ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আলোচনা সভা

জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৭ আগস্ট ২০১৬

জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিকল্প নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উগ্রবাদী কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত তরুণরা এক সময় শিবিরের রাজনীতি করত। উগ্রসন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদী কার্যক্রম নির্মূল করতে চাইলে ধর্মতান্ত্রিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। উগ্রবাদের শেকড় উপড়ে ফেলতে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধুর দর্শনই ছিল জঙ্গীবাদ দমনের মূল মর্ম, তাই একসঙ্গে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও ধর্মের নামে রাজনীতি চলতে পারে না। আর ৭২’র সংবিধানই ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রধান কারণ, তারা ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান মেনে নিতে পারেনি। তাই ৭২’র সংবিধান পুনঃপ্রবর্তন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরে সরকার কাজ করে যাচ্ছে-দ্রুত সময়ে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। তাদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতেই হবে। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ধানম-িতে বিলিয়া মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর দর্শন ঃ মৌলবাদী সন্ত্রাস নির্মূলের নিদান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের উপদেষ্টা বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। অনুষ্ঠানের শুরুতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অব), মেজর জেনারেল (অব) মোহাম্মদ আলী শিকদার, কমোডর (অব) ইশফাক এলাহী, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার ও শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দেশে যারা উগ্রবাদী কর্মকা- চালাচ্ছে কিংবা এমন কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত এরা একসময় শিবিরের রাজনীতি করত। পরে নাম পাল্টিয়েছে, হামলার ধরন পাল্টিয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, প্রথমে এরা শিবিরের নামে রগ কাটা শুরু করেছিল। তারপর বিভিন্ন সংগঠনের নামে আত্মপ্রকাশ করেছে, প্রতিনিয়ত তাদের নাম পাল্টিয়েছে। এখন আবার নতুন নামকরণ করছে, তারা নাকি আইএস? সারা বাংলাদেশ ঘুরে কোথাও আইএস পেলাম না। উদভ্রান্ত কিছু তরুণকে পোশাক পরিয়ে, দিকভ্রান্ত করে বলাচ্ছে তারা আইএস। দেশের রাজনীতিবিদরা এদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন সদ্য স্বাধীন দেশকে গড়তে শুরু করলেন, ঠিক তখনই তাঁকে হত্যা করা হয়। একইভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, মধ্যম আয়ের সারিতে উঠে আসছে, তখনই শুরু হয়েছে নানাভাবে ষড়যন্ত্র। এরা একের পর এক কৌশল পাল্টাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের দেশে দ্রুত ফিরিয়ে আনা হবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। যে কোন মুহূর্তে তাদের আনা হতে পারে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ৭২’র সংবিধান পুনঃপ্রবর্তনের আহ্বান জানিয়ে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ৭২’র সংবিধানই ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রধান কারণ। তারা ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান মেনে নিতে পারেনি। পরাজয়ের গ্লানি সইতে না পেরে তারা জাতির পিতাকে হত্যা করে। ধর্মের নামে রাজনীতির ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর তা তারা তুলে ফেলে। জিয়াউর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৮ সালে জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠা করে। তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী থাকলে দেশে কোন আইএসের দরকার নেই। জামায়াতে ইসলামী আইএসের বাপ। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের কোন বিকল্প নেই। বিশ্বজুড়ের মওদুদীবাদ, ওয়াহাবীবাদ যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে, বাংলাদেশেও বর্তমানে যা হয়েছেÑতা তারই অংশ। শাহরিয়ার কবির বলেন, আমরা বলছি তরুণদের কাজে লাগান। যেসব জঙ্গী গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলায় অংশ নিয়েছিলÑছবি ও ফুটেজ দেখে তাদের চিহ্নিত করে তরুণরাই। বাসা-বাড়ি থেকে তরুণদের উচ্ছেদ না করে তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করুন। তরুণদের মেধাকে কাজে লাগান। যারা উগ্রবাদে আকৃষ্ট হয়েছিল বর্তমানে ফিরে আসতে চায়, তাদের পুনর্বাসন করুন এবং তাদের দিয়ে জঙ্গী দমন কার্যক্রম পরিচালনা করুন। উগ্রবাদ সন্ত্রাস প্রতিরোধে দেশে ‘জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কাউন্সিল’ গঠনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বেশ কিছু সংগঠন, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞ জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাসের স্বরূপ উন্মোচন এবং প্রতিরোধের প্রকরণ ও কৌশল সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরে গণমাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করছেন এবং লিখছেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ (অব) বলেন, ৭৫’র ১৫ই আগস্টের ঘটনা ছিল জঙ্গীবাদের স্বরূপ, শুধুমাত্র সামরিক অভ্যুত্থানের কথা বলে তা ঢাকতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর দর্শনকে মুছে দিতেই বর্তমানে এই জঙ্গীবাদের উত্থান, যে কোন মূল্যে তা আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। রিজিওনাল এন্টি টেররিস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউ’র নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব) মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, বঙ্গবন্ধুর দর্শনই ছিল জঙ্গীবাদ দমনের মূল মর্ম। দুটো দর্শন একসঙ্গে চলতে পারে না। উগ্রসন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদী কার্যক্রম নির্মূল করতে চাইলে ধর্মতান্ত্রিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে, জামায়াত শিবিরের রাজনীতি বন্ধ করতে হবেÑউগ্রবাদের শেকড় উপড়ে ফেলতে এর কোন বিকল্প নেই। একই সঙ্গে উগ্রবাদ নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাও অব্যাহত রাখতে হবে।
×