ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পোশাক মানুষের ব্যক্তিত্ব বহন করে

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ১৯ আগস্ট ২০১৬

পোশাক মানুষের ব্যক্তিত্ব বহন করে

এখন কি কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছেন? ডিসেম্বরে খাদি ফেস্টিভ্যাল হবে। এখন ওই শো’ এর জন্য কাজ শুরু করেছি। আর আমার নিজের ব্র্যান্ডের জন্য রিসাইকেলিং এবং আপ-রিসাইকেলিংয়ের প্রজেক্ট করছি। এছাড়া বাংলাদেশের ফ্যাশন ইতিহাসের ওপর একটা বই লিখছি। একটা আন্তর্জাতিক স্টুডেন্ট প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশে আঞ্চলিক সমন্বয়কারী হিসেবে আছি। আর একটি মাল্টিন্যাশনাল বায়িং হাউসে ৪ বছর কাজ করছি ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে। বর্তমান সময়ের তরুণদের ফ্যাশন স্টাইল আর ফ্যাশন সচেতনতাকে কিভাবে দেখছেন? বর্তমান তরুণরা বেশ ফ্যাশন সচেতন। তারা ট্রেন্ডকে মাথায় রেখেই স্টাইল করছে। চুলের কাট, ড্রেস, জুতা, ঘড়ি, বেল্ট যাবতীয় কিছুর দিকে তারা খেয়াল রাখছে। তবে সমস্যা হচ্ছে- তাদের মাঝে অন্যকে অনুকরণ করার প্রবণতা খুব বেশি যা দিন দিন নিজের দেশের স্বকীয়তা কমিয়ে দিচ্ছে। আপনার কি মনে হয়? আমাদের ফ্যাশনস্টাইল কোন দিকে যাচ্ছে? আমরা কি আমাদের সংস্কৃতি অনুযায়ী ফ্যাশন ফলো করছি? নাকি এটা এখন অনেকটাই ভারতীয় বা পাশ্চাত্য ফ্যাশনের দিকে চলে গেছে? আমাদের দেশের ফ্যাশনস্টাইল এখন কয়েক দিকে বহমান। কিছু আছে যারা এখনও নিজের সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন এবং দেশীয় স্বকীয়তা বজায় রেখে চলছে। কেউ পুরোপুরি পশ্চিমা ফ্যাশনের দিকে চলে যাচ্ছে। তবে বিশাল একটা গোষ্ঠী যারা ভারতীয় এবং পাকিস্তানী ফ্যাশন দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে আছে। ফ্যাশন পরিবর্তন হয় এবং হচ্ছে। এ কারণে তা এখন পৃথিবীব্যাপী কাজ করছে। অন্য দেশের পোশাক পরা আমি অন্য চোখে দেখি না, তবে অন্য দেশের পোশাকের জন্য নিজের দেশের স্বকীয়তা ভুলে যাওয়া মোটেই ঠিক নয়। সাধারণ মানুষ যা পরতে চাইবে বাজার কিন্তু সেভাবেই সৃষ্টি হবে। আজ যদি আমরা আমাদের চাহিদার বেশিরভাগটা আমাদের নিজেদের থেকেই পূরণ করতে পারি তাহলে বাইরের পণ্য আমাদের বাজারে কোনভাবেই এত রাজত্ব করতে পারবে না। আর এখন ফ্যাশন ডিজাইনাররা ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখেই তাদের পছন্দমতো পোশাক তৈরি করছে দেশীয় উপকরণ দিয়ে। তবে তারা আর আগের মতো নেই। এখন সবাই ফ্যাশনে আন্তর্জাতিক পূর্বাভাস মেনে চলে। যাতে তারা ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করতে পারে। দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে যে ফ্যাশন যায় তা আপনারা কিভাবে প্রমোট করছেন? আমি সবসময় আমার স্বকীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা করি। দেশে এবং দেশের বাইরে এখন পর্যন্ত আমি যত প্রজেক্ট, ফ্যাশন শো আর প্রদর্শনী করেছি সেখানে আমাদের দেশীয় উপকরণ ব্যবহার করেছি। তরুণরা আজকাল ফিউশন পছন্দ করে, বিশেষ করে পাশ্চাত্য পোশাক পছন্দ করে। তাই তাদের কথা চিন্তা করে আমি পোশাক তৈরি করছি যার উপকরণ দেশীয় কিন্তু প্যাটার্ন দেশীয় এবং পাশ্চাত্যের মিশ্রণ। গত বছর বাংলাদেশ ডিজাইন কাউন্সিল থেকে খাদি ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করা হয়। