ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মহাসচিব মাদানির সাক্ষাতকালে প্রধানমন্ত্রী

মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাস প্রতিরোধে ওআইসিকে উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৯ আগস্ট ২০১৬

মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাস প্রতিরোধে ওআইসিকে উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাস প্রতিরোধে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থাকে (ওআইসি) উদ্যোগ নেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়াই মধ্যপ্রাচ্যের সংকট নিরসনে মুসলিম দেশগুলোকে আলোচনায় বসতে ওআইসিকে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় সফররত ওআইসি মহাসচিব আইয়াদ আমীন মাদানির সঙ্গে সরকারের একাধিক বৈঠকে এই আহ্বান জানানো হয়। অপরদিকে যুবকদের পরকালের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে আত্মত্যাগের ভুল পথে কারা পরিচালিত করছে তা খুঁজে বের করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ওআইসি মহাসচিব। ওআইসি মহাসচিব আইয়াদ আমীন মাদানি বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে আয়োজিত রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন মাদানি। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ওআইসি মহাসচিব আইয়াদ আমীন মাদানি বৈঠক করেন। বৈঠকে সন্ত্রাস প্রতিরোধে ওআইসিকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে মুসলিম বিশ্বের বিবদমান দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসে সংকট নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, বাইরের কারও হস্তক্ষেপ ছাড়াই মুসলিম বিশ্বের বিবদমান দলগুলোর সংকট নিরসনে ওআইসি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে পারে। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের অবহিত করার সময় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, ‘বাইরের কোনরূপ হস্তক্ষেপ ছাড়াই মুসলিম বিশ্বের দেশগুলো একত্রিত হয়ে তাদের সংকট নিরসনে আলোচনায় বসতে পারে’ প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে এ অভিমত ব্যক্ত করেন। ইহসানুল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং ওআইসি মহাসচিব পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় ছাড়াও মুসলিম বিশ্বের বিবদমান বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। মানবাধিকারের বিষয়টিও তাদের আলোচনায় উঠে এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে বলেন, ফিলিস্তিনে ইসরাইলিরা নিরীহ নিরাপরাধ নারী-শিশু হত্যা করলেও অতীতে দেখা গেছে কোন মানবাধিকার সংস্থাই এনিয়ে কথা বলেনি। ওআইসি মহাসচিবের বাংলাদেশে আগমনকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ সমগ্র বিশ্বের জন্যই একটি সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান খুব স্পষ্ট, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ তা যে রূপেই আসুক না কেন তার বিরুদ্ধে আমাদের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা ঘোষণা করেছি। তাঁর নিজের পরিবারও সন্ত্রাসবাদের শিকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা (সন্ত্রাসীরা) ইসলামের নামে সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষ হত্যা করে প্রকৃতপক্ষে ইসলামেরই বদনাম করছে। তিনি বলেন, ‘এরা মানুষ হত্যার নামে বিচার নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, যদিও কোরআনে বলা আছে আল্লাহপাকই একমাত্র বিচারক।’ আগে দরিদ্র পরিবার এবং মাদ্রাসা ছাত্রদের সন্ত্রাসে জড়ানোর প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা গেলেও আজকাল বেশ অবস্থাপন্ন ঘরের উচ্চশিক্ষিত তরুণ-যুবকরাও এ পথে ঝুঁকছে, অভিমত ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় সন্ত্রাস মোকাবেলায় মাদানি বাংলাদেশসহ ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। ইহসানুল করিম বলেন, মহাসচিব আইয়াদ আমীন মাদানি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জঙ্গী হামলার প্রেক্ষিতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। বর্তমানে বিশ্বে সন্ত্রাসী ঘটনা এবং সাইবার অপরাধ বেড়ে যাবার প্রেক্ষিতে ওআইসি মহাসচিব বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে ওআইসি সব সময়ই দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের পর থেকেই বিশ্বে সন্ত্রাসী ঘটনা এবং সাইবার অপরাধ বৃদ্ধি পেতে থাকে যদিও আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে চাই। এ সময় ওআইসি সদস্য রাষ্ট্র বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকা-ে কার্যকর ভূমিকা পালনের বিষয়টিও তিনি উল্লেখ করেন। মাদানি সন্ত্রাসের শেকড় খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, যুবকদের পরকালের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে আত্মত্যাগের এই ভুল পথে কারা পরিচালিত করছে তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করে ওআইসি মহাসচিব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সঞ্চয় ব্যাংক স্থাপন করে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে তাদের দারিদ্র বিমোচনে সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কেও আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, বেলজিয়ামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে ওআইসির স্থায়ী প্রতিনিধি ইসমত জাহান, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ॥ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন ওআইসি মহাসচিব আইয়াদ আমীন মাদানি। এ সময় ওআইসিকে সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ওআইসি মহাসচিব। মধ্য প্রাচ্যে সংকট নিরসনে ওআইসিকে ভূমিকা নেয়ার জন্য আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আগামী অক্টোবরে উজবেকিস্তানের তাসখন্দে ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ৪৩তম বৈঠকে অংশ নেয়ার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে আমন্ত্রণ জানান মাদানি। উল্লেখ্য, দুইদিনের সরকারী সফরে বুধবার ঢাকায় এসেছেন ওআইসি মহাসচিব। আজ শুক্রবার সফর শেষে তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন।
×