর্তমানে ইলিশের উৎপাদন বাড়ায় অর্থনৈতিক পরিধিও বাড়ছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ অনুসারে সারা বিশ্বের মোট ইলিশ সম্পদের ৯৫ শতাংশই পাওয়া যায় বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের জলসীমায়। আর বিশ্বের মধ্যে এককভাবে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ ইলিশই মেলে বাংলাদেশে। মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান সূত্রে আরও জানা যায়, ২০০১-২০০২ সালে যেখানে ইলিশ আহরণের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ২০ হাজার ৫৫৩ মেট্রিক টন, তা ২০১৩-১৪ বছরে এসে দাঁড়ায় তিন লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টনে। শতকরা হিসাবে এ বৃদ্ধির হার ৭৫ শতাংশ। ওয়ার্ল্ড ফিশের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ইলিশের ৬০ শতাংশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। ভারতে ২০ শতাংশ, মিয়ানমারে ১৫ শতাংশ, আরব সাগর তীরবর্তী দেশগুলো এবং প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগর তীরবর্তী দেশগুলোতে বাকি ৫ শতাংশ ইলিশ ধরা পড়ে। ভারতের মৎস্য বিভাগের হিসাবে, ২০১১ সালে সে দেশে ইলিশ ধরা পড়েছিল ৮০ হাজার টন। ২০১৪ সালে তা নেমে এসেছে ১৪ হাজার টনে। তবে বাংলাদেশে ইলিশ উৎপাদন বাড়ছে। ভারতে ইলিশ মাছের উৎপাদন কমে যাওয়া প্রসঙ্গে ভারতের প্রধান ইলিশ ব্যবস্থাপক ড. উৎপল ভৌমিক জানান, ‘হুগলি ও ভাগিরথি নদীর অববাহিকায় ইলিশ মাছের উৎপাদন প্রতিনিয়তই কমে যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইলিশ মাছ রক্ষায় তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি। আমাদের কাছে তথ্য আছে, ৭৫ শতাংশ ইলিশ শূন্য দশমিক ৫ গ্রাম ওজন হওয়ার আগেই ধরে ফেলা হয়। এ কারণে ভারতে ইলিশের উৎপাদন কমে যাচ্ছে।’ ইলিশ নিয়ে শঙ্কা ॥ নদীদূষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও স্বাভাবিক পানি প্রবাহ সঙ্কটে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে বিশ্বজয়ী বাংলাদেশের রূপালি ইলিশ। বাংলাদেশী ইলিশের স্বাদ, রং ও আকার যে আগের মতো নেই তা যেন ঝুঁকির পূর্বাভাসকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে। তবে আশার কথা হচ্ছে ইলিশ গবেষকরা সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় এরই মধ্যে শুরু করেছেন নানা কার্যক্রম। গবেষকরা বলছেন, কেবল জাটকা নিধন প্রতিহত করলেই চলবে না। ইলিশ সম্পদ বাড়লেও যদি এর মৌলিকত্ব ধরে রাখা না যায় তবে অদূর ভবিষ্যতে দেশে-বিদেশে ইলিশের প্রতি মানুষের আকর্ষণ কমে যাবে। তাই ইলিশ নিয়ে কাজ করা জনবলই নয়, ইলিশ সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে এর সঙ্গে একযোগে কাজ করতে হবে সরকারী-বেসরকারী সংশ্লিষ্ট সব মহলকে। ইলিশ বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিল্প-কারখানার বর্জ্য নদী ও সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়ায় তা রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে মৎস্যসম্পদকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিশেষ করে ইলিশ মাছ অন্য মাছের চেয়ে বেশি স্পর্শকাতর হওয়ায় এর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বেশি পড়ে। ইলিশ গবেষক ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিএফআরআই) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুর রহমান বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ইলিশের সংখ্যাগত উৎপাদন নিশ্চিত করতে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যার সুফলও পাওয়া যাচ্ছে প্রতি বছর। জাটকা নিধন ও মা ইলিশ নিধন বন্ধে উপযুক্ত কর্মকৌশলের ফলে উৎপাদনের পরিমাণ বেড়েই চলছে। অন্যদিকে রফতানিও বন্ধ রাখা হয়েছে। যে কারণে দেশে ইলিশের চাহিদার তুলনায় ঘাটতি কমে গেছে। এটা আমাদের বড় অর্জন। তবে সমস্যা হচ্ছে মান নিয়ে। মান ধরে রাখা নিয়ে সংশয় ও ঝুঁকি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরিমাণের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সমানভাবে মান সুরক্ষায়ও সমন্বিত টেকসই ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা জরুরী। ড. আনিসুর রহমান বলেন, ‘চলতি বছরে যেভাবে ইলিশ সম্পদের পরিমাণগত সংরক্ষণে ব্যাপক উদ্যোগ কার্যকর হয়েছে, সেদিক থেকে এবার ইলিশ মৌসুমে উৎপাদন অনেকটাই ভাল হবে। তবে এটা নির্ভর করছে বৃষ্টির ওপর। যদি সময়মতো স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয় তবে পানি প্রবাহ সঠিক থাকবে, আর মাছও ধরা পড়বে অনেক বেশি। কিন্তু এর ব্যত্যয় ঘটলে প্রত্যাশা অনুসারে ইলিশ নাও মিলতে পারে।’ বাংলাদেশ সেন্টার ফর এ্যাডভান্স স্টাডিজের (বিসিএএস) নির্বাহী পরিচালক ড. এ আতিক রহমান বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের দেশে ইলিশ মাছের উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু আগামী ১০ বছর পর এই ধারা আর থাকবে না। এর মধ্যে অন্যতম কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। এতে করে ইলিশের ঝাঁক মিয়ানমারের দিকে চলে যেতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘এছাড়া নদী দূষণ ও বাঁধ নির্মাণের কারণে ইলিশের উৎপাদন কমে আসবে। ইলিশের ধারাবাহিক উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হলে আমরা যে সব পলিসি নিয়েছি তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে ইলিশ মাছ মেঘনা নদীতে না এসে মিয়ানমারে চলে যাবে।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরের রূপ পাল্টে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে পরিবর্তন ঘটেছে ইলিশের স্বাভাবিক আচরণে। জেলেরাও বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। ফলে সাগরে জেগে উঠছে অসংখ্য ডুবোচর। অথচ ইলিশ গভীর পানির মাছ। ডুরোচরের কারণে ইলিশের গতিপথ পাল্টে যাচ্ছে। পটুয়াখালীর গঙ্গাপুর গ্রামের ইলিশ জেলে হাইদুল কাজী (৬০) অভিজ্ঞতার নিরিখে বলেন, ‘প্রতি বছরই সাগরে নতুন চরের সংখ্যা বাড়ছে। অথচ ইলিশ গভীর পানি ছাড়া চলতে পারে না। ডুবোচরের কারণে ইলিশের গতিপথ পাল্টে যাচ্ছে। বাংলাদেশের চেয়ে মিয়ানমার এবং ভারত উপকূলে সাগরের গভীরতা অনেক বেশি। ফলে ইলিশ তার গতি পাল্টে ঐসব দেশের দিকে চলে যাচ্ছে। পটুয়াখালীর উলানিয়া গ্রামের জেলে রফিক মাঝি (৭০) জীবনের প্রায় পুরোটা সময় কাটিয়েছেন সাগরে ইলিশ শিকার করে। তিনি বলেন, ইলিশ ডিম ছাড়ে মিষ্টি পানিতে। যখনই ডিম ছাড়ার সময় ঘনিয়ে আসে, তখনই ঝাঁকবেঁধে ইলিশ উপকূলের মিষ্টি পানিতে চলে আসে। কিন্তু বাংলাদেশের উপকূলে মিষ্টি পানির আঁধার হিসেবে যে সমস্ত নদ-নদী পরিচিত ছিল, সেগুলো এখন আর আগের অবস্থায় নেই। সব নদীতে পানির লবণাক্ততা বেড়েছে। ফলে পদ্মা-মেঘনায় ইলিশের আকাল লেগেছে। এখন উপকূলেও মিষ্টি পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্রগুলো লবণাক্ত পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে ইলিশ ডিম ছাড়তে আর আসে না। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক আ.ক.ম. মোস্তফা জামান জানান, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেমন ইলিশের ভ্রমণ এলাকার পরিবর্তন হচ্ছে, তেমনি পরিবেশ দূষণের কারণে ইলিশের প্রধান খাদ্য উদ্ভিদকণা বা জুয়োপ্লাঙ্কটনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে ইলিশ নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে।’ ত্রিদেশীয় উদ্যোগ ॥ বাঙালীর প্রিয় ইলিশ মাছের বংশবৃদ্ধি, উৎপাদন ও সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ, ভারত এবং মিয়ানমার পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতা করার অঙ্গীকার করেছে। সম্প্রতি ঢাকায় ইলিশ সংক্রান্ত এক সেমিনারে তিন দেশের প্রতিনিধিরা এই অঙ্গীকার করেছেন। প্রতিবছর এই দেশগুলোতে ৩৮ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি ইলিশ ধরা হয়, যার শতকরা ৬০ ভাগ ধরা হয় বাংলাদেশে। কিন্তু দেশগুলোর মধ্যে এ ব্যাপারে কোন সহযোগিতা নেই। ইলিশ মাছ রক্ষায় এই তিনটি দেশ নিজের মতো করে পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের মৎস্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক লিয়াকত আলী বলেন, ‘বাংলাদেশে দুই মাস ইলিশ ধরা হয় না। এই দুই মাস জাটকা সংরক্ষণ করা হয়। তখন জেলেদের জীবিকা নির্বাহের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়। এতে দেশে মাছের উৎপাদন বেড়েছে।’ তিনি বলেন, মিয়ানমারেরও এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত। তা না হলে ইলিশ মাইগ্রেট করে মিয়ানমার চলে যাবে। ফলে আমাদের প্রচেষ্টা সফল না-ও হতে পারে। তাই বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার-এই তিন দেশ মিলে যদি আমরা যৌথ কর্মসূচী গ্রহণ করি, তাহলে বঙ্গোপসাগরে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে। জাটকা নিধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জাটকা নিধন এখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। নানাবিধ পদক্ষেপের ফলে এ ক্ষেত্রে ৫০ ভাগ সফল হওয়া গেছে। এটা পুরোপুরি বন্ধ না হওয়ার অনেক কারণ। তবে জাটকা নিধন বন্ধে গৃহীত পদক্ষেপগুলো অব্যাহত রাখতে হবে। জাটকা নিধন বন্ধ এবং যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমেই আমাদের ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে হবে।’
×