ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাটির নিচে বসবাস ॥ জানা-অজানা

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ১৯ আগস্ট ২০১৬

মাটির নিচে বসবাস ॥ জানা-অজানা

শিরোনাম ভুল বলছে না। সত্যিই মাটির নিচে বিশেষ কোন সুবিধা ছাড়াই বসবাস করছে মানুষ। বুখারেস্টের গৃহহীন শিশুরা শহরের ভূগর্ভস্থ টানেলে বাস করে। সেখানে না রয়েছে বিদ্যুত, না আছে আলো। রাস্তার জীবন থেকে সরে আসা ২৪ বছর বয়সী সের্গিউ ছোটবেলায় কিছুদিন এতিমখানায় কাটিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে সেখান থেকে পালিয়ে এসে টানেলে বসবাস শুরু করেন তিনি, হয়ে পড়েন মাদকাসক্ত। এখন সুস্থ জীবনে ফিরতে চান তিনি। তাই টানেলের জীবন বাদ দিয়ে এখন বাস করছেন একটি সেতুর নিচে। রাস্তার জীবন পেছনে ফিরে এগিয়ে যেতে কারিগরি স্কুলে লেখাপড়াও করেছেন তিনি। বাড়ির মতো জায়গা? বুখারেস্টের মাটির নিচে থাকা টানেলের মধ্যে নিজের বসবাসের জায়গাটুকু খানিকটা গুছিয়েও নিয়েছেন কেউ কেউ। বিদ্যুত নেই সেখানে। তাই কারিনা মোম জ্বেলে আলোর ব্যবস্থা করেন। অনেক গৃহহীন শিশু এতিমখানায় বড় হয়েছে। এরপর একসময় সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে বেছে নিয়েছে মাটির নিচে বসবাসের জীবন। এসব টানেল মূলত শহরের হিটিং ব্যবস্থা চালু রাখতে এবং ময়লা পানি সরিয়ে নিতে ব্যবহার করা হয়। গৃহহীন শিশুদের নতুন প্রজন্ম রোমানিয়ায় বিপ্লবে ২৫ বছর পর এক গৃহহীন, মাদকাসক্ত তরুণ প্রজন্ম এখন রাস্তায় ঘুরছে, যাদের বাসস্থান মাটির নিচে। ১৯ বছর বয়সী মোনা সন্তানসম্ভাবা। এটা তার দ্বিতীয় সন্তান। প্রথম সন্তান এবং ছেলেবন্ধুকে নিয়ে টানেলে বসবাস করেন তিনি। শীতের মধ্যে টিকে থাকা ২০ বছরে পা দেয়া রেমুস একা থাকতে পছন্দ করেন। বুখারেস্টের কে›¿স্থলে একটি টানেলে বাস তার। মোটামুটি পা ছড়িয়ে থাকার মতো একটি জায়গা পেয়েছেন তিনি। তবে তার আবাসের পাশেই রয়েছে হিটিং সিস্টেম। তাই শীতকালে বেশি কষ্ট হয় না। আগে ছিল এতিমখানায় রুমানিয়ার কমিউনিস্ট যুগের একনায়ক নিকোলা চাওশেস্কু গর্ভনাশ নিষিদ্ধ করেছিলেন। তাই তখন এতিমখানার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু কমিউনিস্ট যুগ শেষ হওয়ার পর নব্বইয়ের দশকে এতিমখানাগুলোর অবস্থা খুব শোচনীয় হয়ে পড়ে। প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় অনেক শিশু এতিমখানা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়। মাদক বিক্রেতা এবং ক্রেতাদের আড্ডাস্থল বুখারেস্টের ‘গাড দ্য নর্ড’ ট্রেন স্টেশনের কাছে থাকা একটি পার্কের নিচেই রয়েছে টানেল। সেই টানেলে একটি ব্যাগ পৌঁছে দিচ্ছেন এক ব্যক্তি। ট্রেন স্টেশনের পাশের এই পার্ক মাদকাসক্তদের আড্ডাস্থল হিসেবে পরিচিত। পার্কের মাটির নিচের টানেলে বাস করেন অনেকে থাকেন বৃদ্ধরাও। বুখারেস্টের মধ্যবিত্তদের আবাসিক এলাকার কাছের একটি টানেলে বসবাস করেন এই বৃদ্ধ দম্পতি। রোমানিয়ার রাজধানীতে বসবাসরতদের মধ্যে ছয় হাজারের মতো গৃহহীন রয়েছে। শীতের সময় এদের অনেকেই মাটির নিচে আশ্রয় খোঁজে। মাদক গ্রহণ চার বছর বয়সী পেপিটা যখন চিপস চিবাচ্ছে, তার এক বোন ক্রিস্টিনা তখন বিশেষ ধরনের মাদক সেবনে ব্যস্ত। পেপিটা জানায়, টানেলের মধ্যে বসবাস সহজ নয়। মাঝে মাঝে এত লোক সেখানে থাকে যে শব্দে ঘুমাতে পারি না। কিন্ডার গার্টেনে যেতে পারলে ভাল হতো। শিশু লালনপালন ৩২ বছর বয়সী নিকোলেটা তৃতীয়বার সন্তানসম্ভাবা হয়েছেন। ছেলেবন্ধুসহ তিনি একটি পার্কের মধ্যে ক্যাম্প করে থাকেন। তার আগের দুটি সন্তান লালন পালনের জন্য সরকার নিয়ে গেছে। তবে অনাগত সন্তানটিকে সঙ্গে রাখতে চান নিকোলেটা। সেটা সম্ভব হবে কিনা বলা মুশকিল। কেননা গৃহহীন কিংবা মাদকাসক্ত মায়েদের কাছ থেকে সন্তান নিয়ে যায় সমাজ কল্যাণ দফতরের লোকেরা। রাস্তার জীবন থেকে সরে আসা ২৪ বছর বয়সী সের্গিউ ছোটবেলায় কিছুদিন এতিমখানায় কাটিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে সেখান থেকে পালিয়ে এসে টানেলে বসবাস শুরু করেন তিনি, হয়ে পড়েন মাদকাসক্ত। এখন সুস্থ জীবনে ফিরতে চান তিনি। তাই টানেলের জীবন বাদ দিয়ে এখন বাস করছেন একটি সেতুর নিচে। রাস্তার জীবন পেছনে ফিরে এগিয়ে যেতে কারিগরি স্কুলে লেখাপড়াও করেছেন তিনি। সূত্র : ডয়েচে ভেলে
×