ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যে পোশাক কথা বলে

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১৯ আগস্ট ২০১৬

যে পোশাক কথা বলে

শতবর্ষী আয়ু নিয়ে টি-শার্ট এখনও ফুরফুরে। বরং আয়ু যত বাড়ছে, বাহারও বদলাচ্ছে তার। সেই যে ১৯১৩-তে ইউএস নেভীর জন্য তৈরি ‘রেগুলেন’, পনেরো বছর পর সিয়ার্স কোম্পানি দ্বারা ‘সেইলর শার্ট’ নামে বাজারজাত হয়ে, ‘এয়ার কর্পস গানেরী স্কুল’ নামে ‘লাইফ’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ হবে ১৯৪২-এ তা কে জানত! অথচ, সেই পোশাকই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আজকাল প্রায় সবার শরীরে। কারণ বিচিত্র ডিজাইন আর রঙের ছড়াছড়িতে স্বাচ্ছন্দ্যের বসানাবৃত কেইবা না হতে চায়! আবহাওয়াটা কেমন যেন এখন। গুমোট। কিছুটা মেঘলা, অনেকটা রোদাক্রান্ত। গরম খুব। ফলে, একটু স্বস্তি পেতে টি-শার্টের বিকল্প তো একদমই নেই। জিন্স, গ্যাভার্ডিন কিংবা অন্য প্যান্টের সঙ্গে বেশ মানিয়ে যায় এটা। সঙ্গে, পায়ে ম্যাচিং জুতো। কালো রং যেহেতু অতিরিক্ত তাপ জমিয়ে রাখে, বেছে নিতে পারেন অন্য উজ্জ্বল রংগুলো। যদি হালকা বা সাদা রঙের টি-শার্ট পরেন, সঙ্গে নীল বা ছাই রঙের জিন্স, এমনকি গ্যাভার্ডিন বা সুতি প্যান্ট মানাবে ভাল। খেয়াল রাখবেন, যেন প্যান্ট খুব ফরমাল এবং একই রঙের না হয়। টি-শার্ট সাধারণত একরঙা হয়, চেকও হয়। গোল গলা, ভি, কলারও হয়। হয় আরও বিচিত্র রকমের। একেকটা টি-শার্ট যেন ডিজাইনারের রং-তুলির ক্যানভাস। যেন, প্রেমিকার অবয়ব। সে অবয়বে সংস্কৃতি থাকে, প্রিয় ব্যক্তির ছবি বা উক্তি থাকে, লোগো, রিকশা পেইন্ট, বর্ণমালা, প্রকৃতি, স্বাধীনতা, একুশসহ নানা মোটিফ থাকে। নীল, কালো, ধূসর, লাল, কমলা, সাদা, হলুদ, গোলাপি, মেরুন, ফিরোজাসহ বিভিন্ন রঙের টি-শার্টে যখন জল অথবা তেলরঙের স্কেচ আঁকা হয়, সৌন্দর্য যেন চুইয়ে পড়ে। টি-শার্ট খুব দারুণ মাধ্যম। নিজেকে জানান দেয়ার, ছড়িয়ে দেয়ার। বিপ্লবী চে-গুয়েভারাকে ধারণ করে অজস্র তারুণ্য। আইনস্টাইন, হিটলার, শেখ মুজিবুর রহমানসহ অসংখ্য বিখ্যাতরাও আছেন ধারণের তালিকায়। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শেক্সপিয়র, সত্যজিতসহ বাদ পড়েননি কেউই। ‘টি-শার্ট মিউজিয়াম’ তো সত্যজিত পরিচালিত ‘চারুলতা’ ছবির পোস্টারও রেখেছে তাদের এ বছরের ডিজাইনে! বিটলস, লিংকিন পার্ক, ওয়ারফেজ, এলআরবি ব্যান্ডসহ বিখ্যাত গায়ক জিম মরিসন, জর্জ হ্যারিসন, রবি শংকর, বব মার্লে, মাইকেল জ্যাকসন সবারই দেখা মেলে কারও না কারও গায়ে, টি-শার্টের ক্যানভাসে। বিভিন্নরকম বাণী তো আছেই! আছে কবিতা, প্রতিবাদী কথা, সচেতনতামূলক উক্তি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। আছে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করতে গিয়ে ভাষাগত সমস্যার সমাধান। কী? অবাক হলেন! ধরুন, আপনি হয়ত বাসস্টপেজ খুঁজছেন, কিংবা