ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আটকের কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে রিজার্ভ চুরির হোতা দিগুইতোর জামিন

আবারও লেনদেনে ফিরছে ফেড ও বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৯ আগস্ট ২০১৬

আবারও লেনদেনে ফিরছে ফেড ও বাংলাদেশ ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাইবার চুরির ঘটনায় বাংলাদেশের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয়ার পর লেনদেনের ক্ষেত্রে বাড়তি যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল তা তুলে নিতে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংক একমত হয়েছে। কবে নাগাদ স্বাভাবিক লেনদেন চালু হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত জানা যায়নি বলে দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর দিয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া মায়া সান্তোস দেগুইতো জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। মায়া ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) মাকাতি শহরের জুপিটার স্ট্রিট শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক। বুধবার ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলার একটি সুপার মার্কেট থেকে তাকে গ্রেফতার করে দেশটির পুলিশ। জানা গেছে, বৈশ্বিক আর্থিক লেনদেনের মেসেজিং প্লাটফর্ম সুইফট তার গ্রাহকদের ব্যবহৃত সফটওয়্যার টুলসের নিরাপত্তা জোরদার, কোন হিসাবের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফাঁক ধরা পড়লে শনাক্ত করতে নতুন টুলসের উদ্ভাবন এবং কোন পরিশোধের আদেশ স্বাভাবিক ধরন থেকে বিচ্যুত মনে হলে ‘সতর্ক সঙ্কেত’ (রেড ফ্লাগ) দেখানোর বিষয়ে গত মে মাসে প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর এই সিদ্ধান্ত এলো। বিষয়টি সম্পর্কে সরাসরি জানেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘনিষ্ঠ এমন একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, চলতি সপ্তাহে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংক, নিউইয়র্ক ফেড ও সুইফটের মধ্যে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা তুলে নিতে তারা সম্ভাব্য একটি সময়সীমার বিষয়ে একমত হয়েছে বলে সূত্রটি জানালেও বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি। গণমাধ্যমে কথা বলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত না হওয়ায় নাম প্রকাশ না করে সূত্রটি বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ও নিউইয়র্ক ফেড শুধু নিরাপদ যোগাযোগের জন্য সুইফট ব্যবহার করতে চায়। যত শীঘ্রই সম্ভব যোগাযোগের পথগুলো স্বাভাবিক করার বিষয়ে আলোচনা করছি। এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে নিউইয়র্ক ফেড ও সুইফটের পক্ষ থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া মায়া সান্তোস দেগুইতো জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। মায়া ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) মাকাতি শহরের জুপিটার স্ট্রিট শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক। ফিলিপিন্সের স্থানীয় সময় অনুযায়ী বুধবার গভীররাতে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান বলে দেশটির গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। মাকাতি সিটির পুলিশ প্রধান রমিল মিত্রের বরাত দিয়ে ম্যানিলা বুলেটিন জানায়, গ্রেফতারের পর মায়াকে নারী বন্দীদের সেলে রাখা হয়েছিল। রাতে তিনি সেখানেই ছিলেন। জামানত দিয়ে আদালত থেকে জামিন পান। আদালতের আদেশ রাতে কারাগারে এলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এর আগে বুধবার ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলার একটি সুপার মার্কেট থেকে মায়া সান্তোস দেগুইতোকে গ্রেফতার করে সেখানকার পুলিশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির পর পাচারের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে আরসিবিসির সাবেক এই ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে। মায়াকে গ্রেফতারের বিষয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি হওয়া অর্থ পাচারের ঘটনায় ব্যাংকের নিয়ম-নীতিমালা ভঙ্গ ও ভুয়া নথি তৈরিতে জড়িত থাকার অভিযোগে একটি মামলা করেন আরসিবিসির সাবেক প্রেসিডেন্ট লরেঞ্জ তান। এ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মায়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় বুধবার তাকে গ্রেফতার করে ম্যানিলা পুলিশ। প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারিতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ভুয়া বার্তা পাঠিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার লোপাট হয়। ওই অর্থের বেশিরভাগই একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ম্যানিলার ক্যাসিনোতে চলে যায় এবং সেগুলোর কোন হদিস নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি হওয়া এই অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এর আগে গত মার্চে আরসিবিসির মাকাতি শহরের জুপিটার স্ট্রিট শাখার ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতো ও সহকারী ব্যবস্থাপক অ্যাঞ্জেলা তোরেসকে বরখাস্ত করেছিল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
×