ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কর্ণফুলী তীরের ২১৮১ অবৈধ স্থাপনা অপসারণের নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৭ আগস্ট ২০১৬

কর্ণফুলী তীরের ২১৮১ অবৈধ স্থাপনা অপসারণের নির্দেশ

মোয়াজ্জেমুল হক/হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ব্যাপক নাব্যতা হ্রাস ও অবৈধ দখলে কর্ণফুলী নদীর অবস্থা যখন বেহাল পর্যায়ে চলে গেছে ঠিক তখনই হাইকোর্ট দেশের ব্যবসা বাণিজ্য তথা অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই নদী সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন। এতে নদীর দুই তীর থেকে ২১৮১ অবৈধ স্থাপনা অপসারণেরও নির্দেশ রয়েছে। বিচারপতি মোঃ রেজাউল হাসান ও বিচারপতি কাশেফা হোসেনের ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করেন। জনস্বার্থে কর্ণফুলী নদী সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে এ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করার পর শুনানি শেষে এ নির্দেশনা প্রদান করা হয়। রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে এর আগে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই আদালত কর্ণফুলী নদী সংরক্ষণ এবং নদী দখল করে অবৈধভাবে গড়ে উঠা স্থাপনাসমূহ অপসারণের জন্য কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- এ মর্মে রুল জারি করেছিল। একই রুলে পাশাপাশি নদীর দুই তীর দখল করে অবৈধভাবে গড়ে উঠা স্থাপনার তালিকা আদালতে দাখিল করার জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। আদালত সূত্র জানায়, রায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আদেশপ্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে গড়ে ওঠা এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনাসমূহকে স্থানীয় দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নব্বই দিনের মধ্যে সরিয়ে নিতে বলা হলো। এ সময়ের মধ্যে তা প্রতিপালন না হলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক), চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং বিআইডব্লিউটিএ এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের যাবতীয় ব্যবস্থা নেবেন। তবে রায়ে নদীর তীর দখল করে প্রতিষ্ঠিত নৌবাহিনী ও বন্দর কর্তৃপক্ষের জেটিসহ ৬ স্থাপনা সরকারী সংস্থার মালিকানার হওয়ায় সেগুলো অপসারণের আওতামুক্ত থাকবে। কিন্তু এসব সরকারী সংস্থাকে ওইসব স্থাপনার জন্য পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি নিতে হবে এবং এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতরকে বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার পর বিকেলে যোগাযোগ করা হলে চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, রায়ের কপি আসার পর পরই এ ব্যাপারে সম্মিলিতভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোঃ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, আদালতে রায় হয়েছে জেনেছি। তবে এখনও অফিসিয়ালি কপি পাইনি। আদালত যে নির্দেশনা প্রদান করে সেই অনুযায়ী প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) সূত্র জানায়, অবশ্য এ রায় কর্ণফুলী নদীকে বাঁচাতে অর্থাৎ সংরক্ষণে ইতিবাচক ভূমিকা বয়ে আনবে। যেহেতু আদালত চারটি সংস্থাকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দায়িত্ব প্রদান করেছে সেক্ষেত্রে রায় কার্যকর করতে অবৈধ কোন প্রভাব কাজ করবে না। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন) জাফর আলম জানান, যদিও এ মামলায় বন্দরকে বিবাদী করা হয়নি এরপরও বন্দর কর্তৃপক্ষ এ রায় কার্যকরে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করবে। বন্দরের এস্টেট অফিসার জিল্লুর রহমান জানান, কর্ণফুলীর দুই তীর জুড়ে যেভাবে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে তা এ নদীর জন্য হুমকি হয়ে আছে। তার ওপর দীর্ঘদিন ড্রেজিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এর তলদেশে পলি জমে ভরাট ত্বরান্বিত হয়েছে। মঙ্গলবার হাইকোর্ট অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়ে বন্দরের জন্য একটি ইতিবাচক দিক বয়ে এনেছে বলে মতব্যক্ত করেন। কেননা, এ উচ্ছেদ কার্যক্রম বাস্তবায়নের পাশাপাশি ড্রেজিং কার্যক্রমও পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
×