ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গানের ভুবনের লিজেন্ড

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১৮ আগস্ট ২০১৬

গানের ভুবনের লিজেন্ড

বাংলা গানের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা। সঙ্গীতের ভুবনে রাজসিক বিচরণ করে আসছেন দীর্ঘদিন। রুনা লায়লা চলচ্চিত্র, পপ ও আধুনিক সঙ্গীতের জন্য বিখ্যাত। তবে বাংলাদেশের বাইরে গজল গায়িকা হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশে তার সুনাম আছে। দীর্ঘদিন বলতে কয়েক বছর বা এক যুগ নয়, গাইতে গাইতেই ৫০ বছর কাটিয়ে দিলেন খ্যাতিমান এ সঙ্গীতশিল্পী। অসাধারণ কণ্ঠের জন্য সারা পৃথিবীতে বাংলাভাষী এবং ভিন্নভাষী সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে তিনি তুমুল জনপ্রিয়। সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে কণ্ঠ দিয়েছেন ১০ হাজারেরও বেশি গানে। তার মধ্যে বাংলা গান ছাড়াও আছে বহু হিন্দী ও উর্দু গান। গানে রুনা লায়লার হাতে খড়ি মাত্র ৬ বছর বয়সে। পাকিস্তানের করাচী শহরের একটি অনুষ্ঠানে তার বড় বোন দিনা লায়লার গান গাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন দিনা লায়লা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বোনের অসুস্থতার কারণে রুনা লায়লাকে সেই অনুষ্ঠানে গান গাইতে বলা হয়। প্রথম সুযোগেই সবাইকে বেশ চমকে দেন ও পুরস্কৃত হন। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতীয় ও পাকিস্তানী চলচ্চিত্রের অনেক গানে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। পাকিস্তানে তার গাওয়া ‘দমাদম মাস কালান্দার’ গানটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। ১৯৬৬-৬৭ সালে পাকিস্তান ফিল্মের গানে খ্যাতির তুঙ্গে নূরজাহান। সে সময় রুনা লায়লার বয়স পনেরো হবে। উর্দু ও পাঞ্জাবি ছবির গানে কণ্ঠ দেয়া সবে শুরু করেছেন। ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানী ছবিতে ‘দাইয়ারে দাইয়ারে দাইয়া’ গানটি গেয়ে করাচী, লাহোর, কোয়েটা, পেশোয়ারে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। ১৯৬৮ সালে ঢাকার সুরকার সুবল দাস রুনা লায়লাকে দিয়ে প্রথম ‘স্বরলিপি’ ছবিতে গান করালেন। গানটি ছিল ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে বলো কী হবে।’ ডুয়েট এ গানের অপর শিল্পী ছিলেন মাহমুদুন্নবী। গানটি সুপার হিট হয়। এই গানই রুনা লায়লার সঙ্গীত জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। ১৯৯৭ সালে রুনা লায়লা নায়িকা হিসেবে ‘শিল্পী’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন আলমগীর। স্বাধীনতার পর নিজস্ব সিদ্ধান্তে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন রুনা লায়লা। ১৯৭৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত রুনা লায়লা ঢাকার সিনেমার বাংলা গানে যে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলেন, সেই সাম্রাজ্য আজ পর্যন্ত কেউ নড়াতে পারেনি। এই শিল্পীর ক্যারিয়ারের ৫০ বছরপূর্তি উৎসবের আয়োজন করেছে লন্ডন প্রবাসী বাঙালীরা। বরেণ্য এই সঙ্গীতজ্ঞকে সম্মান জানাতে ও তার ক্যারিয়ারের পঞ্চাশ বছর উদযাপন করতে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর লন্ডনের রামফোর্ডের দ্য সিটি প্যাভিলিয়নে আয়োজন করা হয়েছে তার একক সঙ্গীত সন্ধ্যা। ‘মেলোডি কুইন রুনা লায়লা ইন লন্ডন’ শীর্ষক কনসার্টে রুনা তার নতুন ও পুরনো জনপ্রিয় গান পরিবেশন করবেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের আরেকজন প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী, যিনি পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন। বাংলা গানের অন্যতম প্রবাদ পুরুষ, জীবন্ত কিংবদন্তি শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী । তার গাওয়া কালজয়ী অনেক দেশের গানই শ্রোতাদের দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করে। বাবার শখের গ্রামোফোন রেকর্ডের গান শুনে সেই কৈশোর জীবন থেকেই সঙ্গীত অনুরাগী হয়ে ওঠেন সৈয়দ আব্দুল হাদী । ছোটবেলা থেকে গাইতে গাইতে গান শিখেছেন। তারপর আর থেমে থাকেননি। নিরন্তর গান করে খ্যাতির শীর্ষে অবস্থান নিয়েছেন। পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে গান গাইছেন তিনি। ১৯৬০ সালে ছাত্রজীবন থেকেই চলচ্চিত্রে গান গাওয়া শুরু করেন সৈয়দ আব্দুল হাদী। তখনকার সিনেমায় প্লেব্যাক মানেই ছিল উর্দু ছবিতে গান গাওয়া। তবে ১৯৬৪ সালে সৈয়দ আব্দুল একক কণ্ঠে প্রথম বাংলা সিনেমায় গান করেন। সিনেমার নাম ছিল ‘ডাকবাবু’। মোঃ মনিরুজ্জামানের রচনায় সঙ্গীত পরিচালক আলী হোসেনের সুরে একটি গানের মাধ্যমে সৈয়দ আব্দুল হাদীর চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু। অসংখ্য জনপ্রিয় গানের নন্দিত কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী । বেতারে গাওয়া তার প্রথম জনপ্রিয় গান ‘কিছু বলো, এই নির্জন প্রহরের কণাগুলো হৃদয় মাধুরী দিয়ে ভরে তোলো’- চমৎকার রোমান্টিক এ গানটি গেয়েছিলেন ১৯৬৪ সালে আবদুল আহাদের সুরে। সালাউদ্দিন জাকি পরিচালিত ঘুড্ডি চলচ্চিত্রে গানে সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন লাকী আখন্দ। এই ছবির খুব জনপ্রিয় গান ‘সখি চল না, সখি চল না জলসা ঘরে এবার যাই’- গেয়েছেন সৈয়দ আব্দুল হাদী। চলচ্চিত্রের কণ্ঠশিল্পী হিসেবেই সৈয়দ আব্দুল হাদীকে সবাই চেনেন-জানেন। তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন। পর পর পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান জীবন্ত কিংবদন্তি শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী । সুরকার আলী হোসেন, আলম খান, আলাউদ্দিন আলী, শেখ সাদী খান, কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন, মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, শাম্মী আখতার, আবিদা সুলতানা, রফিকুল আলম, ফাতেমা-তুজ-জোহ্রা, আসিফ আকবর, নির্মাতা আমজাদ হোসেন, গীতিকার মনিরুজ্জামান মনির, চিত্রশিল্পী হাশেম খান, সাংবাদিক মতিউর রহমান- নিজেদের অঙ্গনে জনপ্রিয় এই তারকারা উপস্থিত হয়েছিলেন একমঞ্চে। তাদের মধ্যমণি একজন- কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী সৈয়দ আবদুুল হাদী। গত ১০ আগস্ট সন্ধ্যায় ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী সেন্টারে গুণী এই মানুষেরা ‘দ্য লেজেন্ড সৈয়দ আব্দুল হাদী’ নামের সঙ্কলিত এ্যালবামের মোড়ক উন্মোচন ও তার ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রের উদ্বোধনী প্রদর্শনী দেখেছেন। নিজেদের বক্তব্যে গুণী এই শিল্পী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন তারা। সেদিন মুক্ত হলো বরেণ্য শিল্পী সৈয়দ আবদুুল হাদীর গাওয়া প্রচলিত ও অপ্রচলিত ৪৬টি গানের চারটি গানের সঙ্কলন। সঙ্গে মুক্তি পেল তার ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র ‘দ্য লিজেন্ড সৈয়দ আব্দুল হাদী। দেশাত্মবোধক, চলচ্চিত্র ও আধুনিক- এই তিন ধরনের গান দিয়ে সাজানো হয়েছে সৈয়দ আব্দুল হাদীর চারটি এ্যালবাম। উল্লেখ্য, ‘সূর্যোদয়ে তুমি’, ‘এমনও তো প্রেম হয়’, ‘যেও না সাথী’, ‘যে মাটির বুকে’, ‘চলে যায় যদি কেউ’, ‘চক্ষের নজর এমনি কইরা’- এমন অনেক কালজয়ী গান উপহার দিয়েছেন সঙ্গীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী। আধুনিক, দেশাত্মবোধক ও চলচ্চিত্রে গাওয়া তার অধিকাংশ গানই গেঁথে আছে ভক্ত-শ্রোতার মনে। অন্যদিকে,মেলোডি কুইন রুনা লায়লা নব্বইয়ের দশকে মুম্বাইয়ে পাকিস্তানের নিসার বাজমির সুরে একদিনে ১০টি করে মোট ৩০টি গানে কণ্ঠ দিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৮৩ সালে রিলিজ হওয়া এ্যালবাম ‘সুপার রুনা’ প্রথম দিনেই ১ লাখ কপি বিক্রি হয়। ফলে এইচএমভি কর্তৃক উপহার পান গোল্ড ডিস্ক।
×