আলমগীর রেজা চৌধুরী
সভ্যতা গড়ে উঠে টোটেম-টাবুতে-
তুমি সেই লোককন্যা প্রিয় চন্দ্রাবতী
শতাব্দীর উপকথা; তোমাকে বহন করি
প্রতœবীজ টোটেমের ভ্রƒণ,
চর্যারানী কানুপার প্রেম
ঠিকুজি বঙ্গীয় জনপদ, সহস্র দিনরাত্রির বিক্ষুব্ধ মুজিব
প্রেম-দ্রোহে নির্মিত আগুনের পুরুষ।
প্রেম দাও রক্ত দাও, লক্ষ্য- ভূমি ।
আমি যে পথরেখা স্পর্শ করি, নাম একাত্তর।
বাঙ্কারে জাগিয়ে রাখে ট্রিগারে আঙ্গুল
রেসকোর্সের আলোর তর্জনী
টোটেম-টাবুকে ফেলে ইতিহাস-
মানুষ কাব্য, বাংলাদেশ! সাকিন মুজিব।
00 কীভাবে
অনীক মাহমুদ
কীভাবে মেঘের আড়তে জমা হচ্ছে রক্ত
পেজা তুলোর মতো মেঘগুলো রক্তলাল ড্রাগনের শু-ে
দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য
মায়ের হাতে সম্মার্জনী, গৃধিনী শকুনি উল্লাসখোর
নৃমু-ের মালা হাতে বেপরোয়া ভৈরবী ঠাকুর
নিধিরাম সর্দার গলা শুকিয়ে শব্দহীন আস্ফালনে মাতে
কুনঠে বাহে?
আকাশের নদী যায় বয়ে, মন্দাকিনী শ্বাসকষ্টে ঘামায় শরীর
হিন্দা কলজে চিবিয়ে বিজয়ের দুঃস্বপ্ন দেখে!
আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা
চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা
বজ্রযোগিনী গুহ্যতত্ত্বে চর্যার খোলস থেকে কাহ্নপারা যোগাড় করে লজ্জা
হালাকু খান টাইগ্রিস রুদ্ধ করেছিল লোহিত জ্ঞানকণায়
নাদির শাহ দিল্লীর কাষ্ঠমৃত্তিকা ভিজিয়েছিল লোহুর আঞ্জামে
বলিষ্ঠ, সপ্তর্ষির চৌহদ্দি ঝেড়ে ফেলে সৌরপঞ্জিকার গোপন খবরে
প্রমিথিউসের মতো ঠিকঠাক বলে যাও অগ্নির খবর;
অযথাই বিবেকের ঘূণপোকা কৃত্রিম প্রহর
বাড়িয়ে কোনোই লাভ হবে না ক্ষাত্র ডামাডোলে!
কীভাবে মেঘের আড়তে জমা হচ্ছে রক্ত
কীভাবে কানামাছি খেলে দিনরাত্রি নষ্ট মুহূর্ত
ক্লেদ পরিদের বিবিয়ানা সেজে হচ্ছে লয়ের গর্ত
সখা হে, এইবার কানটা খাড়া করো
উৎকর্ণ আত্মার জড়িমায় সমঝে চলো আলোয় আলোয়...
00 রঞ্জিত মৃত্যু মানেই স্বাধীনতা
সুমন রায়হান
বলেছি না আজ কোথাও যাবো না,
এতো করে বললেও সভ্যতা বোঝে না!
সময় কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে বেদনা,
যেতে হলে যাক সবাই...
আমি শুধু আজ জ্যোৎস্নানে যাবো...
সওদাগরের হাটে গেছে চাঁদের মা,
সূর্যমুখীর বুকে হুল ফুটিয়ে
রবিরায় যায়... মহানন্দায়; ডেকো না আমায়
আজ আমার আর কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে নেই।
সভ্যতা হৃদয় বোঝে না।
সন্ত্রাসীর চাদরে ঢেকে গেছে প্রেমকানন!
ইতিহাসে ঢের লেখা আছে আরো;
কিসের এতো হাঁসফাঁস?
আজ ড্রাগনের বুকেই নদীদের বাস।
বুড়িগঙা বাড়ি নেই,
আনন্দের খই ফোটাচ্ছে পরাজয়!
এখন, পুকুরেই ইলিশের চাষ হয়...
মহীরুহির মৃত্যুতে...
মৃত্তিকায় মাথা ঠুকে বলি-
রঞ্জিত মৃত্যু মানেই স্বাধীনতা...
না হয় কে দেয় তবে কবির কল্পনায়-
এমন উচ্ছ্বাসিত প্রেরণা?