হাসপাতাল, ল্যান্ডফোন, হোটেল, পানির ট্যাব, ক্যামেরা, জাহাজ, ওয়াইফাই, পাহাড় বা অন্য খুব জরুরী কিছু। কিন্তু, সেটা স্থানীয় লোকদের কিছুতেই বোঝাতে পারছেন না। কী বিপদ! ভাবুন একবার। যদি এমন হয়, আপনার যেটা প্রয়োজন, সেটা বুঝিয়ে দিতে পারছেন টি-শার্টে আঁকা আইকনের মাধ্যমে। ব্যাপারটা কী দারুণ না! এমন ভাবনা থেকেই ‘আইকন-স্পিক’ ধারণাটির প্রবর্তন করেন সুইজারল্যান্ডের জর্জ হর্ন। ৪০টি সার্বজনীন আইকন আঁকা থাকবে টি-শার্টে। যেন লোকজনকে দেখিয়ে দেয়া যায় কী কী প্রয়োজন। টি-শার্ট এখন বিভিন্ন পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়েও বেশ সফল। আজকাল প্রায় সবাই-ই নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের লোগোসমেত টি-শার্ট পরে নেমে পড়েন রাস্তায়। কাউকে কিছুই বলা লাগে না। এমনি এমনিই প্রচার হয়ে যায় পণ্যের। মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী তো ‘ব্যাচেলর’সহ তাঁর বেশকিছু সিনেমার প্রচারে দখল করেছেন টি-শার্টের বুক। এমনকি, ক্রমাগত জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠতে থাকা জুনায়েদ ইভানের গানের দল ‘এ্যাশেজ’ও লুফে নিয়েছে একই রকমের সুযোগ। ব্যাপারটা এমন যে, পুরোটা টি-শার্টজুড়ে ‘এ্যাশেজ’। আর কী চাই ভক্তদের! খুব ভালবাসেন শচীন দেববর্মণ, রাধারমন, লালন! এমনকি অঞ্জন দত্ত, শিলাজিৎ, অনুপম! চাইছেন যেন তাদের ছবি বুকেপিঠে থাকে! কিংবা, নিজেই কোন ডিজাইন করেছেন ইচ্ছেমতো! চাইছেন যেন সব বন্ধুরাও পরুক সেটা! ভাবনার কিছু নেই। ফরমায়েশ দিয়ে বানিয়ে নিন। যেখানে টি-শার্ট প্রিন্ট করে, যেমন, ঢাকার ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটের আজান প্রিন্টিং, চলে যান সেখানে। যেতে পারেন চকবাজার, নীলক্ষেত, মিরপুর, কাঁটাবনের বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেট, আজিজ সুপার মার্কেট, মৌচাক মার্কেটসহ আরও বিভিন্ন জায়গায়। যেতে ইচ্ছে করছে না! কিংবা, পারছেন না যেতে কাজের চাপে! অসুবিধে নেই। মেঘে-রোদে বেলা গড়িয়েছে অনেক। এগিয়েছে প্রযুক্তি। বেড়েছে সহজলভ্যতা। হ্যাঁ, অনলাইনেও পারবেন অর্ডার দিতে। খোলা চোখে তাকিয়ে দেখুন। বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান তো তৈরি হয়েই আছে আপনার জন্য! তারা ফেসবুকে প্রচার করে, নিজেদের প্রসার করে। খরচও হাতের মুঠোয়। প্রতি রঙের স্ক্রিন প্রিন্টের জন্য মাত্র ৫-১০ টাকা। যদি চান পুরো টি-শার্টের খরচই একবারে দেবেন, তাহলে ১০০-৬০০ টাকার মতো লাগবে। তাদের সময় দিতে হবে অন্তত ২-৩ দিন। তাহলেই পেয়ে যাবেন আত্মতুষ্টিতে ভুগতে পারার মতো পছন্দের টি-শার্ট, কথা বলা টি-শার্ট। উৎসবও হচ্ছে কিন্তু টি-শার্ট নিয়ে! শুরুটা ২০০৯-এ। নিয়মিতই হচ্ছে এখন পর্যন্ত। উদ্যোক্তারা ভাবছেন- শুধু ঐতিহাসিক ব্যক্তি বা বিষয়ের দৃশ্যায়নই নয়, বিভিন্ন সামাজিক মেসেজও যেহেতু থাকে টি-শার্টে, বিশ্বায়নও হতে পারে এর মাধ্যমে।
×