ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভোলায় জোয়ারে বাঁধ ধসে ॥ তিন গ্রাম প্লাবিত

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১৯ আগস্ট ২০১৬

ভোলায় জোয়ারে বাঁধ ধসে ॥ তিন গ্রাম প্লাবিত

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভোলা, ১৮ আগস্ট ॥ নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তাল মেঘনার অতি জোয়ারে পানির চাপে সদর উপজেলার ইলিশা ২ নং ওয়ার্ডের সোনাডগি এলাকার দুটি পয়েন্ট দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সম্পূর্ণ ধসে গেছে। বাঁধের ভেঙ্গে যাওয়া প্রায় ৩০ মিটার এলাকা দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় ৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে বহু পুকুরের মাছ ভেসে গেছে, জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়ে ৫ শতাধিক পরিবার। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত সম্পূর্ণ রূপে মেরামত করতে না পারায় চরম আতঙ্কে রয়েছে এলাকাবাসী। স্থানীয়রা জানায়, বুধবার বিকেলে ভোলার ইলিশা ইউনিয়নের সোনাডগি এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ি বাঁধের দুটি পয়েন্টে প্রায় ১০০ মিটার সম্পূর্ণ ধসে যায়। এতে অতি জোয়ারের পানিতে ৩ গ্রাম প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। এ ছাড়া ওই বাঁধের ৬শ’ মিটার জুরে ১৫ ফুট চওড়া অংশের অধিকাংশ স্থানে ৩ থেকে ৫ ফুট বাঁধেও ধস দেখা দিয়েছে। ওই সব এলাকা ধসে গেলে পানি শহরমুখী হয়ে ধেয়ে আসার আশঙ্কা রয়েছে। বুধবার বিকেল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার ও স্থানীয়রা মাটির রাস্তা দিয়ে বাঁধ সংস্কারের চেষ্টা চালায়। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় কাজ শুরু করেছে। তারা সঠিকভাবে মেরামত করছে না। তাই আবারও জোয়ার এলেই ওই এলাকা প্লাবিত হবে বলে জানান এলাকাবাসী। সরেজমিনে বৃহস্পতিবার দুপুরে সোনাডগি এলাকায় গেলে এলাকার ক্ষুব্ধ বাসিন্ধা আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, বাঁধ নির্মাণের জন্য তিনি জমি দিয়েছেন। মাটি দিয়েছেন। কিন্তু ঠিকাদার গুটি কয়েক লোক দিয়ে কাজ করায় বাঁধ সঠিকভাবে নির্মাণ হচ্ছে না। কলাপাড়ার ৬০ গ্রাম ভাসছে নিজস্ব সংবাদদাতা কলাপাড়া থেকে জানান, পূর্ণিমায় সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর মোহনা রামনাবাদ নদীর ঢেউয়ে লালুয়া ইউনিয়নের তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। ফলে অস্বাভাবিক জোয়ারে এখন ভাসছে লালুয়ার গোটা জনপদ। হাজার হাজার পরিবারে সদ্য রোপণ করা আমনক্ষেত কিংবা বীজতলা, বসতবাড়ি সবকিছু এখন জোয়ারের প্লাবনে ভাসছে। চাল-চুলা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে মানুষ। ভেসে গেছে পুকুরের কোটি কোটি টাকার মাছ। এখন অবস্থা এমন হয়েছে যে বাড়িঘরে বসবাস করাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নের ১১টি গ্রাম এখন বুক সমান পানিতে থৈ থৈ করছে। চারিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও ইউপি মেম্বার মজিবর রহমান বলেন, ‘বাঁধ ভাইঙ্গা সব সাগর অইয়া গ্যাছে।’ চেয়ারম্যান তারিকুজ্জামান জানান, কমপক্ষে চার-পাঁচ স্পটে বাঁধ ভেঙ্গে চারিপাড়া, নয়াকাটা, মুন্সিপাড়া, চৌধুরীপাড়া, বড় পাঁচ নং, ছোট পাঁচ নং, নাওয়াপাড়া, বানাতিপাড়া, হাওলা, ধঞ্জুপাড়া ও পশুরবুনিয়ার মানুষ এখন জোয়ারের পানিতে ভাসছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, এমন পানির চাপ তারা আগে কখনও দেখেননি। একই দুর্দশা মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুরসহ পাঁচটি গ্রামের মানুষ। ধানখালী ও চম্পাপুরের দুর্দশার চিত্র একই। যেন সবকিছু ভাসছে জোয়ারের পানিতে। এছাড়া বেড়িবাঁধের বাইরে কয়েক হাজার পরিবার জোয়ারের দুই দফা প্লাবনে ভাসছে। দুরবস্থার যেন শেষ নেই। উপজেলার ৬০ গ্রাম জোয়ারের পানিতে ভাসছে। রাঙ্গুনিয়ায় বিকল সুইস গেট ॥ দুর্ভোগ নিজস্ব সংবাদদাতা রাঙ্গুনিয়া থেকে জানান, বেতাগী ইউনিয়ন ও পৌরসভার সীমান্তবর্তী কাঙ্গালী শাহ্ মাজার সংলগ্ন কাউখালী খালের উপর দীর্ঘদিন আগে একটি সুইচ গেট নির্মাণ করা হয়েছিল। যাতে এলাকার কৃষক ১২ মাস ধান চাষ করে তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাতে পারে। এটি এখন কৃষকের মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সø্যুইচ গেটটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সারা বছর এর সুফল পেলেও বর্ষা এলেই এলাকাবাসীর গলার কাটা হয়ে দাঁড়ায়। বর্ষা এলেই কর্ণফুলী, পাহাড়ী ও আশপাশের বৃষ্টির পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যা এই সø্যুইচ গেটের ছোট দুই দরজা দিয়ে প্রবাহিত হতে না পেরে আশপাশের কৃষি জমি, পোল্ট্রি ফার্ম ও বাড়িঘরে পানি জমে ব্যাপক ক্ষতির সৃষ্টি করে। এছাড়াও এই খালে প্রাকৃতিকভাবে ডিম ছাড়ে গলদা চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মা চিংড়ি মাছ। পানির স্বাভাবিক গতিরোধের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক এই চিংড়ি প্রজনন হওয়া খালটি। এলাকার বাসিন্দা মোঃ আব্দুল মোনাফ জানান, এই একটি সুইচ গেট নিয়ে আমরা মহা সমস্যায় আছি। পানির তুলনায় এই সø্যুইচ গেটের রয়েছে মাত্র দুটি দরজা। দুই দরজা দিয়ে পানি স্বাভাবিকভাবে যেতে পারে না। দরজা বিকল থাকায় বর্ষাকালে খালে অতিরিক্ত পানি জমে দু’পাড়ের ফসলি জমি ও বাড়ি ঘরে উপচে পড়ে।
×