ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তিন ছাত্রীকে সাসপেন্ড

মানারাতে পাওয়া গেছে উগ্রবাদী বই

প্রকাশিত: ০৮:২০, ১৮ আগস্ট ২০১৬

মানারাতে পাওয়া গেছে উগ্রবাদী বই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জামায়াতের প্রতিষ্ঠান মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গুলশান ক্যাম্পাসের লাইব্রেরিতে পাওয়া গেছে ধর্মীয় উগ্রবাদ সমর্থনকারী বই। সিলেবাসের বাইরের এসব বই শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হলেও দীর্ঘদিন ধরেই তা লাইব্রেরিতে যতœসহকারে রাখা হয়েছে। বুধবার তিন সদস্যের ইউজিসি প্রতিনিধি দল হঠাৎই পরিদর্শনে গিয়ে এসব বইয়ের অস্তিত্ব পায়। এদিকে জঙ্গী সন্দেহে আটক তিন ছাত্রীকে নিজেদের স্বীকার করে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। বুধবার সকাল এগারোটা থেকে বেলা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত ইউজিসি প্রতিনিধি দল ইউনিভার্সিটিতে অবস্থান করে। ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. আকতার হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন উপ-পরিচালক জেসমিন পারভীন ও উপ-সচিব শাহীন সিরাজ। কমিশনের সদস্য ড. আকতার হোসেন বলেন, রুটিন ওয়ার্কেই আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই। তবে যেহেতু মানারাতের তিন শিক্ষার্থী জেএমবির সদস্য হিসেবে ধরা পড়েছে। তাই আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা তথ্য জানতে গিয়েছিলাম। আমরা শিক্ষকদের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছি। শিক্ষার্থীদের তথ্যও চাওয়া হয়েছে। লাইব্রেরি পরিদর্শন করেছি। উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। নাম প্রকাশ না করে প্রতিনিধি দলের এক সদস্য বলেন, গুলশান ক্যাম্পাসে বিজনেস ও ইংরেজী বিভাগ। ফলে এখানে বিষয় সংশ্লিষ্ট বই থাকার কথা। কিন্তু দুটি র‌্যাকে ধর্মীয় বিষয়ের বই পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ধর্মীয় উগ্রবাদের বইও রয়েছে। লাইব্রেরিতে যেখানে সংশ্লিষ্ট পাঠ্যপুস্তকই অপ্রতুল সেখানে এই বইগুলো সার্বিক প্রেক্ষাপটে গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের মনে হয়েছে, এসব বই থাকলে ছেলেমেয়েরা অন্যদিকে আকৃষ্ট হতে পারে। মানারাত ইউনিভার্সিটির গুলশান ক্যাম্পাসে পড়ালেখা করে ২৫০০ শিক্ষার্থী। আর শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ৭০। তবে ইউজিসির প্রতিনিধি দল এসব শিক্ষকের ৬০ জনই লেকচারার বলে জানতে পেরেছেন। সিনিয়র শিক্ষক নেই বললেই চলে। ইউনিভার্সিটির সায়েন্স ফ্যাকাল্টি মিরপুর ক্যাম্পাসে। সেখানেই ফার্মেসি বিভাগ। ইউজিসি প্রতিনিধি দল শিক্ষার্থীদের আচার-আচরণ যারা জেএমবির সদস্য হিসেবে ধরা পড়েছে তাদের সম্পর্কেও জানতে চেয়েছে। এছাড়াও অন্য কোন শিক্ষার্থীও এই ধরনের দলের সঙ্গে যুক্ত কিনা তা খতিয়ে দেখতে বলেছে। লাইব্রেরিতে কী কী বই আছে তার বিস্তারিত তথ্যও জানতে চেয়েছে। আকতার হোসেন বলেন, আমরা এক/দুই দিনের মধ্যেই পরিদর্শন প্রতিবেদন চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেব। এরপর মানারাত ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে বেশকিছু তথ্য চাওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে তাদের সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ সময় দেয়া হতে পারে। এদিকে জঙ্গী সন্দেহে গ্রেফতার তিন ছাত্রীকে ‘আমাদের ছাত্রী’ স্বীকার করে সাসপেন্ডের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মানারাত কর্তৃপক্ষ। বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়টির গুলশান ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী মনিটরিং সেলের সভায় বহিষ্কারের এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী মনিটরিং সেলের আহ্বায়ক ও ফার্মেসি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. নুরুননাহার রহমান। জঙ্গী তিন ছাত্রী ফার্মেসি বিভাগের ছাত্রী। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তে বেরিয়ে আসা জামায়াতের ১২৭ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তালিকায় আছে এ মানারাত ইউনিভার্সিটির নাম। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জামায়াতের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করে তাতেও আছে এ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণধারদের সঙ্গে জামায়াতের সম্পৃক্তরা প্রকাশ্য। বহুবার জামায়াত-শিবিরের কর্মসূচীতে দেখা গেছে এর কর্ণধারদের। চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির অন্যতম পরামর্শক সাবেক সচিব শাহ আবদুল হান্নান। অন্যতম সদস্য ইসলামী ব্যংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইবনেসিনা ফার্মসিটিক্যালসের এমডি জামায়াত নেতা এ এন এম এ জাহের, বর্তমান উপাচার্য ড. চৌধুরী মাহমুদ হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও একই রাজনীতি করেছেন। একই মালিকানায় মানারাত ইন্টারন্যশনাল স্কুলও আছে জঙ্গীবাদী প্রতিষ্ঠানের তালিকায়।
×