ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ৯ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও টম্পসন আলোয় উদ্ভাসিত অলিম্পিক পার্ক

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ১৯ আগস্ট ২০১৬

আবারও টম্পসন আলোয় উদ্ভাসিত অলিম্পিক পার্ক

উসাইন বোল্টের ‘টিপল’ দেখতে গোটা বিশ্ব যখন উন্মুখ তখন ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনার মেডেল গলায় ঝুলিয়ে তিনিও চলে এলেন রিও অলিম্পিকসের প্রাদপ্রদীপের আলোয়। তার সামনেও এখন ‘ট্রিপল’ জয়ের হাতছানি। ক্যারিয়ারের প্রথম অলিম্পিকেই বাজিমাত। ৪ল্প১০০ মিটার জিততে পারলে বোল্টের মতো তিনিও ইতিহাসের অঙ্গ হয়ে যাবেন। অলিম্পিক গেমসে যে রেকর্ড কোন নারী এ্যাথলেটের নেই। বলা হচ্ছিল, এলেইন টম্পসনের কথা। জ্যামাইকার নারী বোল্ট হিসেবে এখনই যাকে দেখতে শুরু করেছেন বিশেষজ্ঞরা। চারদিন আগে ১০ দশমিক ৭১ সেকেন্ড সময় নিয়ে ১০০ মিটার জিতে জ্যামাইকার আগামী তারকা হিসেবে রিওতে নিজেকে তুলে ধরেছিলেন। সেই উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটি অবিস্মরণীয় জয়, হয়ে গেল টানা দুই। ২০০ মিটার স্প্রিন্টে টম্পসন সময় নিয়েছেন ২১ দশমিক ৭৮ সেকেন্ড। ২০১৫ বেজিং বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে ২০০ মিটার রেসে তিনি দ্বিতীয় হয়েছিলেন ২১ দশমিক ৬৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে। গত লন্ডন অলিম্পিকে এই পদকটি জয় করেছিলেন শ্যালী এন ফ্রেসার-প্রাইস। বৃহস্পতিবার রাতের রিও অলিম্পিক পার্ক যখন টম্পসন আলোয় উদ্ভাসিত, জ্যামাইকান দর্শকেরা যখন উৎসবে মাতোয়ারা তখন অন্যদিকে কিছুটা হতাশার চিত্র। সেটা ওলান্দাজদের। ৬ ফুট উচ্চতার ডাচ্কন্যা ডেফনে শিপার্স যে অল্পের জন্য স্বর্ণপদক পেলেন না। টম্পসনের ঠিক পেছনে থেকে হয়েছেন দ্বিতীয়। সময় নিয়েছেন ২১ দশমিক ৮৮ সেকেন্ড। অন্য সব দেশকে পেছনে ফেলে পদক তালিকায় শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের রোইয়াতরি ২২ দশমিক ১৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে হয়েছেন তৃতীয়। ১৫০ মিটার পর্যন্ত শিপার্সই এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু শেষ ৫০ মিটারে টম্পসন যেন হয়ে উঠলেন স্বদেশী উসাইন বোল্ট। পা দুটোকে এমন গতিতে চলালেন যে অপেক্ষাকৃত খর্বাকৃতী হয়েও ছাপিয়ে গেলেন শিপার্সকে। আর হল্যান্ডর এই তারকা এ্যাথলেটকে সন্তুষ্ট থাকতে হলো রৌপ্য নিয়ে। আসলে সময় যখন ভাল হয়, তখন সবকিছু নিখুঁত হয়ে যায়। যে সরোভরে অবগাহন করছেন এখন জ্যামাইকানরা। এ্যাথলেটিক্সের সবচেয়ে দামী পদকগুলো একে একে চলে আসছে তাদের ভা-ারে। ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের অবিসংবাদিত সম্রাট উসাইন বোল্ট যথন হ্যাটট্রিক করার স্বপ্নে বিভোর, তখন হ্যাটট্রিক করার কাতারে শামিল হওয়ার পথ তৈরি করে নিলেন টম্পসনও। সেই স্বপ্নে এখন কেবলই ১০০ মিটারের রিলের সোনার পদক। আর জিতে যেতে পারলে বাকিটা তখন হয়ে উঠবে ইতিহাস। উঠে আসবেন সেরার কাতারে। দৌড় শেষে ক্ষণিক বিরতির পর বিশ্ব মিডিয়ার সামনে ‘ট্রিপল’-এর কথাই বললেন এলাইন টম্পসন। জীবনের প্রথম অলিম্পিক খেলতে এসে এ্যাথলেটিক্সের সবচেয়ে সম্মানের ১০০ ও ২০০ মিটার জয়ের আনন্দ প্রকাশ করার ভাষা এই মুহূর্তে নেই। আমি রীতিমতো অভিভূত। প্রত্যাশা ছিল ভাল করার। কিন্তু এতটা ঝলক দেখাতে পারব ভাবিনী। এখন তো আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে। রিলের স্বর্ণপদকটাও যে আমার দরকার। আশা করি পেয়ে যাব। আমাদের রিলে দল এমনিতেই ভাল। সতীর্থদের প্রতি আস্থা আছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ১০০ রিলেতেও জয় অবধারিত। অলিম্পিকস সামনে রেখে কঠোর অনুশীলন করেছিলাম। প্রায় দুই বছরের প্রস্তুতি। এই অর্জন পরিশ্রমের ফসল। দর্শক গ্যালারিতে আমার বাবা-মা উপস্থিত ছিলেন। দেশের মানুষ তথা জাতিকে গৌরবময় সম্মান এনে দিতে পেরে আমি গর্বিত। আরও ভাল লাগছে বাবা-মাকে খুশি করাতে পারায়। চোখের সামনে তারা দেখলেন তাদের আদূরে মেয়েটা কিভাবে রিও অলিম্পিক মাত করে দিল। এরচেয়ে আনন্দ আর কি হতে পারে। এবার ট্রিপল মারতে পারলে সামনের টোকিও অলিম্পিকেও একই দৃষ্টি থাকবে? প্রশ্নের উত্তরে বিজয়ের রোশনাই ছড়িয়ে দেয়া, আবেগে আত্মহারা টম্পসন বললেন, সেটাই হবে তখন আমার মূল লক্ষ্য। বোল্ট প্রসঙ্গে কিছু জানতে চাইলে জ্যামাইকানকন্যা বললেন, তিনিই তো আমাদের অনুপ্রেরণা। রেসে নামার আগে বড় পরামর্শক। কিভাবে দৌড়াতে হবে তালিম দিয়ে দেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামার আগে। গোটা জাতি যাকে নিয়ে গর্বিত সেই বোল্টই আমার ‘আইডল’। তাকে অনুসরণ করে ধাপে ধাপে আরও এগিয়ে যেতে চাই। ডাবল জয় তো হয়েই গেছে। ট্রিপল মারলেও এখনই উসাইনের সঙ্গে তুলনা করবেন না প্লিজ, প্রশ্নবানের মাঝে বিনয়ীকণ্ঠে জানিয়ে দিলেন টম্পসন। বললেন, তার মতো এ্যাথলেটের সান্নিধ্যে থাকাটা আমাদের জন্য গর্বের। আমি একা নই। রিও গেমসে খেলতে আসা আমাদের সবার অনুপ্রেরণা বলতে যে তিনিই এ কথা নতুন করে বলার প্রয়োজন মনে করি না। ইতিহাসে অমরতœ বনে যাওয়া উসাইনের মতো তারকা আগামীতে জ্যামাইকায় আর জন্ম নেবে কিনা সেটাই দেখার।
×