ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দশ বোর্ডে পরীক্ষার্থী ছিল ১২ লাখ ৩ হাজার ৬৪০, উত্তীর্ণ ৮ লাখ ৯৯ হাজার ১৫০ ;###;পাসের হার ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ ;###;জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৮ হাজার ২৭৬ জন

সাফল্যের রেকর্ড ॥ এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৯ আগস্ট ২০১৬

সাফল্যের রেকর্ড ॥ এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্রেডিং পদ্ধতির প্রথম বছর ২০০৩ সালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাঁচ লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছিল মাত্র ২০ জন। পাসের হার ছিল ৩৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ১৪ বছরের মাথায় এবার অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় পাসের হার যেমন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ, তেমনি জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা চলে এসেছে ৫৮ হাজার ২৭৬ জনে। ১৪ বছরের ব্যবধানে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা বেড়েছে ৫৮ হাজার ২৫৬ জন। এই চিত্রই বলে দিচ্ছে দেশের দশ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলে যথারীতি সাফল্যের বিস্ফোরণ ঘটেছে। পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিসহ সকল সূচকেই আগের সাফল্যকে ম্লান করে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। গত বছর পাস করেছিল ৬৯ দশমিক ৬০ শতাংশ, জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৪২ হাজার ৮৯৪ জন। গত বছরের তুলনায় পাসের হার বেড়েছে পাঁচ দশমিক ১০ শতাংশ, জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ১৫ হাজার ৩৮২ জন। আটটি সাধারণ, একটি কারিগরি ও একটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে এবার ১২ লাখ তিন হাজার ৬৪০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে আট লাখ ৯৯ হাজার ১৫০ জন। এবার শতভাগ পাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি কমেছে শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হওয়ার পর বন্ধ ছিল শিক্ষার্থীদের নম্বর প্রদান প্রক্রিয়া। ১৪ বছর পর এবার থেকে আবার গ্রেড পয়েন্ট এভারেজের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে বিষয়ভিত্তিক প্রাপ্ত নম্বরও। সাধারণ বোর্ডের মধ্যে পাসের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে যশোর বোর্ড, যেখানে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। ৬৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ নিয়ে সবচেয়ে কম পাস করেছে কুমিল্লা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে বরাবরের মতো এগিয়ে ঢাকা। যেখানে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৮ হাজার ১১০ জন। তবে পাসের হারে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে মাদ্রাসা বোর্ড। যেখানে পাস করেছে ৮৮ দশমিক ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার একযোগে দশ শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি এবং সমমানের আলিম ও এইচএসসি বিএ ও ভোকেশনাল পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। সকালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ফলের অনুলিপি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন। শিক্ষা সচিব মোঃ সোহরাব হোসেইন এবং শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানরা তার সঙ্গে ছিলেন। গণভবনে বসেই প্রধানমন্ত্রী অনলাইনে পরীক্ষার ফল উন্মুক্ত করেন এবং সুনামগঞ্জ ও কক্সবাজার জেলায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর দুপুর ১টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষামন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে সারাদেশের ফল তুলে ধরেন। এ সময় শিক্ষা সচিব ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা উপস্থিত ছিলেন। দুপুর দুটা থেকে পরীক্ষার্থীরা নিজ নিজ শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট অথবা কেন্দ্র থেকে ফল জানতে পারে। মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়েও ফল জানতে পারে তারা। সাফল্যের অনেক ইতিবাচক কারণ, আছে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্কট ॥ শিক্ষার্থীদের আকাশচুম্বী সাফল্য চমকে দিয়েছে সকলকে। পাসের হার, জিপিএ-৫ প্রাপ্তি, ঝরে পড়া কমে যাওয়া থেকে শুরু করে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে সব সূচকেই। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাবলিক পরীক্ষার এই সাফলের পেছনের মূল কারণগুলো কী? খাতা মূল্যায়নকারী শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের অভিমত, সরকার বিশেষত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেয়া পদক্ষেপ শিক্ষার গুণগত মানে পরিবর্তন এনেছে এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে পরীক্ষার আগে এবার ব্যাপকভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো ঘটনাও ভাল ফলের পেছনে কাজ করেছে। অব্যাহত প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা সাফল্যকে অনেকখানি ম্লান করেছে বলেই বলছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই। এছাড়া গত বছর খারাপ ফল করা যশোর শিক্ষা বোর্ডে কঠোর মনিটরিংয়ে শ্রেণীকক্ষে নিয়মিত শিক্ষা নিশ্চিত করা, সৃজননশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, ইংরেজী ও গণিতসহ বিজ্ঞান বিষয়ে ভাল ফল, গ্রেডিং ও সৃজনশীল পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সুস্পষ্ট ধারণা, সহজ প্রশ্ন আর প্রশ্নপত্র বিভ্রাট নিরসনে খাতা মূল্যায়নে সর্বোচ্চ উদারতার ফলেই এসেছে এ সাফল্য। এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ব্যাপক হারে প্রশ্ন ফাঁসের কারণে বেশ আলোচিত ছিল। একের পর এক প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়ে পুরো পরীক্ষাই। ফেসবুক ও ভাইবারে এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডকে। গণমাধ্যমে পরীক্ষার আগেই ফাঁস হওয়া প্রশ্নসহ প্রতিবেদন প্রকাশের পর ঘটনা তদন্তে নামানো হয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরকে (মাউশি)। ঢাকাসহ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা পরীক্ষার এক ঘণ্টা আগে আকস্মিক অভিযানে যান সন্দেহপ্রবণ পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে। যদিও পরীক্ষার আগে ফেসবুক ও ভাইবারে প্রশ্ন ফাঁস বন্ধে ভাল সাফল্য পায়নি কর্তৃপক্ষ। দেখা গেছে, একজন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘প্রতিদিনের মতো আজকের সকাল বেলা প্রশ্ন সবাইকে ফ্রি দিলাম, শুধুমাত্র প্রমাণ দেয়ার জন্য। পরীক্ষার হল থেকে এসে মিলিয়ে নিও। আর যারা আগের দিন ১০,০০০ টাকা দিতে পেরেছো তাদেরকে একদিন আগে এই প্রশ্নটা দিয়েছিলাম। হ্নঅনেকেই বিশ্বাস করতে পারো নাই তাদের কাছে প্রমাণ দেয়ার জন্য দিলাম।’ রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে এভাবেই পরীক্ষার একের পর এক প্রশ্ন ফাঁস করে বিশেষ গোষ্ঠীটি। সরকারের সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, শিক্ষা কর্মকর্তা এমনকি বিটিআরসি কেউই অপরাধীর নাগাল পাচ্ছিল না। পর পর কয়েকটি পরীক্ষা শুরুর আগে সকাল ৯টা থেকে ৯টা ৫ মিনিটের মধ্যে ফেসবুকে মূল প্রশ্নের ছবি তুলে হুবহু প্রশ্ন ছেড়ে দেয়া হচ্ছে, যেখানে ঘোষণা দিয়েই পরপর একই কাজ নির্বিঘেœ করে যাচ্ছে আহমেদ নিলয় নামের একজন। পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগেই ফেসবুকে তার টাইমলাইনে প্রশ্নপত্র পাওয়া যাচ্ছিল। পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে ফেসবুকে প্রকাশ করা প্রশ্নের হুবহু মিলও পাওয়া গেছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক অভিযানে গ্রেফতার হয় অপরাধী নিলয়সহ বেশ কয়েকজন। তাদের দেয়া জবানবন্দীতে বেরিয়ে আসে প্রশ্ন ফাঁসের আরও অনেক তথ্য। যদিও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করে সরকার এখন পরীক্ষা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছে। এদিকে ইংরেজী, বিজ্ঞান, গণিতের মতো বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছে চ্যালেঞ্জিং হলেও এবার এসব বিষয়ে ভাল করেছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও ভাল ফলের পেছনে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি ভালভাবে আয়ত্ত করা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ জোরদার করাসহ আছে আরও বেশ কিছু কারণ। