ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘সাফল্যের নেপথ্যে বোল্টের যত ফর্মুলা’!

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১৯ আগস্ট ২০১৬

‘সাফল্যের নেপথ্যে বোল্টের যত ফর্মুলা’!

তিনদিন আগেই ১০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণপদক জিতে ইতিহাস তৈরি করেছেন বোল্ট। টানা তিন অলিম্পিক গেমসের এই ইভেন্টে সোনা জয়ের রেকর্ড এখন তার দখলে। ১০০ মিটারের পর বোল্টের টার্গেট আগের দু’বারের মতো ২০০ মিটারেও মুকুট অক্ষত রাখা। প্রত্যাশিত পদক জয়ের পাশাপাশি ২০০৯ বার্লিন বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে ২০০ মিটারে নিজের গড়া ১৯ দশমিক ১৯ সেকেন্ড সময়টা টপকে যাওয়া। সে আশায় রয়েছেন জ্যামাইকান বিদ্যুত। সেমিফাইনালে গতকাল রাতে অন্যদের পেছনে ফেলে ফিনিশিং লাইন স্পর্শ করার পর অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বোল্ট বলছিলেন, রিওতে পা রেখেই জানিয়ে দিয়েছি, আগের সবকটি সাফল্য ধরে রাখাই আমার লক্ষ্য। সেমিফাইনালে ২০০ মিটারের টাইমিং নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। ১০০ মিটারের ফর্ম বজায় রেখে ২০০ মিটারেও শেষ হাসি হাসতে চাই। ২০০ মিটারের সেমিফাইল জেতার পর বোল্টের হুঙ্কার মানে অমরত্বের নতুন শিখরে জায়গা করে নেয়া। তবে দৌড়টা বোল্টের জন্য সহজ হয়ে পড়ল সেমিতে যুক্তরাষ্ট্র জাস্টিন গ্যাটলিন ও তার স্বদেশী ইয়োহান ব্ল্যাক বাদ পড়ায়। ফাইনাল বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টায়। রিও অলিম্পিক শুরুর আগে উসাইন বোল্টের ১০০ মিটারে স্বর্ণপদক জেতা নিয়ে কিছুটা সংশয় ছিল। ইনজুরিই অন্যতম কারণ। হিট হয়ে যাওয়ার পরও সেই আশঙ্কা কাটেনি। কিন্তু সেমিফইনালের পর পরিষ্কার বুঝা গেল জ্যামাইকার গতিদানবের সাফল্য নিয়ে কোন সংশয় নেই। লেখার অপেক্ষা রাখে না, বোল্ট সুপার হিউম্যান। স্পিন্টার হিসেবে অনেক উঁচুতেই ছিলেন, পরপর তিনটি অলিম্পিকে ১০০ মিটারে চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে গেলেন। ২০০ মিটারের সেমিতেও একই চিত্র। কেমন হলো এবারের দৌড়? এটা বলার আগে উল্লেখ করা দরকার বোল্টের সর্বাধিক গতি ঘণ্টায় ৪৩ দশমিক ৯০ কিলোমিটার। যা তিনি দৌড়ান ৫৫-৬০ থেকে ৭৫-৮০ মিটার পর্যন্ত ঘণ্টায় ৪২ কিলোমিটার গতি রাখেন। অন্য স্প্রিন্টাররা এটা পারেন না। এখানেই বোল্টের সঙ্গে অন্যদের বড় পার্থক্য। দেখা গেছে, ৫৫-৬০ থেকে ৮০ মিটার পর্যন্ত নিজের সেরা গতিতে দৌড়ান বোল্ট। রিওর ১০০ মিটারের ফাইনালেও তাই দেখিয়ে দিলেন। ৫০ মিটার পর্যন্ত ৭৫ সেন্টিমিটার এগিয়ে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিন গ্যাটলিন। প্রথম ৫০ মিটারে গ্যাটলিনের সময় ছিল ৫ দশমিক ৪১ সেকেন্ড। ৬০ মিটারের কাছাকাছি এসে গ্যাটলিনকে টপকে গেলেন বোল্ট। তারপর বাকিটা তো ইতিহাস। ৫০ মিটারের পর থেকে বোল্টের গতি বেড়ে যায়। যেখানে গ্রাউন্ড রি এ্যাকশন ফোর্স কাজে লাগাতে হয়। উচ্চতা, ফুট লেন্থ, শারীরিক গঠকে কাজে লাগিয়ে বোল্ট যা করতে পারেন, সেখানে অন্যরা তা পারেন না। এদিনও পারল না। অন্য দেশের স্প্রিন্টারদের সঙ্গে বোল্ট বা জ্যামাইকানদের একটা পার্থক্য আছে। জ্যামাইকানরা এখনও স্প্রিন্ট ট্রেডিশনাল সিস্টেম মেনে চলেন। যেখানে ট্রেনিংয়ে তারা লং রানিংকে গুরুত্ব দেয়। যেমন ৩০০ মিটার পর্যন্ত দৌড়ায়। অন্য দেশের স্প্রিন্টাররা ট্রেনিংয়ে শর্ট ডিসট্যান্স রানকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। আমেরিকানরা স্পিড এনডুরেন্সকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বোল্টের ওসব দরকার হয় না। আগেও অনেবার বুঝিয়েছে। এবারও বুঝালেন। বোল্ট জানেন কখন জ্বলে উঠতে হয়। এখানেই অন্যদের সঙ্গে বিস্তর পার্থক্য তার। এখন যতটা পারা সম্ভব, ঠিক সময়ে সেই সেরা টাইমিংটাই করছেন। সময় আরেকটু ভাল হতে পারত। না হওয়ার কারণ রিকভারি টাইম কম পাওয়া। সবারই জানা জুনে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে ভুগছিলেন বোল্ট। অন্য অনেকে এই অবস্থায় অলিম্পিকের ট্র্যাকে নামারই স্বপ্ন দেখতেন না। তিনি বোল্ট বলেই ফিরে আসতে পেরেছেন। ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম লিখে ফেললেও এক সময় সবাইকে সরে যেতে হয়। বোল্ট নিজেও বুঝলেন, এবার সরে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। তাই জানিয়েও দিলেন ২০১৭ বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের পর অবসর নেবেন। একেবারে নির্র্ভুল সিদ্ধান্ত। বোল্ট যুগ শেষ হওয়ার পথে। গ্যাটিলিনও আর নয়। এবার তাই তাদের ছেড়ে তাকানো যাক কয়েকজন তরুণের দিকে। যেমন কানাডার আন্দ্রে ডি গ্রেস, দক্ষিণ আফ্রিকার আকানি সিমবাইন, ফ্রান্সের জিমি ভাকাত, আমেরিকার ট্রেভন রোমেল। এই চারজনই এবার ফাইনালে দৌড়িয়েছেন। ডি গ্রেস ব্রোঞ্জও জিতেছেন। তাদেরই কেউ হয়ত আগামীর তারকা হয়ে উঠবেন। সামনের টোকিও অলিম্পিকে বোল্ট, গ্যাটলিন থাকবেন না। ফলে এই চারজনের মধ্যে কেউই হয়ত নায়ক হয়ে উঠবেন।
×