ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অলিম্পিকের স্বর্ণপদকে দৃষ্টি নেইমারের

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ১৭ আগস্ট ২০১৬

অলিম্পিকের স্বর্ণপদকে দৃষ্টি নেইমারের

মারাকানায় ১৯৫০ সালে কেঁদেছিল ব্রাজিল। সেটা ছিল বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে উরুগুয়ের কাছে হেরে। সেই দুঃখ ঘুচাতে পারেনি ফুটবলের দেশ ব্রাজিল ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ আয়োজন করে। সেমিফাইনালে ইউরোপের পাওয়ার হাউজ খ্যাত জার্মানির কাছে সাত গোল খাওয়ার লজ্জায় ১৯৫০ সালের ব্যর্থতাও সেখানে ম্লান। জার্মানির দেয়া গোলের পরাজয়ের মালা ব্রাজিলের ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কলঙ্ক। আর এই মারাকানাতেই ব্রাজিল সময় বুধবার দুপুর ১টায় অলিম্পিক ফুটবলের সেমিফাইনালে নেইমারের ব্রাজিল মোকাবেলা করবে হন্ডুরাসকে। রিও অলিম্পিক গেমসের ফুটবলে সবচেয়ে বড় তারকা যে নেইমার এতে কোন সন্দেহ নেই। অপয়া মারাকানায় নেইমারবাহিনী কি পারবে ব্রাজিলবাসীর মুখে হাসি ফুটাতে? জিততে পারলে সোনার পদকের একবারে কাছাকাছি চলে আসবে গেমসের আয়োজকরা। হেরে গেলে অপয়াই থেকে যাবে ঐতিহাসিক মারাকানা। তবে অলিম্পিক স্বর্ণ পদক জিততে পারলে অন্তত কিছুটা হলেও আক্ষেপ দূর হবে। দক্ষিণ আমেরিকার এই প্রথম অলিম্পিক গেমসের ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করতে পারবে ব্রজিল? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। যদিও বিশ্বকাপ আর অলিম্পিক ফুটবলের মধ্যে বিস্তর ফারাক। বিশ্বকাপ হচ্ছে সেরা তারকাদের মিলন মেলা। আর অলিম্পিক ফুটবল যুবাদের। প্রতিশ্রুতিশীল উঠতি খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া হয় অলিম্পিক টিম। যদিও নিয়ম রয়েছে একটি দলে তিনজন করে সিনিয়র প্লেয়ার খেলানোর। সেমির লড়াই সামনে রেখে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে নেইমার কি বললেন সেদিকে ফেরা যাক। টানা দুই ড্র’র পর ছন্দ ফিরে পেয়েছে দল। ক্রমশ চার ম্যাচে আমরা দুর্গ আটুট রাখতে পেরেছি। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। যদিও সেমিফাইনাল সবার জন্যই চ্যালেঞ্জ। যোগ্যতা প্রমাণ করেই উঠে এসেছে চার দলকে। এখানে কাউকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। প্রতিপক্ষ হন্ডুরাসকে প্রবল প্রতিপক্ষ মেনেই খেলতে হবে। কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচাটা ছিল সবচেয়ে বেশি কঠিন। সুবিন্যস্ত কলম্বিয়াকে হারানোর পর আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে দলের। সেমিফাইনালেও জয়ের ধারায় থাকতে চাই। আমি আশাবাদী মানুষ। আত্মবিশ্বাস থেকেই বলছি, অলিম্পিকের সোনার মেডেলটার দিকেই দৃষ্টি আমার। স্বপ্ন পূরণে জয়ের কোন বিকল্প নেই। সেমিফাইনালের পর ফাইনাল। দুটিতেই জিততে চাই। মুখে চিরাচরিত ইস্পিত হাসির রেখা, নেইমার আরও বললেন, যে কোন পর্যায়ের আন্তর্জাতিক আসরে ব্রাজিলের সময়টা খারাপ যাচ্ছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে অলিম্পিক মেডেলটা আমাদের খুবই দরকার। এর জন্য প্রয়োজন মাত্র দুটি জয়, সেমিফাইনাল আর ফাইনাল। সেমিফাইনালে জিততে পারলে নিশ্চিত পদকে পেয়ে যাব। কিন্তু স্বর্ণ না রৌপ্য, ফয়সালা হবে ফাইনালে। আমি আগেই বলেছি, ব্রাজিলের ফুটবলের দুঃসময় দূর করতে স্বর্ণ পদকের বিকল্প নেই। ওই পদকটাই আমি চাচ্ছি। ২০১৪ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল ব্রাজিল। অলিম্পিক ফুটবলেও সেই ধারা বজায় রেখেছে সাম্বার দেশ। শেষ আটের লড়াইয়ে কলম্বিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে রোজারিও মাইকেলের প্রশিক্ষণাধীন ব্রাজিল। বিশ্বকাপে জুনিগার মারে ছিটকে গিয়েছিলেন নেইমার। অলিম্পিকের কোয়ার্টার ফাইনালেও ব্রাজিলের প্রধান তারকাকে একাধিকবার ‘রাফ এ্যান্ড টাফ’ ফাউল করেছেন কলম্বিয়ার ফুটবলাররা। শুরু থেকেই চোরাগোপ্তা পা চালাতে দেখা গেছে। তবে ম্যাচে দুরন্ত ফ্রি কিক থেকে গোল করে লিড এনে দিয়েছিলেন নেইমার। এটাই প্রতিযোগিতার প্রথম গোল তার। নিজের পারফর্মেন্স ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বার্সিলোনা তারকা বললে, চেষ্টার খামতি নেই। চেষ্টা করেছি ম্যাচ বাই ম্যাচ ভাল খেলার। দলের যেমন ছন্দে ফিরতে কিছুটা দেরি হয়েছে, আমার ক্ষেত্রেও তাই। গোল পেয়েছি। করিয়েছি। একটু বিমর্ষ হয়ে নেইমারের অভিব্যক্তি, মানুষ শুধু গোলটাই দেখতে চায়। গোল করা অবশ্যই নিজের জন্য সুখের। কিন্তু গোল করানোর মধ্যেও তৃপ্তি রয়েছে। আমি দলের জয়ের জন্য খেলি। নিজের দ্যুতি ছড়াতেই কেবল মাঠে নামি না। অন্যকেও ভাল একটা পাস দিয়ে গোল করানোর চেষ্টা করি। তবে প্রথম দুই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইরাকের বিপক্ষে ভাল খেলতে পারিনি আমরা। পর পর দুই ম্যাচে ড্র করার পর বড় একটা শঙ্কা বড় করে। সবাই চেষ্টা করি শেষ ম্যাচটা ভাল ব্যবধানে জিতে যেন কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে পারি। দলের পরিশ্রম কাজে দিয়েছে। ডেনমার্ককে চার গোলে হারিয়ে প্রথম জয়, স্বস্তি এনে দেয়। তারই ধারাবাকিতায় কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে জয়। জয়ের ধারা ফাইনাল পর্যন্ত বজায় রাখতে চাই। উঠে আসার পেছনে রয়েছেন সমর্থকরাও। সেমিফাইনালেও তাদের কাছ থেকে একই রকম সমর্থন আশা করছি। উল্লেখ্য, শেষ চারের অপর লড়াইয়ে জার্মানি মুখোমুখি হবে নাইজিরিয়ার। দলীয় নৈপুণ্য এই মুহূর্তে প্রমাণ করছে অলিম্পিক গেমসের ফুটবলের স্বর্ণপদকের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পরে ব্রাজিল ও জার্মানির। কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানি ৪-০ গোলে দুরমুশ করেছে উড়ন্ত পর্র্তুগালকে। দক্ষিণ কোরিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে হন্ডুরাস। অপর কোয়ার্টার ফাইনালে ডেনমার্ককে ২-০ গোলে হারিয়েছে আফ্রিকার সুপার ঈগল খ্যাত নাইজিরিয়া।
×