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল খাদিকে ক্রেতাদের মধ্যে নতুনভাবে নিয়ে আসা। খাদি দিয়ে শাড়ি তৈরি করেছি তেমনি জাম্পস্যুটও বানিয়েছি। আমরা চেষ্টা করছি ক্রেতারা যেন ভারতীয় বা পাকিস্তানী পোশাক না পরে দেশীয় পোশাক পরে যার সবকিছুই দেশীয় থাকবে তবে নতুনভাবে নতুন প্যাটার্নে। ফ্যাশন শো-গুলোতে দেশীয় ফ্যাশন কি তুলে ধরা হচ্ছে? দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশের ফ্যাশন শো-গুলো এখনও মডেলভিত্তিক। মানুষ শো’তে ডিজাইনারের ড্রেস দেখার চেয়ে বিনোদনের জন্য শো-গুলোতে আসে। তাই দেখা যায়, বেশিরভাগই এমনসব পোশাক দিয়ে শো করছে যেগুলোতে না আছে কোন থিম না আছে কোন কাজের মান। তারপরও আমাদের ডিজাইন কাউন্সিল এবং কিছু ডিজাইনার যারা শো’তে নিজেদের দেশীয় ঐতিহ্যটাকে বজায় রেখে কাজ করে যাচ্ছি। আমি আশাবাদী একসময় আমাদের দেশে ফ্যাশন শো-গুলো হবে পুরোপুরি পোশাকনির্ভর যেখানে মানুষ আসবে ডিজাইনারের কাজ দেখার জন্য। আর আমি শুধু ক্রেতাদেরই দোষ দেব না। এখানে ডিজাইনার হিসেবে আমাদেরও গুরু দায়িত্ব যে, এমন মানের কাজ করা যেখানে নিজের মূলকে ভুলে না গিয়ে বরং সেই মূল থেকেই তা নতুনভাবে প্রকাশ করা এবং ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো। ফ্যাশন সর্বদা পরিবর্তনশীল। আমার মা ১০ বছর আগে যে পোশাক পরতেন আমি কিন্তু তা পরছি না। আবার ১০ বছর পর আমার বাচ্চারাও তা পরবে না, এটাই ফ্যাশন। তাই শুধু অতীত নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। গবেষণার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। নতুন জিনিস ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। ঈদে নতুন কোন পোশাকের ডিজাইন করছেন কি? আসছে ঈদে কোন কাজ করা হচ্ছে না। আমি অন্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি। তবে খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করব। এখন পর্যন্ত কতগুলো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন? আমি এখন পর্যন্ত চারটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। লন্ডন, বার্লিন, হংকং এবং ভারতে। সামনে নতুন কোন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আছে কি? হ্যাঁ, সামনে নতুন কিছু প্রজেক্ট আছে। তবে আপাতত না বলি। এখনও সময় হয়নি বলার। এখনকার ফ্যাশনের সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে বলুন? বর্তমান ফ্যাশন আগের থেকে অনেক আধুনিক। ডিজাইনার থেকে ক্রেতা সবাই খুব ফ্যাশন সচেতন। পোশাক শুধু কাপড় না, এটা একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব বহন করে। আর বর্তমান তরুণরা নিজের দেশীয় উপকরণ এবং প্যাটর্নে তৈরি পোশাক পরতে পছন্দ করছে।
×