ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সোনার মেডেল থেকে এক কদম দূরে নেইমারবাহিনী

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ১৯ আগস্ট ২০১৬

সোনার মেডেল থেকে এক কদম দূরে নেইমারবাহিনী

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আসা দল সময়ের সঙ্গে টক্কর দিয়ে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে সেটা পর্তুগাল প্রমাণ করেছিল সদ্য সমাপ্ত ইউরো ফুটবলের শিরোপা জয় করে। অলিম্পিক ফুটবলে ব্রাজিলের খেলায় যেন সেই একই প্রতিচ্ছবি। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোদের মতোই পথ ধরেছেন নেইমাররা। কাঠখড় পুড়িয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয়ার পর একে একে জয় কুড়িয়ে চলে এসেছে একেবারে সোনার মেডেলের কাছাকাছি। যার জন্য চাই আর মাত্র একটি জয়। সেমিফাইনালে হন্ডুরাসকে ৬-০ গোলের মালা পরিয়ে পৌঁছে গেছে ফাইনালে। উদ্ভাসিত এ জয়ে রয়েছে খোদ অধিনায়ক নেইমারের সঙ্গে গাব্রিয়েল জিজাসের জোড়া গোল। বাকি দুটো মারকুইনহোস ও লুয়ানের গোল। সাম্বাছন্দে বিলীন হন্ডুরাস যেন মারাকানায় নতুন করে ফুটবল খেলা শিখে গেল। বুঝে গেল বড় দলের ম্যাচ টেম্পারমেন্ট। তবে শুধু জোড়া গোল করেই নয়। অলিম্পিক ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ের গোলের ইতিহাসটাও হয়ে গেল ব্রাজিল অধিনায়কের। কিক অফের পর নিজেদের মধ্যে আদান-প্রদানের ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে গোল খেয়ে বসল হন্ডুরাস। রক্ষণভাগের ভুল বোঝাবুঝির সুযোগটা মুহূর্তের মধ্যে নিয়ে নিলেন রিও অলিম্পিকের সবচেয়ে বড় তারকা নেইমার। আর হলুদের সমারোহে শোভিত গ্যালারিতে ‘মেক্সিকান ওয়েভ’-হাততালিতে মুখরিত। নেইমার তখন মাটিতে লুটিয়ে ছটফট করছিলেন বুকের ব্যথায়। ডিফেন্ডার ব্রায়ান এ্যাকোয়াস্টার পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে পোস্টে শট নেয়ার সময় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন হন্ডুরাসের গোলরক্ষক লোপেজ। প্রায় ফিরিয়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু শটের গতি তীব্র হওয়ায় নেইমারের ঊরুতে লেগেই জালে প্রবেশ করল। লোপেজের ধাক্কা খেয়ে শূন্যে উড়ে গিয়ে মাটিতে পড়ার সময় নিজের কনুইয়ের আঘাতে বুকে প্রচ- ব্যথা পান ‘এন জে টেন’। প্রায় মিনিট আড়াই শুশ্রƒষার পর আবার বীরের মতো দাঁড়িয়ে পড়লেও বার বার বুকে হাত দিতে দেখা যায়, ব্যথাটা মনে হচ্ছিল ভালই পেয়েছিলেন বার্সিলোনা তারকা। এই মারকানায় আগের দিন কেঁদেছিলেন পাঁচবারের ফিফা বর্ষসেরা নারী ফুটবলার ব্রাজিলের মার্তা। যিনি ব্রাজিলবাসীর কাছে নেইমারের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি জনপ্রিয়। সেমিফাইনালে সুইডেনের কাছে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নেয়া মার্তাবাহিনীর ক্ষত চিহ্নে স্বস্তির প্রলেপ দিয়ে দিল নেইমারদের অভাবনীয় এই দারুণ জয়। অপয়া মারাকানা যেন মুখ ফিরে তাকাল। তবে কতটা পয়া হবে ফাইনালের পরই তা বুঝা যাবে। স্বর্ণপদকের ম্যাচেই প্রমাণ পাওয়া যাবে চ্যাম্পিয়ন হয়ে মারাকানায় ব্রাজিল ইতিহাস গড়তে পারলে। আয়েশি জয়ের প্রতিক্রিয়ায় তরুণ বয়সেই বিশ্ববিখ্যাত তারকা বনে যাওয়া নেইমার বললেন, জয়ের কৃতিত্ব আগে দিতে চাই দর্শকদের। যারা উৎসাহ দিয়ে ভাল খেলার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। এরপর মুখে তৃপ্তির হাসির রেখা টেনে বললেন, এটাই আমাদের স্বাভাবিক খেলা। যা শুরু থেকেই হওয়া উচিত ছিল্। গ্রুপের প্রথম দুই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইরাকের বিপক্ষে ড্র করার শোকের মাতমটাকে শক্তিতে পরিণত করে ডেনমার্ককে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিতের পর স্বাভাবিক ব্রাজিলকে দেখতে পেল গোটা বিশ্ব। কোয়ার্টার ফাইনালে প্রবল প্রতিপক্ষ কলম্বিয়াকে দুই গোলে হারিয়ে সেই ছন্দের ধারাবাহিকতা সেমিফাইনালেও বজায় থাকল। রৌপ্য তো নিশ্চিত হয়েই গেছে। কিন্তু আমি সেদিকে ফিরে তাকাতে চাই না। সবচেয়ে মর্যাদার স্বর্ণপদকটাই যে আমার চাই-ই চাই। আশা করি ফাইনালে ব্রাজিলকে আর কেউ ঠেকাতে পারবে না। নব্বই মিনিটের লড়াইয়ে ৩৩টি ফাউলের ছড়াছড়ি। এরমধ্যে ২৩টিই করেছে হন্ডুরাস, যেখানের প্রতিপক্ষ আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য ছিল নেইমারকে। কিন্তু দশটি ফাউলের শিকার হয়েও মারাকানায় ধ্রুবতারার মতোই জ্বলজ্বল মনে হচ্ছিল ব্রাজিল তারকাকে। খেলার ধারা দেখে মনে হচ্ছিল ব্রাজিল নয়, যেন নেইমারের বিপক্ষে খেলতে নেমেছে হন্ডুরাস। ফাউলের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠা নেইমারও বুঝিয়ে দিলেন অখেলোয়াড়সুলভ আচরণের শিক্ষা কিভাবে দিতে হয়। দুই অর্ধে তিনটি করে গোল, সেমির লড়াইয়ে গেমসের আয়োজক ব্রাজিল কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল সেটা তাই প্রমাণ করে। তবে সোনার মেডেলের লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ কিন্তু জার্মানি। আফ্রিকার সুপার ঈগল নাইজিরিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে স্বর্ণপদকের অন্যতম দাবিদার হয়ে উঠেছে ইউরোপের ‘পাওয়ার হাউজ’ খ্যাত জার্মানরা। তারা কিন্তু ছেড়ে কথা বলার দল নয়। ২০১৪ বিশ্বকাপ ফুটবলের সেমিফাইনালে ব্রাজিলকে সাত গোলে নাকাল করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানি যে ইতিহাস গড়ে রেখেছে তা অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করতে পারে যুবাদের অলিম্পিক ফাইনালে। স্বাগতিক ব্রাজিলের বিপক্ষে। যদিও নেইমার বলছেন, আমি পেছন ফিরে তাকাতে চাই না। প্রতিপক্ষ যে দলই হোক স্বর্ণপদক আমরাই গলায় ঝুলাব। সে আত্মবিশ্বাস ইতোমধ্যে জড়ো হয়ে গেছে দলের সবার মধ্যে। প্রাণবন্ত, হাসিখুশি নেইমার বললেন, হন্ডুরাসকে হারাতে পারব সে আত্মবিশ্বার আমাদের ছিল। কিন্তু এত সহজেই পার পেয়ে যাব ভাবিনি।
×