00 মাথার উপরের গাছ পড়ে গেছে ঝড়ে
পৃথ্বীশ চক্রবর্ত্তী
মাথার উপরের গাছ পড়ে গেছে ঝড়ে
সে-তো অনেক অনেক আগের কথা, তবে মনে হয়; এই-তো সেদিন
তখন থেকেই ডরে-ভয়ে বেঁচে আছি
সেদিন বাবা গাছের সাথে ধুলায় লুটিয়ে পড়েছিল মা গাছটি
পাঁচ ভাই-বোন গাছেদের তিন-তিনটি ভাই গাছসহ
বিধ্বস্ত হয়েছিল নিকটাত্মীয় গাছ-গাছেরাও
মা-বাবার সবচেয়ে আদরের
ভাই-বোনদের সর্বকনিষ্ঠ ছোট চারা গাছটিও
ভয়াল ঝড়ের কবল হতে সেদিন রেহাই পায়নি
একমাত্র, বোন গাছ দুটিই সেদিন দূরে ছিল বলে বেঁচে গিয়েছিল
এখন, এই বোন গাছ দুটিরই একটি অর্থাৎ বড় দিদি গাছটি
আমাদের মাথার ওপরে কোনমতে ছাতা ধরে আছে
কিন্তু সংশয় মোটেও কাটছে না ভাই!
কারণ, ঐ দিদি গাছটি নিজেই শঙ্কামুক্ত নয়
এখন পর্যন্ত, তাকে চার-চারটি বড় ঝড়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে
সর্বশেষ, ২০০৪-এর ২১ আগস্ট দিদি গাছের ওপর দিয়ে
বয়ে গেছে যে ঝড়টি সেটিকে ‘জঙ্গী ঝড়’ নামে জেনেছিল বিশ্ব
জেনেছিল দেশের মানুষ
ভয়গুলো যদিও সবসময় তাড়া করে ফেরে
তথাপি আশার কথা- দিদি গাছটি এখনও মরে যায়নি
ক্ষত-বিক্ষত হৃদয়ে তার ডাল-পালা নিয়ে, স্ব-মহিমায় আমাদের
মাথার উপরে ছাতা মেলে আছে।
00 একটি বাড়ির ট্রাজিক আবৃতি
সুজন হাজারী
একটি পুরনো বাড়ি মাঝরাতে ঘুম সাঁতারের নেশায় ডুবেছিল
ঘুমভাঙা বজ্রকণ্ঠের ইশারায় নেমে এসেছিল কেবল বেঁচে থাকার
ভৌতিক দৌড়ের পাল্লায় আধখানা জীবন।
পুরনো দেয়ালে ছোপ ছোপ রক্ত মৃত্যুর সংকেত এঁকেছিল জান্তারদল বর্বর বাঁশির সুর বেজেছিল, মরা জোস্নার আলো আঁধারে লেপ্টানো
দুটো মাদী কুকুর শুয়েছিল ঘর বারন্দায়।
ফুলগাছে ফোটা ফুল ক্রমশ নিষ্প্রভ
বাড়িটার একটি ঘরে মেহেদি রাঙা হাতে একটি মেয়ে ফুলের টব থেকে উঠে এসে বলেছিল; দেখো লাল শাড়ি পরে এসেছি-
বসন্তের কথা শেষে ঘনকালো ছায়ায় শ্মশানের পাশে দাঁড়িয়ে অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটি নিচু কণ্ঠে আবার বললো :
এই বড়িটাকে কবিতা ভেবে ভুল করেছো।
নিরিবিলি সন্ত্রাসে বুলেট ঝাঁঝরা দেয়াল বারুদ পোড়া গন্ধ, রাতের প্রহর মাতানো ব্যাকরণহীন শস্যক্ষেত, নিসঙ্গ বাড়িতে
দোপাটির পাতায় মোড়ানো মৃত্যুর দৃশ্যায়ন তরঙ্গচিত্র
মাঝিদের মাছ ধরা আনন্দের অধিক জলের ক্রন্দন।
শিশু হত্যার মর্মন্তুদ চিৎকার নিরিবিলি ঘুমস্বপ্নের ছেঁড়াফাটা
তন্দ্রাচ্ছন্ন এপিটাফ, রহস্যের মিড় ভেঙ্গে পাখিদের কিচির মিচির
রাত পোহানোর আগে ব্রাশফায়ার গুলিবিদ্ধ বঙ্গবন্ধু শহীদ লাশের উপরে উড়ালি গৃধুর শকুনের ডানার নিচে দাঁড়িয়ে কালো
চশমা পরা খলনায়ক নীরবে দেখেছে নৃশংস এ মরণ দৃশ্য।
এ মৃত্যুতে না আমি না রাষ্ট্র না বঙ্গবন্ধু কারু কোন ক্ষতি নেই-
নিহত হয়েছে আদতে বাঙালি।
ভূত প্রেতœীদের মরণ ক্ষুধার যন্ত্রণায় বাঙালির অর্জিত অহঙ্কার স্বাধীনতা কালিমালিপ্ত, মুখে আকিজ বিড়ির ধোঁয়া ছোড়া অন্ধকার বুকে রেখে ধূমপায়ী মোথার আগুন নেভায় পায়ের নিচে চেপে ।
এভাবেই গল্পের পিল্যুড হারিয়ে বুক পকেটে রাখা আয়নায় নিজের
চেহারা দেখলেই বাড়িটার আবৃতি ভুলে থাকি, মাঝে মাঝে হাসিনা
রেহেনা দু’বোনের মুখে শুনি বাড়িটার ট্রাজিক আবৃতি ... ।
শীর্ষ সংবাদ: