ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিজের পরিচয়েই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সিমোন বিলেস

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ১৭ আগস্ট ২০১৬

নিজের পরিচয়েই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সিমোন বিলেস

অলিম্পিকের অন্যতম আকর্ষণের একটি সাঁতারের লড়াই শেষ। পাঁচ সোনার পদক নিয়ে ইতিহাসে অবিসংবাদিত সম্রাটের আসনটা নিজের দখলে রেখে সাঁতারকে গুডবাই জানিয়েছেন মাইকেল ফেলপস। আমেরিকার বিশ্ববিখ্যাত এই সাঁতারুর চমকের রেশ কাটতে না কাটতেই গোটা রিও মেতে উঠেছে বোল্ট ঝলকে। ফেলপসের পর উসাইন বোল্ট। প্রথমজন জলের রাজা। অন্যজন ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের। অলিম্পিকের সেরা আকর্ষণ সাঁতার ও এ্যাথলেটিক্স। আর জনপ্রিয়তার তুঙ্গে সন্দেহাতীতভাবে ফেলপস আর উসাইন বোল্ট। এবারের রিও অলিম্পিকে এ দু’জনই মহাতারকা। ফেলসের পর এখন বোল্ট ম্যাজিক দেখতেই ক্রীড়াপ্রেমীদের উপচে পড়া ঢেউ। কিন্তু দুই বিশ্ববিখ্যাত তারকার মাঝে আরও একজন তারকা রয়েছেন। যাকে বলা হয় জিমন্যাস্টিক্সের ফেলপস। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সিমোন বিলেস, পাঁচবারের বিশ্বচ্যম্পিয়ন বিলেস ঝলকও কম দ্যুতি ছড়াচ্ছে না রিওতে। ইতোমধ্যে তিনটি পদক জিতে যুক্তরাষ্ট্রের পদকের ভা-ারটা সমৃদ্ধ করতে বড় ভূমিকা রাখছেন। আর এ কারণে এই গ্রহের সেরা সেরা মহিলা জিমন্যাস্ট যে তিনিই এমন ধারণা বদ্ধমুল হয়ে গেছে। একের পর এক আন্তর্জাতিক সাফল্য। শেষ পর্যন্ত রিও অলিম্পিকের আসরে তিনি কত সোনার পদক গলায় ঝুলিয়ে ফিরবেন তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। তিনটি তো হয়েই গেছে। অবশিষ্ট রয়েছে আরও দুটি। জিমন্যাস্টিক্সের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ইভেন্টের নাম হচ্ছে ভল্ট। তৃতীয় স্বর্ণ পদকটি জিতেছেন তিনি এই ইভেন্টে ভারতের দীপা কর্মকারকে কাঁদিয়ে। প্রথম সোনার পদকটি তার অলরাউন্ড ফাইনালের। মাঝেরটি ফ্লোর এক্সারসাইজের। এটি তার সবচেয়ে প্রিয় ইভেন্ট। এই বিষয়ের সোনা জয়ীকে শুধু অবিসংবাদিত সেরা হিসেবে মেনে নেয়া হয়, তাই নয়। গোটা দুনিয়ার কাছে তিনিই বিশ্বসেরার মর্যাদায় ভূষিত। জিমন্যাস্টিক্সে আরও দুজন নারী তারকা আছেন। তারা বিলেসের স্বদেশী এ্যালি রেইসম্যান ও রাশিয়ার আলিয়া মুস্তাফিনা। কিন্তু বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ বা অলিম্পিক আসরে শত চেষ্টা করেও তারা ধরতেই পারছেন না এই কৃষ্ণকলিকে। সিমোনের ইভেন্টে তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয় রৌপ্য বা ব্রোঞ্জ নিয়ে। প্রসঙ্গত, গত ২০ বছরে এই ১৯ বছর বয়সী কৃষ্ণকন্যাই একমাত্র মেয়ে যিনি অলরাউন্ডে বিশ্বচ্যাম্পিয়শিপে সোনার মেডেল জেতার পর অলিম্পিকেও ভিক্টোরি পোডিয়ামের সবচেয়ে উঁচু ধাপটায় দাঁড়িয়ে পড়তে পারলেন। ইতোমধ্যে তিনটি স্বর্ণপদক জিতে ব্রাজিল সময় সোমবার রাতে আকাশ ছুঁয়ে ফেলার পর বলেছেন, যারা আমাকে উসাইন বোল্ট বা মাইকেল ফেলপসের সঙ্গে তুলনা করেন তা ঠিক না। আমি বোল্ট বা ফেলপস নই। সবার আগে আমিই, নাম আমার সিমোন বিলেন। আমি মোটেই বোল্ট বা ফেলপসের মতো সেলিব্রিটির কেউ নই। আমার কাছে আমিই পুরনো সিমোন বিলেসই। এবারের অলিম্পিকে তিন স্বর্ণ জেতা হয়ে গেছে। নিজের কাজ ঠিকঠাকভাবে করতে পারছি বলেই মনে করি। যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে জন্মগ্রহণকারী সিমোন বিলেসের জিমন্যাস্টিক্সের হাতে খড়ি মাত্র দশ বছর বয়স থেকে। অলিম্পিক খেলছেন এবার নিয়ে টানা তিনটি। আট বছর আগে বেজিং অলিম্পিকে তিনি ছিলেন সবচেয়ে কম বয়সী ক্রীড়াবিদ। জীবনের প্রথম অলিম্পিকেই বাজিমাত করেছিলেন পাঁচ পদক গলায় ঝুলিয়ে, যার মেধ্যে দুটি স্বর্ণপদক। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। অলিম্পকের আসরের বাইরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের সোনার তৈরি পদকগুলো যেন তার জন্যই অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকেন। ব্যত্যয় ঘটছে না রিওতেও। অসাধারণ মনের মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের এই কিশোরী। এই বয়সে এত সুবিন্যস্ত যার ক্যারিয়ার তিনি কিনা বলছেন, আমি সেলিব্রিটি নই। নিজেকে একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে ভাবতেই বেশি পছন্দ করি। কারও সঙ্গে তুলনা বা নিজেকে বড় কিছু ভাবা আমার ভাল লাগে না। পশ্চিমাবিশ্বে জিমন্যাস্টিক্সের অনেক কদর। কিন্তু আমাদের উপমহাদেশে এই খেলার চর্চা খুবই কম। নিজেকে তারকা না ভাবলেও সিমোন যে বিশ্ব জিমন্যাস্টিক্সের নামী সম্রাজ্ঞী এতে কোন সন্দেহ নেই। দারুণ মজার এই খেলায় বিলেস যখন তার ইভেন্টের দৌড় শুরু করেন, অলিম্পিক পার্কের ইনডোর মুখরিত হয়ে উঠে করতালিতে। আর তার নজর কাড়া শরীরিক কসরতে মুগ্ধতার দ্যুতি ছড়িয়ে দেয় দর্শক হৃদয়ে। শূন্যে লাফিয়ে বার কয়েক ডিগবাজি, আর আঁকাবাঁকা হয়ে ম্যাটে নেমে পরার মুহূর্ত সত্যিই চোখ ধাঁধানো। যা অল্প বয়সেই তাকে উঠিয়ে দিয়েছে বড় তারকার মঞ্চে। তবু নেই কোন অহঙ্কার। আর এ কারণে নিজের পরিচয়েই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন সিমোন বিলেস।
×