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরের ফলের মান বৃদ্ধির সকল সূচকে ইতিবাচক লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী, উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থী, পাসের হার, জিপিএ ৫, প্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ১০০ ভাগ অনুত্তীর্ণ প্রতিষ্ঠান ও বহিষ্কৃত পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে। এ বছর ১৯টি বিষয়ে ৩৬টি পত্রে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়েছে, গত বছর ১২টি বিষয়ের ২৩টি পত্রে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়েছিল। গত বছরের তুলনায় সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে বিষয় বেড়েছে ৭টি ও পত্র বেড়েছে ১৩টি। ফলের তথ্যগুলো পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য ইতিবাচক উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গৃহীত নানা পদক্ষেপ, শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকগণের অক্লান্ত প্রচেষ্টাসহ সমগ্র শিক্ষা পরিবারের সার্বিক সহযোগিতায় এ অবস্থায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। শিক্ষা পরিবারের সকলকে জানাচ্ছি অভিনন্দন। ফল প্রকাশে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। প্রতিবারের মতো এবারও সম্পূর্ণ পেপারলেস ফল প্রকাশিত হচ্ছে। বোর্ড কর্তৃক সরবরাহকৃত প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ই-মেইল ঠিকানায় নির্ধারিত সময়ে ফল পৌঁছে যাচ্ছে। তাছাড়া এসএমএস ও শিক্ষা বোর্ডসমূহের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে ফল পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের ফল ডাউনলোড করে প্রিন্ট করতে পারবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষায় কৃতকার্য সকল পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের অভিনন্দন। যারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি তাদের হতাশ হওয়ার কারণ নেই। আমি আশা করব তারা নব উদ্যমে পূর্ণ প্রস্তুতিতে আগামীতে আবার পরীক্ষা দিয়ে সফলকাম হবে। এদিকে যশোর বোর্ডের ব্যাপক সাফল্য এবার পাসের হারে প্রভাব ফেলেছে বলে বলছেন কর্মকর্তারা। জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। পাসের হারে সবচেয়ে এগিয়ে যশোর বোর্ড। এই বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। অথচ গতবছর এই বোর্ডের পাসের হার ছিল মাত্র ৪৬ শতাংশ। এবার পাসের হার অনেক বেড়ে যাওয়ার ইতিবাচব প্রভাব পড়েছে পুরো ফলে। ফলের এ অস্বাভাবিক পরিবর্তন নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন তুললে সংবাদ সম্মেলনে তার জবাব দেন বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, গত বছর আমাদের বোর্ডে প্রায় অর্ধ লাখ শিক্ষার্থী একটি বার দুটি বিষয়ে ফেল করেছিল। যারা ফেল করেছিল তারা এবার কেবল ওই বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে প্রায় সকলেই পাস করেছে। ফলে আমাদের বোর্ডের ফল যেমন ভাল হয়েছে তেমনি সার্বিক পাসের হারেও পরিবর্তন এনেছে। তিনি জানান, কেবল ইংরেজীতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী গত বছর ফেল করেছিল। এই সংখ্যাও প্রায় ৪০ হাজার। তারা অধিকাংশই এবার পাস করেছে। ফলে আগের বছরের তুলনায় ফল অনেক বেশি ভাল হয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার জানালেন, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার এবারের ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা প্রমাণিত। কারণ, ফলের বিভিন্ন সূচকেই ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। ইংরেজী, বিজ্ঞান, গণিতের মতো বিষয় শিক্ষার্থীর কাছে চ্যালেঞ্জিং। এ জন্য এসব বিষয়ে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছিল। নানা উদ্যোগ গ্রহণের কারণে ভাল ফল হচ্ছে। খাতা মূল্যায়নে উদার হওয়ার একটা অলিখিত নির্দেশ থাকে বোর্ডগুলোর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা একটা খারাপ প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কখনই এমন নির্দেশ থাকে না বলে দাবি করলেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, এমন কোন নির্দেশ থাকলে সাংবাদিকরা অবশ্যই জানতেন। এ ধরনের কোন নির্দেশনা থাকে না