ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৩ নম্বর সতর্কতা ॥ শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে স্পিডবোট ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ

সাগর উত্তাল ॥ ট্রলার ডুবে ১৭ জেলে নিখোঁজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৮ আগস্ট ২০১৬

সাগর উত্তাল ॥ ট্রলার ডুবে ১৭ জেলে নিখোঁজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিম্নচাপ ও পূর্ণিমার প্রভাবে সাগর উত্তাল। উপকূলের চর ও নিম্নাঞ্চল তিন থেকে চার ফুটের অধিক উচ্চতায় জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। কলাপাড়ায় তলিয়ে গেছে ৬০ গ্রাম। সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে চারটি ট্রলার ডুবিতে ১৭ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে তিন শতাধিক যানবাহন। দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা। সমুদ্রবন্দরসমূহকে তিন নম্বর সতর্কতা সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিমি বা আরও অধিক বেগে দমকা অথবা ঝড়োহাওয়া বয়ে যেতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীসমূহের পানি সমতলের বৃদ্ধি আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। নতুন করে দুটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বুলেটিনে বুধবার সন্ধ্যায় জানানো হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে মৌসুমী নিম্নচাপে এবং পরবর্তীতে মৌসুমী গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে বুধবার সন্ধ্যায় গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলের অদূরে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আজ বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে এবং গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। সমুদ্রবন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে ঝড়োহাওয়া বয়ে যেতে পারে। নিম্নœচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিমি বা আরও অধিক বেগে দমকা অথবা ঝড়োহাওয়া বয়ে যেতে পারে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট অধিক উচ্চতার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার বাগেরহাট থেকে জানান, সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে চারটি ফিশিং ট্রলার ডুবির খবর পাওয়া গেছে। আলোরকোল ও নারকেলবাড়িয়া এলাকায় উত্তাল ঢেউয়ে ট্রলার ডুবে কমপক্ষে ২৬ জেলে নিখোঁজ হয়েছেন। এর মধ্যে ১৬ জেলেসহ ‘এফবি অভি’ ও ‘এফবি ভাইবোন’ নামের দুই ট্রলারের নাম জানা গেছে। নিখোঁজ জেলেদের মধ্যে ৯ জনকে অন্য ট্রলারের জেলেরা উদ্ধার করেছে। মঙ্গলবার রাত ও বুধবার সকালে এ ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে বলে ট্রলার মালিক ও জেলেদের সূত্রে জানা গেছে। তবে সুন্দরবন বিভাগ বা কোস্টগার্ড এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেনি। উদ্ধার হওয়া জেলে হাফিজ জানান, প্রচ- ঢেউয়ের আঘাতে তাদের ট্রলারটি ডুবে যায়। আরেকটি ট্রলারের জেলেদের সহায়তায় তারা ৯ জন উদ্ধার হন। নিখোঁজদের মধ্যে সেলিম, মিলন, হাসান, হাসেম, আবুল, মালেক, পনু ও নান্না মিয়ার নাম জানা গেছে। উত্তাল সাগরে টিকতে না পেরে সহস্রাধিক ট্রলার সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী-খালে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে। শরণখোলার সাউথখালীর জেলে গনি হাওলাদার জানান, মঙ্গলবার দুপুর থেকে নিম্নচাপের প্রভাবে সাগরে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। প্রচ- ঢেউ হচ্ছে। বাগেরহাটের পানগুছি, বলেশ্বর, মংলা, ভৈরবসহ সকল নদ-নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। বেড়িবাঁধের বাইরে জেলার অধিকাংশ গ্রাম তলিয়ে আছে। মংলা বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। নিজস্ব সংবাদদাতা আমতলী, বরগুনা থেকে জানান, পূর্ণিমার ‘জো’ ও লঘুচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পায়রা নদীতে ৩ থেকে ৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়ে বুধবার আমতলী ও তালতলীর চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। খেপুপাড়া আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বইছে। এতে পায়রা সমুদ্রবন্দরসহ উপকূলীয় অঞ্চলকে তিন নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বরগুনা পাউবো অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ দশমিক ৯২ মিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে জোয়ারের পানি প্রভাবিত হয়। এতে আমতলী ও তালতলী উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল পানিতে প্লাবিত হয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে বৈরী আবহাওয়ার কারণে বুধবার ফেরি ব্যতীত সকল নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ থাকায় পারাপারের অপেক্ষায় থাকা মানুষের ভিড় বেড়ে যায় উভয় পাড়ে। ফেরিতে যানবাহনের সঙ্গে বিপুলসংখ্যক যাত্রীও পার করাতে বাধ্য হয়। শিমুলিয়া পোর্ট অফিসার মোঃ মহিউদ্দিন জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতেই ফেরি ছাড়া সকল নৌযান বন্ধ রাখা হয়েছে। আবাহাওয়া ভাল হলে আবার চলাচল করবে। নিজস্ব সংবাদদাতা কলাপাড়া থেকে জানান, নিম্নচাপের কারণে অস্বাভাবিক জোয়ারের তা-ব এখন কলাপাড়ার গোটা উপকূলে জলোচ্ছ্বাসে পরিণত হয়েছে। সেই সঙ্গে পূর্বদিকের দমকা ঝড়োহাওয়ায় বিরাজ করছে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া। স্টাফ রিপোর্টার গলাচিপা থেকে জানান, গভীর সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বুধবার সকাল থেকে পটুয়খালীর সব নদ-নদী উত্তাল রয়েছে। উপকূলের নৌবন্দরে জারি করা হয়েছে ২ নম্বর সতর্কতা সঙ্কেত। জোয়ারের প্রভাবে পটুয়াখালীর বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ৩ থেকে ৪ ফুট পানি বেড়েছে। এতে হাজার হাজার ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। নিজস্ব সংবাদদাতা মানিকগঞ্জ থেকে জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা কাজিরহাট নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। বুধবার সকাল ১০টার দিকে নৌ-দুর্ঘটনা এড়াতে গুরুতপূর্ণ এই নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিএ। জানা গেছে, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা কাজিরহাট নৌরুটে ছোট-বড় মোট ৩৫ লঞ্চ চলাচল করে। এর মধ্যে ৪টি ফেরির ফিটনেস না থাকায় স্ব স্ব ঘাটে নোঙর করা অবস্থায় রয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকলেও ফেরির মাধ্যমে লঞ্চযাত্রী পারাপার করা হচ্ছে।
×