ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোরসালিন মিজান

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৯ আগস্ট ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

শহরজুড়ে হাসিরাশি আনন্দ। পরীক্ষা পাসের উৎসব চলছে। এই লেখা তৈরির দিন বৃহস্পতিবার এইচএসসির ফল হাতে পাওয়া হয়। জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা বলে কথা। মুহূর্তেই আনন্দে ভাসতে শুরু করে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা। অভিন্ন দৃশ্য শহর ঢাকায়। গত ৩ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এতে সারাদেশ থেকে ১২ লাখ ১৮ হাজার ৬২৮ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। সকলেই এতদিন ফলের অপেক্ষা করেছিল। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা নাগাদ হাতে চলে আসে ফল। সারাদেশের মতো উচ্ছল হয়ে ওঠে ঢাকার নামকরা কলেজগুলোর ক্যাম্পাস। এ বছর ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৭৩.৫৩ শতাংশ। প্রত্যাশিত ফল পেয়ে উৎসবে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্যাম্পাস যেন নতুন প্রাণ পায়। কৃতী ছাত্রছাত্রীরা নেচে গেয়ে আনন্দ প্রকাশ করে। দুপুর ১২টায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, ফলপ্রত্যাশীদের বিপুল উপস্থিতি। দুপুর ১টার দিকে নোটিস বোর্ডে ফল টানিয়ে দিতেই শুরু হয়ে যায় উৎসব। কেউ প্রিয় বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে। কেউ জড়িয়ে ধরে বাবা-মাকে। একসঙ্গে শত শত শিক্ষার্থী হাতে হাত ধরে বৃত্ত তৈরি করে। চক্রাকারে ঘুরে মনের আনন্দ প্রকাশ করে। এবার ভিকারুননিসায় পাসের হার ৯৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ১৪০ শিক্ষার্থী। সব বিবেচনায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের ফল শুধু ভাল নয়, প্রতিষ্ঠানটি স্বরূপে ফিরেছে বলতে হবে। সেরা কলেজের তালিকা থাকলে নিজেদের প্রতিষ্ঠান এক নম্বর হতো বলে দাবি করেছেন অধ্যক্ষ সুফিয়া খাতুন। আগস্টের বেদনার কথাও বলতে হবে। গত ১৫ আগস্ট কৃতজ্ঞ জাতি বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা-ভালবাসায় স্মরণ করে। দিবসটি পালন উপলক্ষে শহরজুড়েই ছিল নানা আয়োজন। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় এদিন আর কেউ ছিলেন না। ছিল না। মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ছিলেন সামনে। এদিন সকাল থেকেই ধানম-ির ৩২ নম্বরে ঢল নেমেছিল শোকাতুর মানুষের। কালো পাঞ্জাবি, শাড়ি গায়ে সকলেই পিতার প্রতিকৃতির সামনে দাঁড়িয়েছেন। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তাঁকে। সারাদিন মাইক থেকে ভেসে এসেছে ৭ মার্চের বজ্রকণ্ঠ। মুজিবের ঐতিহাসিক ভাষণ বেজেছে অলিতে-গলিতে। পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনে এখনও জাতির জনকের প্রতিকৃতি। শোকের মাসের শেষ দিন পর্যন্ত এমন অনেক কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। বৃহস্পতিবার ছিল ক্ষণজন্মা নাট্যকার সেলিম আল দীনের ৬৮তম জন্মদিন। প্রতিবারের মতো দিবসটি উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজন করা হয়েছে সেলিম আল দীন উৎসবের। তিন দিনব্যাপী উৎসবের আয়োজন করেছে ঢাকা থিয়েটার, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার ও সেলিম আল দীন ফাউন্ডেশন। আয়োজনের প্রথম দিন বিকেলে ছিল চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার মূল মঞ্চে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। উদ্বোধন করেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ। বিখ্যাত অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদকে ‘সেলিম আল দীন পদক’ প্রদান করা হয়। ছিল নাটকও। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মঞ্চস্থ হয় সেলিম আল দীনের অত্যন্ত প্রশংসিত নাটক ‘নিমজ্জন’। নাসির উদ্দীন ইউসুফ নির্দেশিত নাটকটি দেখেন হলভর্তি দর্শক। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে নাটক ‘কারবালার জারি’। উৎসবের সমাপনী দিন কাল শনিবার থাকছে ‘সেলিম নাট্যমঞ্জরি’। সেলিম আল দীনের নাটকের চরিত্রগুলো নিয়ে পরীক্ষণ থিয়েটারে মঞ্চস্থ হবে বিশেষ নাটক ‘পুতুল তোমার জনম কী রূপ’। এতে একক অভিনয় করবেন শিমূল ইউসুফ। গ্রীন ঢাকা গড়ার স্বপ্নে গত ২ মে থেকে উত্তরায় শুরু হয়েছিল বৃক্ষরোপণের পরীক্ষামূলক প্রকল্প। ২৯ হাজার গাছ লাগানোর কাজ এখন চলছে। এরই মাঝে ১৮ হাজার ৭৪৪টি গাছ লাগানো হয়েছে। এ মাসেই বাকি গাছ লাগানো শেষ হবে। বৃক্ষরোপণে জনসচেতনতা বাড়াতে বৃহস্পতিবার উত্তরায় এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালা থেকে মেয়র আনিসুল হক এসব তথ্য দেন। দারুণ আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় বিনামূল্যে গাছ রোপণ করা হবে। সবার বাড়িতে কিভাবে গাছ দেয়া যায়, আমরা ভেবে দেখছি। প্রয়োজনে বেসরকারী অর্থায়নে আমরা সব বাড়িতে গাছ লাগাব। এ পাইলট প্রকল্পের অভিজ্ঞতা রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় কাজে লাগানোর কথা জানান আনিসুল হক। নগরে বৃক্ষরোপণের সময় ফলদ গাছ লাগানোর পরামর্শ দেন প্রকৃতিবিদ দ্বিজেন শর্মা। বলেন, আমাদের বনে খুবই সুন্দর সুন্দর গাছ রয়েছে। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে ওসব হারিয়ে যাচ্ছে। গাছগুলো শহরের রাস্তার ধারে লাগালে সৌন্দর্য বৃদ্ধি হবে। গাছগুলোও টিকে থাকবে।
×