ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পের আলোয় উদ্ভাসিত বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৭ আগস্ট ২০১৬

শিল্পের আলোয় উদ্ভাসিত বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অসংখ্য ক্যানভাসে চিত্রিত হয়েছে বন্ধুপ্রতীম দুই দেশের সম্পর্কের বয়ান। প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনেতারা থেকে শুরু করে চিত্রপটে ঠাঁই পেয়েছেন কবি-সাহিত্যিকরা। রং-তুলির আঁচড়ে মূর্ত হয়েছে উভয় দেশের ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আর এভাবেই শিল্পীদের সৃজিত শিল্পকর্মে উদ্ভাসিত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এ বিষয়ের উপজীব্য ৫১ জন চিত্রকরের আঁকা ৫১টি চিত্রকর্ম এখন শোভা পাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে। ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ আয়োজনে মঙ্গলবার শুরু হয় এ বিশেষ প্রদর্শনী। চিত্রপটে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে হাজির হয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশাপাশি দেখা মেলে মহাত্মা গান্ধী, ইন্দিরা গান্ধীসহ দুই দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের মহানায়কদের। ব্যক্তির সঙ্গে উঠে এসেছে দুই দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শনের ছবি। এ প্রদর্শনী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ চিত্র-প্রতিযোগিতা। তাতে অংশ নেন বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী। এই চারুশিক্ষার্থীরা গত ৩ দিন ধরে ছবি এঁকেছেন চারুকলা প্রাঙ্গণে। ছবির বিষয় ছিল বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্ব। প্রদর্শনীর জন্য সবাই একটি করে ছবি এঁকেছেন। সেসব ছবি থেকে বিচারকরা বাছাই করেছেন ৫১টি চিত্রকর্ম। দ্বিতীয় পর্যায়ে এই ৫১টি ছবি থেকে নির্বাচন করা হয় সেরা তিনটি চিত্রকর্ম। বিজয়ী তিন শিল্পীকে দেয়া হয় পুরস্কার। পাশাপাশি নির্বাচন করা হয় সম্মাননা পুরস্কারের জন্য ৫টি চিত্রকর্ম। সেসব ছবির শিল্পীরাও পান পুরস্কার। প্রতিযোগিতায় ছবি এঁকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ৩ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে প্রথম পুরস্কার পান আরাফাত করিম, দ্বিতীয় পুরস্কার পান শেখ ফায়জুর রহমান ও তৃতীয় পুরস্কার পান অজয় স্যানাল। পুরস্কার হিসেবে তারা পান যথাক্রমে- ১ লাখ টাকা, ৭৫ হাজার টাকা ও ৫০ হাজার টাকা। সঙ্গে তিনজনকেই দেয়া হয় ক্রেস্ট ও সনদপত্র। এছাড়াও সম্মাননা পুরস্কার পান ৫ তরুণ শিল্পী। পুরস্কার হিসেবে তারা প্রত্যেকে পান ১০ হাজার টাকা ও সনদপত্র। মঙ্গলবার উদ্বোধনী দিনে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, এ চিত্রকর্ম প্রদর্শনীটি আসলে বাংলাদেশ-ভারতের নিবিড় বন্ধুত্বের এক দারুণ নিদর্শন। বাংলাদেশের এই তরুণ চিত্রশিল্পীদের আরও বেশি সমর্থন দিতে হবে, উৎসাহ দিতে হবে, যেন তারা সামনে আরও অনেক সৃজনশীল কাজে উদ্বুদ্ধ হয়। তিনি জানান, ঢাকার বারিধারায় নবনির্মিত দূতাবাস ভবন উদ্বোধনের পর প্রদর্শনীর চিত্রকর্মগুলো সেখানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে। প্রদর্শনীর উদ্বোধনের পরই শিল্পরসিকের আগমনে জমাট বাঁধে ১ ও ২ নম্বর জয়নুল গ্যালারি। বরেণ্য চিত্রশিল্পীদের সঙ্গে ছিল শিল্পসমালোচক, শিল্প-সমঝদার, শিক্ষার্থীসহ সংস্কৃতি অঙ্গনের নানা শ্রেণীর মানুষ। প্রদর্শনীর প্রথম পুরস্কার পান ‘উই শ্যাল ওভার কাম’ শিরোনামের চিত্রকর্মটি। তাতে দেখা যায়, দুই দেশের সীমান্তে প্রতিবন্ধক নয়, বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে সীমান্ত পিলার। কাঁটাতার যদিও দৃশ্যমান, কিন্তু ভেতরে প্রবাহিত দুই দেশের আত্মার প্রতিমাও। চিত্রকর্মটির শিল্পী আরাফাত করিম বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারত একই ভূখ-ের দুটি প্রতিবেশী দেশ। লাকী আখন্দের চিকিৎসা সহায়তায় কনসার্ট ॥ অনেক পরিচয়কে ধারণ করা এক শিল্পী লাকী আখন্দ। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া এই কীর্তিমান মানুষটি একাধারে কণ্ঠশিল্পী, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। ‘আমায় ডেকো না’, ‘এই নীল মনিহার’, ‘মামনিয়া’, ‘আগে যদি জানতাম’- এমন অসংখ্য গান গেয়ে শ্রোতানন্দিত এই কিংবদন্তি শিল্পী। হƒদয় ছুঁয়ে যাওয়া অসংখ্য গানের এই স্রষ্টা এখন ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে। আর সেই জীবনযুদ্ধে তার পাশে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তরুণ সমাজ। নিজেদের সুরেলা ভালবাসার অর্ঘ্য দিয়ে সংগ্রহ করছেন অর্থ, যা ব্যয় করা হবে লাকী আখন্দের চিকিৎসা সহায়তায়। মঙ্গলবার ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ব্যান্ড সোসাইটির আয়োজনে শুরু হয়েছে দুই দিনের কনসার্ট ‘ট্রিবিউট টু স্যার লাকী আখন্দ’। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ কনসার্টে প্রথম দিনে অংশ নিয়েছে ১৫টি ব্যান্ড। আজ বুধবার লাকী আখন্দের জন্য গান গাইবে আরও পনেরোটি ব্যান্ড দল। কোন বক্তৃতা ছাড়াই সকালে শুরু হয় কনসার্ট। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কালচারাল সোসাইটির শিল্পীরা কণ্ঠে তুলে আনেন লাকী আখন্দের গান। গভীর মমতায় তারা গেয়ে উঠেন- ‘চলো না ঘুরে আসি অজানাতে...যেখানে নদী এসে থেমে গেছে’। মিলনায়তনে গিটার, ড্রাম, বাঁশি, খঞ্জনি দিয়ে দেশীয় সুরের সঙ্গে পাশ্চাত্যের সুরের মিশেলে ভাললাগার অনুভূতি ছড়িয়ে যায় শ্রোতার মাঝে। তারুণ্যের আবেগমাখা কণ্ঠ ভরিয়ে দিচ্ছিল লাকী আখন্দকে। মাত্র ৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ যে যত অর্থ সহায়তা করতে পারেন- এ ঘোষণায় সারিবদ্ধভাবে শ্রোতারা ভিড় জমাতে থাকেন টিএসসি মিলনায়তনে। জমে যাওয়া কনসার্টে বিকেলে টিকিটের সর্বনিম্ন মূল ধার্য করা হয় ৩০০ টাকা। এছাড়াও ১৮ জন স্বেচ্ছাসেবক সহায়তার ডাক নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় এলাকার চর্তুদিক। প্রথম দিনের মূল আর্কষণ ছিল জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ও অভিনেতা তাহসানের দল তাহসান এ্যান্ড দ্য ব্যান্ড। এই ব্যান্ড দলটি মঞ্চে আসে রাত আটটার পর। নিজের জনপ্রিয় কয়েকটি গানের সঙ্গে লাকী আখন্দের গানও পরিবেশন করেন তাহসান। এছাড়াও এই শিল্পী তার অটোগ্রাফ দেয়া দুইটি টি-শার্ট নিলামে তোলেন। আগামী দুই দিন ফেসবুকের মাধ্যমে নিলাম চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন আয়োজনের অন্যতম উদ্যোক্তা আব্দুল্লাহ আল ইমরান। তিনি জানান, সর্বোচ্চ দুই দরদাতা টি-শার্টটি পাবেন এবং তাহসানের সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগও থাকছে। প্রথম দিনে টিকিটি বিক্রি ও মানুষের সহায়তা মিলে এক লাখ টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব হবে বলে আশা করেন তিনি। আজ বুধবার দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে নিজেদের পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে উঠবে ব্যান্ড দল এভোয়েড রাফা, ওল্ড স্কুল, চাতক, অর্জন, অজ্ঞাতনামা, আপেক্ষিক, নিউ সোনার বাংলা সার্কাস, অর্ব অব উইন্টার, এ্যাক্রিড, ঢাকা ১২০৭, রোদ, ইকুয়েশন, রেডিয়েশন ইত্যাদি। ব্যক্তিগতভাবে কেউ লাকী আখন্দকে আর্থিক সহায়তা পাঠাতে চাইলে তা তার ব্যাংক হিসাবে পাঠানো যাবে বলে জানিয়েছেন তার মেয়ে। লাকী আখন্দের ব্যাংক হিসাবের নম্বরগুলো হচ্ছেÑ ডাচ্ বাংলা ব্যাংক : ১৬২.১০১.১৩৭৩৫৯; উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড : এস বি ১৪৭৬ এবং ব্যাঙ্কক ব্যাংক, থাইল্যান্ড : ১১৩.৪.৯১৮৬৮.৭।
×