ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এবার ২০০ মিটারে হ্যাটট্রিক পূরণের অপেক্ষায় ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের মহানায়ক

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ১৭ আগস্ট ২০১৬

এবার ২০০ মিটারে হ্যাটট্রিক পূরণের অপেক্ষায় ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের মহানায়ক

প্রবাদ অছে, প্রতিভা কখনও ঝঁকে ঝাঁকে জন্মায় না। সময়ের বিবর্তনে তারা আসেন কালেভদ্রে। আর এ কারণে তারা ক্ষণজন্মা। উসাইন বোল্ট তাদেরই একজন। ছোট্ট দেশ জ্যামাইকাকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করে তুলতে তার ভূমিকা অপরিসীম। ফ্রান্স বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলে জ্যামাইকা যে পরিচিতি পেয়ছিল। সেটা মানুষ ভুলে গেছে। স্মরণ রাখার মতো কিছুই করতে পারেনি ফুটবলে জ্যামাইকা। কিন্তু ছয় ফুট পাঁচ ইঞ্চির বোল্ট পেরেছেন তার দু’পায়ের জাদুতে। শত বছরের ইতিহাস তো তার নামেই লেখা হয়ে গেছে। যা কোনদিন ভুলার নয়। আরেকজন বোল্ট পৃথিবীতে জন্ম নিলেও ইতিহাসের অঙ্গ হয়ে থাকবেন উসাইন। একশ’ মিটারের হ্যাটট্রিক তো হয়েই গেল। এবার পালা ২০০ মিটার স্প্রিন্ট। রবিবার যে রেকর্ড গড়লেন তা ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের আরেক কিংবদন্তি কার্ল লুইসের দখলে নেই। লুইস টানা দুইবার ১০০ মিটারে অলিম্পিক স্বর্ণপদক জিতেছিলেন। কিন্তু নিজের প্রথম ইভেন্টের ফাইনাল জিতে লুইসকে ছাপিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আরও দুটি ইভেন্টে স্বর্ণপদকের হুঙ্কার দিয়ে রাখলেন জ্যমাইকার গতিদানব উসাইন বোল্ট। এখনও বাকি ২০০ মিটার ও ৪ল্প১০০ মিটার রিলে রেস। এ দুটোতেও স্বর্ণ জিতলে কী নামে ডাকবেন সেই কীর্তিকে? উত্তর সহজ, ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের মহনায়ক তিনি ছাড়া পৃথীবিতে আর কেউ নেই। অতীতেও না, বর্তমানেও তার সমক্ষ কেউ নেই। বেজিং থেকে লন্ডন হয়ে রিওতে সাক্ষী হয়ে গেলেন ইতিহাসে। যে কথা, সেই কাজ। ঠিকই হ্যাটট্রিক করেই বসলেন বোল্ট সুযোগ সন্ধানী গোলদাতার মতো। এখন আরও দুটি হ্যাটট্রিকের হাতছানি তার সামনে। এমনিতেই ১২০ বছরের অলিম্পিক ইতিহাসে এমন অভাবনীয় কীর্তি কখনও দেখা যায়নি। রিওতে ১০০ মিটার জিতে ব্রাজিল সময় রবিবার রাতে যেমনটা করলেন জ্যামাইকান তারকা। সর্বকালের সেরা এ্যাথলেট হিসেবে প্রশ্নাতীত ছাপ রেখে দিলেন তিনি। ১০০ মিটারের চার নম্বর লেনে তখন প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিন গ্যাটলিন। নিজের লেনে স্থবির হয়ে ‘বিদ্যুৎ বোল্ট।’ স্টর্টিং ফায়ারের আওয়াজ কানে যেতই তরিৎ গতিতে লেন ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন তিনি। না, বোল্ট নয়, গ্যাটলিন। নিজের ক্যারিয়ারে মাদক সেবনের জন্য যাকে ট্র্যাক থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল দু’বার। এদিন দর্শকদের অবাক করে প্রথম ৫০ মিটারে এগিয়ে রইলেন গ্যাটলিন। প্রায় এক মিটার পেছনে ছিলেন বোল্ট। কিন্তু ‘ওস্তাদের শেষ মার দেয়া তখনও বাকি। গতি বাড়িয়ে গ্যাটলিনকে ছুঁয়ে তো ফেললেনই। বাকি ৫০ মিটারে নিজেকে এতটাই ছাপিয়ে নিয়ে গেলেন যে, ১০০ মিটারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক আকর্ষণীয় ইভেন্টেও ফটোফিনিসিং দূরের কথা। উল্টো হেসে খেলে গোল দিলেন বোল্ট। ফুটবল-হকিতে যে রেওয়াজ সেই হ্যাটট্রিক পূরণ করে ফেললেন আয়েশে। ফিনিসিং লাইনের আগেই বুক চাপড়ে নিজের স্বর্ণপদক জয়ের ঘোষণাও দিয়ে দিলেন নিজেই। যদিও নিজের গড়া বিশ্ব রেকর্ড ৯ দশমিক ৫৮ সেকেন্ড ছুঁতে পারেননি। হয়নি ৯ দশমিক ৬৩ সেকেন্ডের অলিম্পিক রেকর্ডও। কিন্তু তাতে কী? ততক্ষণে অলিম্পিকের সেরার সেরাদের তালিকায় নিজেকে অনেক উচুঁতে নিয়ে গেলেন বোল্ট। এই সাম্রাজ্যটা আরও বিস্তৃত করতেই এখন প্রস্তুত তিনি। তবে মানতে হবে বয়স বেড়েছে। আগের সেই বোল্টে যেন কিছুটা ‘লোড শেডিং।’ যার জলন্ত প্রমাণ নিজের রেকর্ড ছুঁতে না পারা। এ বিষয়ে বোল্ট কি বলছেন? আমিও তাই মনে করছি। সাফল্যের পেছনে বয়স একটা বড় ফ্যাক্টর। এ কারণেই ভাবছি আর নয়। অনেক হয়েছে। পয়মন্ত সময়টার মাঝেই সড়ে দাঁড়াতে চাই। পরবর্তী অলিম্পিকে আরও বয়স বাড়বে। তখন আমি নাও পারতে পারি। কাজেই বাজে সময়ে নয়। সঠিক সময়ে বিদায় বলতে প্রস্তুত। তবে রিওতে আরও যে দুটি ইভেন্ট রয়েছে সে দুটি শেষ করি। আমার মাথায় এই মুহূর্তে এটাই ঘুরপাক খাচ্ছে। তিনটিতেই ‘ট্রিপল’ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে রিও এসেছি। মাথার ওপর আরও দুটি চাপ রয়ে গেছে। একটির সমাধান মিলবে আগামীকাল, ব্রাজিল সময় ১৮ আগস্ট। এই দিনটাও যে স্মরণীয় করে রাখতে স্বর্ণপদক আমার চাই-ই চাই। অটুট মনোবল আর আত্মবিশ্বাস প্রমাণ করছিল ২০০ মিটারের পদকটা যেন ইতোমধ্যে ঝুলিয়ে নিয়ে নিয়েছেন। গেমস ভিলেজে এদিন বোল্টকে আরও উজ্জ্বল মনে হচ্ছিল। নির্ধারিত সিডিউল অনুয়ায়ী সময় দিলেন তাবত বিশ্বের ক্রীড়া সাংবাদিকদের। যারা রিও এসেছেন অলিম্পিক কাভার করতে। মুখে হাসির রেখা, চিরাচরিত বিনয়ী আচরণ। একের পর এক আবদার মিটিয়ে গেলেন প্রায় চল্লিশ মিনিটের খোলামেলা আলোচনায়। প্রাণবন্ত বোল্ট-২০০ মিটার স্প্রিন্টের স্বর্ণপদক গলায় ঝুলিয়ে হিমালয়ের চেয়েও উঁচু কিছু থাকলে সেখানে নিয়ে যেতে চান। যেখান থেকে তাকে আর কেউ নামাতে পারবেন না। কারণ বোল্টের রেকর্ড ছুঁতে আগামীর তারকা এই মুহূর্তে বিশ্বের কোথাও নেই। ফলে তিনিই হয় তো ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের অবিসংবাদিত সম্রাট হিসেবেই বেঁচে থাকবেন। অলিম্পিক, বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ এলেই মানুষ তার কথাই বলবে হয়ত অনন্তকাল। প্রসঙ্গত, ১০০ মিটারের ফাইনালের সময় নিয়ে গোসসা করেছিলেন বোল্ট। এটা যে তাকেই মানায় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেমিফাইলের পর এক ঘণ্টা পঁচিশ মিনিটের মধ্যেই ফইনাল, ক্লান্তি তখনও শতভাগ দূর হওয়ার কথা নয়। শরীরের ঘাম শুকাতে না শুকাতেই আবার লড়াই। তাও স্বপ্নের পদকের। আয়োজকদের এই অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছিলেন বোল্ট প্রকাশ্যেই, খোদ প্রেস কনফারেন্সের মঞ্চে বসে। বলেছিলেন এমন নজির বিশ্বমানের আসরে কখনও দেখিনি। তবে ২০০ মিটারের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে না। সেমিফাইনালের পরের দিন মূল লড়াই। অর্থাৎ ফাইনাল। বোল্টভক্তরা এখন সেটা দেখতেই মুখিয়ে।
×