ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্ত বাণিজ্য ॥ ব্রিটেন লাভবান না ক্ষতিগ্রস্ত

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ১৭ আগস্ট ২০১৬

মুক্ত বাণিজ্য ॥ ব্রিটেন লাভবান না ক্ষতিগ্রস্ত

অবাধ ও মুক্ত বাণিজ্যের দেশ ব্রিটেন। বলা যায় যে একটু ব্যতিক্রমী রকমের উন্মুক্ত। বিশ্বায়নের এই যুগে মুক্ত বাণিজ্যের সুফল যেমন আছে তেমনি আবার বিরূপ প্রভাবও আছে। তবে সেই বিরূপ প্রভাব কাটিয়ে উঠার ব্যাপারে ব্রিটেনের ভূমিকা মোটেই ভাল নয়। তাই বিশ্বায়ন যতটা না ব্রিটেনের ভাল করেছে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে কিনা অনেকের মনে সেটাই প্রশ্ন। অবশ্য এদিক দিয়ে ব্রিটেন যে একা মোটেই তা নয়। তথাপি ব্রিটেনে অভিবাসন বিশেষ করে ইইউ দেশগুলোর অভিবাসনের প্রভাব নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক চলছে। ব্রেক্সিটের আগে ব্রিটেন বাণিজ্য আলোচনা শুরু করায় এই ইস্যুটি মুখ্য বিষয়ে পরিণত হতে পারে। বৈদেশিক বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে সামগ্রিকভাবে ব্রিটেন যে প্রভূত লাভবান হয়েছে সে ব্যাপারে অর্থনীতিবিদরা একমত। ১৯৭৩ সালে ইইউতে যোগদান করার পর থেকে এই সংস্থার সঙ্গে ব্রিটেনের বাণিজ্যের বদৌলতে দেশটির জিডিপি ৮ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইদানীং চীন ও ভিয়েতনামের মতো দেশ থেকে সস্তা পণ্যের আমদানি হচ্ছে ব্রিটেনের মতো দেশগুলোতে। তাতে এসব দেশের ভোক্তারা বেশ সুফল ভোগ করছে। অবশ্য ক্রমবর্ধমান তথ্য-প্রমাণ থেকে দেখা গেছে যে, মুক্ত বাণিজ্যের সুফল সবাই সমভাবে পায় না। মার্কিন অর্থনীতির ওপর এক গবেষণায় দেখা যায় যে, দরিদ্র দেশগুলোর থেকে পণ্য আমদানি প্রতিযোগিতার কারণে স্বল্প দক্ষ জনগোষ্ঠীর আয় অন্তত স্বল্পমেয়াদী বিচারেও কমে যেতে পারে। যেমন চীনা পণ্য আমদানির প্রতিযোগিতার কারণে ১৯৯০ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আমেরিকায় কারখানা শিল্পে কর্মসংস্থান ৪৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আমেরিকার অর্থনীতি বৈদেশিক বাণিজ্যের কাছে যতটা উন্মুক্ত তার দ্বিগুণ উন্মুক্ত হলো ব্রিটেনের অর্থনীতি। অর্ধশতাব্দী ধরে ব্রিটেনের জিডিপি গড়ে ১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাওয়ার পর ২০০০ সাল থেকে দেশটির পণ্য বাণিজ্যের ঘাটতি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বর্তমানে তা জিডিপির প্রায় ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০০১ সালে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় চীনের অন্তর্ভুক্তি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্রিটেনের আমদানি পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদার পাশাপাশি তার কারখানা শিল্পে কর্মসংস্থানে ধস নামে। এক গবেষণায় দেখা যায় ২০০০ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত সময়ে ব্যাপক পরিসরে চীনা পণ্য আমদানির কারণে ব্রিটেনের যেসব শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেসব শিল্পের শ্রমিকদের আয় অন্যান্য শিল্পের শ্রমিকদের তুলনায় কমে গেছে এবং তারা অধিকতর সময় বেকার থেকেছে। শ্রমবাজারের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সামাজিক সমস্যাও দেখা দিয়েছে। যেমন একটি দৃষ্টান্ত হলো ‘মানসিক অসুস্থতা বেড়েছে ১.২ শতাংশ।’ দুর্ভাগ্যবশত বিশ্বায়ন ও মুক্ত বাণিজ্যের এই যন্ত্রণা ব্রিটেনে ভৌগোলিক দিক দিয়ে সমভাবে বণ্ঠিত নয়। বরং তা নির্দিষ্ট কিছু কিছু এলাকায় কেন্দ্রীভূত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এক সূচকে দেখা যায় চীনা আমদানি পণ্যের প্রতিযোগিতার মুখে ব্ল্যাকবার্নের চাইতে দেশের আর কোন এলাকা এত বেশি বিপন্ন নয়। নরদাম্পটন জুতা শিল্পের জন্য বিখ্যাত। এটিও মুক্ত বাণিজ্যের কারণে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বিদেশ থেকে সস্তায় ইস্পাত আমদানির ফলে বিপন্ন হয়ে পড়েছে পোর্ট। ট্যালবটের মতো স্থানগুলোও। ব্রিটেনের যেসব এলাকায় কারখানা শিল্প স্থানীয় অর্থনীতির ২০ শতাংশের কম সেগুলোর তুলনায় যেসব এলাকায় এই শিল্প স্থানীয় অর্থনীতির ২০ শতাংশের বেশি সেখানে বিগত দশকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বেকার থাকা ২৫ বছরের বেশি বয়সীদের সংখ্যা অনেক দ্রুত বেড়েছে। বেকারত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি আঞ্চলিক অসাম্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময় ব্রিটেনের সবচেয়ে ধনী তিনটি এলাকা এবং সবচেয়ে দরিদ্র তিনটি এলাকায় মাথাপিছু উৎপাদনের অনুপাত এক চতুর্থাংশ বেড়ে গেছে। দেশের এক বিশাল এলাকা ব্রিটেনের মোটামুটিভাবে সুস্থ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অঞ্চলের বাইরে। চীনের আমদানি পণ্যের প্রতিযোগাগিতার মুখে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দেয়ার প্রবণতা সবিশেষ লক্ষণীয়। মুক্ত বাণিজ্য নীতি থেকে ব্রিটেন প্রভূতরূপে লাভবান হয়েছে। তবে সেই লাভের ভাগ দেশটি সব অঞ্চলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারেনি। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×