ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কুস্তিগীর সাক্ষীর ইতিহাস

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১৯ আগস্ট ২০১৬

কুস্তিগীর সাক্ষীর ইতিহাস

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ লন্ডন অলিম্পিকে ভারত ৬ পদক জিতেছিল। যদিও কোন স্বর্ণালী সাফল্য ধরা দেয়নি। তবে দুটি রৌপ্য আর চার ব্রোঞ্জ নিয়ে চার বছর আগে অলিম্পিক মিশন শেষ করে ফিরেছিল ভারতীয় এ্যাথলেটরা। এর মধ্যে দুটি ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন দুই মহিলা এ্যাথলেট। কিন্তু এবার রিও অলিম্পিকের ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও কপর্দকশূন্য ছিল জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশটি। অবশেষে ১৩তম দিনে অপেক্ষার প্রহর কাটল। পুরো ভারতকে আনন্দিত করলেন সাক্ষী মালিক। মহিলাদের ৫৮ কেজি শ্রেণীর কুস্তিতে ব্রোঞ্জ জিতেছেন তিনি। অলিম্পিক ইতিহাসে এই প্রথম কোন ভারতীয় মহিলা কুস্তিতে পদক জেতার কৃতিত্ব দেখালেন। তাই ভারতের অলিম্পিক ইতিহাস লিখতে গেলে এখন ২৩ বছর বয়সী সাক্ষীর জন্য আলাদাভাবেই কিছু লিপিবদ্ধ করতে হবে। রিও অলিম্পিকে ভারতীয় এ্যাথলেটদের মধ্যে বড় চমক ছিলেন ত্রিপুরার মেয়ে দীপা কর্মকার। প্রথম কোন মহিলা জিমন্যাস্ট হিসেবে অলিম্পিকে অংশ নিয়েই ভল্ট ইভেন্টের ফাইনালে ওঠেন। দারুণ আলোচিত এই জিমন্যাস্ট অবশ্য শেষ পর্যন্ত কোন পদক জিততে পারেননি। কিন্তু সাক্ষীর ওপর অবশ্য বিশেষ প্রত্যাশাই ছিল ভারতের। কারণ, ২০১৪ সালে গ্লাসগোয় কমনওয়েলথ গেমসে রৌপ্য, ২০১৪ ইনচনের এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ জয়ের পর ভারতীয়দের স্বপ্ন ছিল অলিম্পিকেও কিছু একটা করবেন সাক্ষী। কিন্তু মহিলাদের ৫৮ কেজির কুস্তিতে কোয়ার্টার ফাইনালেই সবকিছু শেষ হতে বসেছিল, কারণ ৯-২ ব্যবধানে হেরে গিয়েছিলেন সাক্ষী রাশিয়ার ভ্যালেরিয়া কবলোভার কাছে। তবে দ্বিতীয় সুযোগ পেয়ে যান তিনি কম ব্যবধানে পরাজয়ের কারণে। বাদ পড়ে যান ফিনল্যান্ডের পেত্রা ওলি। রিপেচেজ রাউন্ডে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর মঙ্গোলিয়ান প্রতিপক্ষ পুরেভদোরিজিন অরখোনকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে ব্রোঞ্জ পদকের ম্যাচ খেলার সুযোগ পান। আর সেখানেই বাজিমাত করে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নেন তিনি। কিরগিজস্তানের আইসুলু টাইনিবেকোভার সঙ্গে টানটান উত্তেজনার একটি ম্যাচ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ৮-৫ স্কোরে জিতে ব্রোঞ্জ ছিনিয়ে আনেন সাক্ষী। সাক্ষী হলেন চতুর্থ ভারতীয় মহিলা এ্যাথলেট যিনি অলিম্পিকে পদক জিতেছেন। এর আগে কারনাম মালেশ্বরী (ভারোত্তোলনে ব্রোঞ্জ, সিডনি ২০০০), মেরি কম (বক্সিংয়ে ব্রোঞ্জ, লন্ডন ২০১২) এবং সাইনা নেহওয়ালের (ব্যাডমিন্টনে ব্রোঞ্জ, লন্ডন ২০১২) পর এবার এই তালিকায় নাম যোগ হলো সাক্ষীর নামটাও। তবে তাকে আলাদাভাবেই স্মরণে রাখবে পুরো ভারত। কারণ, তিনিই প্রথম ভারতীয় নারী কুস্তিগীর যিনি অলিম্পিকে কোন পদক জয় করতে সক্ষম হলেন। সর্বশেষ ১৯৯২ সালে পদকহীন হয়েই দেশে ফিরেছিল দেশটির এ্যাথলেটরা। এবার ওই শঙ্কার তৈরি হলেও সেটা দূর করলেন হরিয়ানা রাজ্যের অধিবাসী সাক্ষী। ১২ বছর অপেক্ষার পর রিও অলিম্পিকে এসে তার ভারতের জন্য পদক জয়ের স্বপ্ন সফল হয়েছে। তিনি এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমার ১২ বছরের তপস্যা কাজে এসেছে। আমি কখনও ভাবতেই পারিনি আমি প্রথম ভারতীয় মহিলা কুস্তিগীর হব যে অলিম্পিকে পদক জিতবে। আমি আশা করি আমাদের অন্য কুস্তিগীররাও ভাল ফল করবে।’ তবে কুস্তিতে এর আগেও পদক জিতেছে ভারত। তবে আগের পদকগুলো জিতেছিলেন পুরুষ কুস্তিগীররা। সাক্ষী চতুর্থ ভারতীয় কুস্তিগীর যিনি দেশকে পঞ্চম পদক এনে দিয়েছেন। সাক্ষীর আগে কেডি যাদব (১৯৫২ সালে ব্রোঞ্জ), সুশীল কুমার (২০০৮ ব্রোঞ্জ ও ২০১২ রৌপ্য) এবং যোগেশ্বর দত্ত (২০১২ ব্রোঞ্জ) কুস্তিতে পদক জিতেছিলেন।
×