ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাগর কোড়াইয়া

উদার শক্তিময় প্রান্তর

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১৮ আগস্ট ২০১৬

উদার শক্তিময় প্রান্তর

সংস্কৃতিচর্চা একজন মানুষের মধ্যে উন্নত মন-মানসিকতা গড়ে তুলতে সহায়তা করে। মানুষের মধ্যে মানবিকতার যে সুপ্ত বীজ রয়েছে তা গ্রথিত ও প্রথিত হতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে সংস্কৃতি। স্বাভাবিকভাবে আমরা সংস্কৃতিবান মানুষ তাকেই বলে থাকি- যিনি বই পড়েন, গান শোনেন, ভাল সিনেমা-নাটক দেখেন এবং নিজের দেশের ঐতিহ্যকে নিজের মধ্যে লালন করেন। আর একজন মানুষ এই ভাল গুণাবলী চর্চা করার মধ্য দিয়ে অন্তরে ও মননে হয়ে ওঠেন বড় মনের মানুষ। হয়তো অনেকে এই গুণাবলী চর্চা করতে পারেন; কিন্তু কতটুকু সংস্কৃতিবান, তাই বড় প্রশ্ন। কারণ সব শিক্ষিত ব্যক্তিই সংস্কৃতিবান নাও হতে পারে আবার সব সংস্কৃতিবান ব্যক্তিই শিক্ষিত। বর্তমানে বাংলাদেশ তথা সারা পৃথিবীতে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। দেখা যাচ্ছে যারা সংস্কৃতিচর্চা থেকে বহুদূরে অবস্থান করে তারাই সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের দিকে ধাবিত হচ্ছে বেশি। নিজের মধ্যে যে বিবেকবোধ জাগ্রত হওয়ার কথা ছিল; তার বদলে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং নিজের আখের গুছানোতেই তারা ব্যস্ত। যে মানবিকতাবোধ সৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল তার বদলে মানবিকতা ধ্বংসের সংস্কৃতিই বরং গড়ে তুলছে। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদে যারা জড়িত হচ্ছে; তারা বাংলার আলো-বাতাস গ্রহণ করলেও সে বোধ তাদের গড়ে ওঠেনি, গাঁয়ের মেঠোপথ ধরে হেঁটে যায়নি, মায়ের কোলে শিশুর নির্মল-নিষ্পাপ হাসি দেখে তাদের অন্তর কখনও জুড়িয়ে যায়নি। বরং সন্ত্রাসী-জঙ্গী মুখে অট্টহাসি আর ধর্মের মিথ্যা দোহাই দিয়ে মানুষকে হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করে না। মরে গেছে ওদের বিবেকবোধ, ভুলে গেছে মায়ের ভালবাসা। সন্ত্রাসী-জঙ্গীরা সংস্কৃতির স্পর্শ পায়নি। নিজেদের মধ্যে গড়ে তুলতে পারেনি জীবনবোধ। এখন সময় এসেছে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদরূপী এই দানবকে বাংলার মাটি থেকে চিরতরে নির্মূল করার। দেশের প্রতিটি স্থানে তাই গড়ে তুলতে হবে সংস্কৃতির অভয় অরণ্যভূমি। প্রতিটি মানুষ যেন বাংলা সংস্কৃতিতে বসবাস করতে পারে; নিজে সংস্কৃতিতে স্নাত হয়ে অন্যকেও সংস্কৃতির পথে নিয়ে আসতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাঙালীর গর্ব করার মতো একটি উদার সংস্কৃতি রয়েছে। হাজার বছরের এই লালিত সংস্কৃতি আজ প্রচ- শক্তিশালী। কোন দৃশ্য-অদৃশ্য শক্তিই বাংলা সংস্কৃতির মূল ধ্বংস করতে পারবে না। যেহেতু যুগে যুগে উপনিবেশ শক্তির অত্যাচার, শোষণ-শাসন ও দমন-উৎপীড়নে বাংলা সংস্কৃতিই প্রথম প্রতিবাদ করেছিল। তাই এখনও আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস সুস্থ সংস্কৃতিচর্চা পরিবার, সমাজ, দেশ ও বৈশ্বিক সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ দমনে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারবে। সংস্কৃতিই পারবে বাঙালীকে হাতে হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যেতে উন্নত বিশ্বের কাতারে। বনানী, ঢাকা থেকে
×