কখনই। কোন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীকে ফেল করার জন্য পড়ায় না। শিক্ষার্থী পাস করার জন্যই পড়ে। শিক্ষার্থী তাদের মেধার জোরেই ভাল ফল করছে। এখনকার শিক্ষার্থী আমাদের সময়ের তুলনায়ও অনেক বেশি জানে। তারা আধুনিক শিক্ষার সকল দিক সম্পর্কে বেশি অবগত। মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ছায়েব উল্ল্যাহ বলছিলেন, আসলে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন এসেছে। সমাজের উচ্চবিত্ত থেকে একেবারে নি¤œবিত্ত পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থী এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেদের সুপ্ত মেধা বিকশিত করতে পেরেছে। সৃজনশীল প্রশ্ন শিক্ষার্থী ভালভাবে আয়ত্ত করতে পারছে। এছাড়াও ইংরেজী, গণিত এবং সৃজনশীল বিষয় সম্পর্কে শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, অভিভাবকদের সচেতনা বৃদ্ধি, পাঠলাভের প্রতি শিক্ষার্থীর আগ্রহ বৃদ্ধি ও বোর্ডের নিয়মিত মনিটরিংয়ের কারণেই ভাল ফল অর্জন হয়েছে। বোর্ডভিত্তিক ফল ঢাকা বোর্ড ॥ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল তিন লাখ ৩৭ হাজার ১৯ ছাত্রছাত্রী। উত্তীর্ণ হয়েছে দুই লাখ ৪৭ হাজার ৮০৬ জন। পাসের হার ৭৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৬৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। এবার ঢাকা বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৮ হাজার ১১০ জন, গত বছর যা ছিল ১৮ হাজার ৮৯৩ শিক্ষার্থী। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্টাডিজ (ডিআইবিএস) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল চার হাজার ৭৩৬ ছাত্রছাত্রী। পাসের হার ৮১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩২৫ জন। দেশের ১৮টি সরকারী কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউটে ডিআইবিএস কোর্স চালু রয়েছে। রাজশাহী বোর্ড ॥ রাজশাহী বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এক লাখ ১৫ হাজার ৭৮০ ছাত্রছাত্রী। উত্তীর্ণ হয়েছে ৮৭ হাজার ৩০১ জন। পাসের হার ৭৫ দশমিক ৪০ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৭৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয় হাজার ৭৩ জন, যা গত বছর ছিল পাঁচ হাজার ২৫০ জন। কুমিল্লা বোর্ড ॥ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এক লাখ আট হাজার ৩৭৩ ছাত্রছাত্রী। পাস করেছে ৬৯ হাজার ৮৯৫ জন। পাসের হার ৬৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৫৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। কুমিল্লা বোর্র্ড থেকে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৯১২ জন, যা গত বছর পেয়েছিল এক হাজার ৪৫২ জন। যশোর বোর্ড ॥ যশোর বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এক লাখ ৩০ হাজার ৫৭২ ছাত্রছাত্রী। পাস করেছে এক লাখ আট হাজার ৯২৯ জন। পাসের হার ৮৩ দশমিক ৪২ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৪৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ। যশোর বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ৫৮৬ জন, গত বছর যা ছিল এক হাজার ৯২৭ জন। চট্টগ্রাম বোর্ড ॥ চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৮৬ হাজার ৭১৬ ছাত্রছাত্রী। পাস করেছে ৫৬ হাজার ১৬ জন। গড় পাসের হার ৬৪ দশমিক ৬০ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৬৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই হাজার ২৫৩ জন, যা গত বছর পেয়েছিল দুই হাজার ১২৯ জন। বরিশাল বোর্ড ॥ বরিশাল শিক্ষা বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৬১ হাজার ৫৩৮ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৪৩ হাজার ১৫৭ জন। গড় পাসের হার ৭০ দশমিক ১৩ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৭০ দশমিক ০৬ শতাংশ। এবার বরিশাল বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৮৭ জন, গত বছর যা পেয়েছিল এক হাজার ৩১৯ জন। সিলেট বোর্ড ॥ সিলেট বোর্ড থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৬৩ হাজার ৯৫৯ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৪৩ হাজার ৮৭০ জন। গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৭৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ। সিলেট থেকে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ৩৩০ জন, গত বছর যা পেয়েছিল এক হাজার ৩৫৬ জন। দিনাজপুর বোর্ড ॥ দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এক লাখ তিন হাজার ৯৬ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৭২ হাজার ৮২৯ জন। গড় পাসের হার ৭০ দশমিক ৬৪ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৭০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। দিনাজপুর থেকে এবার এ জিপিএ-৫ পেয়েছে তিন হাজার ৮৯৯ জন, গত বছর তা পেয়েছিল দুই হাজার ৩৯৫ জন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ॥ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার আলিম পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৮৯ হাজার ৬০৩ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৭৯ হাজার ২০ জন। গড় পাসের হার ৮৮ দশমিক ১৯ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৯০ দশমিক ১৯ শতাংশ। আলিম পরীক্ষায় এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই হাজার ৪১৪ জন, গত বছর তা পেয়েছিল এক হাজার ৪৩৫ জন। কারিগরি বোর্ড ॥ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এক লাখ দুই হাজার ২৪৮ ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৮৬ হাজার ৪৬৯ জন। গড় পাসের হার ৮৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৮৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। কারিগরি থেকে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয় হাজার ৫৮৭ জন, গত বছর তা পেয়েছিল ছয় হাজার ৪৩০ শিক্ষার্থী। এদিকে বিদেশের সাতটি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২৪৮ জন। এর মধ্যে কৃতকার্য হয়েছে ২৩২ জন। গড় পাসের হার ৯৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বিদেশ কেন্দ্র থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৩ জন। পাস ও পূর্ণাঙ্গ জিপিএতে সেরা বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা ॥ এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর ৮৫ শতাংশই বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য বিভাগের। এবার আটটি শিক্ষা বোর্ডে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৯৫০ জন। এর মধ্যে ৪১ হাজার ৪৬৮ জনই বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য শাখার ছাত্রছাত্রী। ফল শীটে দেখা গেছে, পাসের হার ও জিপিএ-৫ উভয় সূচকেই বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য শাখার পরীক্ষার্থী এগিয়ে। এই দুই শাখা থেকে এক লাখ ৯০ হাজার ৮৫১ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ ৫৮ হাজার ৪৭৬ জন। গড় পাসের হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে তিন লাখ তিন হাজার ৩৪২ জন পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৭৯১ জন। গড় পাসের হার ৭৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন চার হাজার ৭৩১ জন। আর মানবিক, ইসলাম শিক্ষা ও সঙ্গীত শাখা থেকে ৫ লাখ ১২ হাজার ৮৬০ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে তিন লাখ ৪৫ হাজার ৫৩৬ জন। পাসের হার ৬৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন দুই হাজার ৭৫১ জন। এই শাখার ফলই সবচেয়ে খারাপ। ফল পুনর্নিরীক্ষা ॥ রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটকের মাধ্যমে আজ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত এইচএসসি ও সমমানের ফল পুনর্নিরীক্ষার আবেদন করা যাবে। ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফি বাবদ কত টাকা কেটে নেয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর (পার্সোনাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বর-চওঘ) দেয়া হবে। আবেদনে সম্মত থাকলে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ণঊঝ লিখে স্পেস দিয়ে পিন নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। প্রতিটি বিষয় ও প্রতি পত্রের জন্য দেড় শ’ টাকা হারে চার্জ কাটা হবে। যে সব বিষয়ের দুটি পত্র (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) রয়েছে সে সব বিষয়ের ফল পুনর্নিরীক্ষার আবেদন করলে দুটি পত্রের জন্য মোট ৩০০ টাকা ফি কাটা হবে।
×