ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৫২ লাখ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অর্থনীতির মূল স্রোতে আনা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ১৭ আগস্ট ২০১৬

৫২ লাখ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অর্থনীতির মূল স্রোতে আনা হচ্ছে

আনোয়ার রোজেন ॥ বংশপরম্পরায় কামারের কাজ করেন গৌরাঙ্গ লাল। বাপ-দাদার পেশার সঙ্গে দারিদ্র্যও ‘উত্তরাধিকার’ সূত্রে সঙ্গী হয়েছে গৌরাঙ্গের। আর্থিক সচ্ছলতা কী জিনিস-কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার এই কামার তা জানেন না। গৌরাঙ্গর মতো আশৈশব দারিদ্র্যের গ্লানি টেনে ফেরা প্রান্তিক পেশাগোষ্ঠীর মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নেবে সরকার। এজন্য নয়টি বিশেষ প্রান্তিক পেশার সাড়ে ৫২ লাখ মানুষকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের উন্নয়নে আগামী বছরগুলোতে বেশি করে প্রকল্প নেয়া হবে। এসব প্রকল্পের আওতায় ঋণ প্রদান, প্রশিক্ষণ, বিদ্যমান পেশার দক্ষতা বৃদ্ধি ও মানোন্নয়নের মাধ্যমে তাদের দারিদ্র্য বিমোচন করা হবে, যা প্রকারন্তরে দেশের প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ অনুযায়ী, নয়টি অপ্রচলিত পেশার মানুষকে প্রান্তিক পেশাগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরা হলেন-বেদে, কুমোর, জেলে, কামার, স্বর্ণকার, বাঁশ ও বেত প্রস্তুতকারক, কাঠ মিস্ত্রি, মিষ্টি প্রস্তুতকারক এবং নাপিত। জরিপ অনুযায়ী এই ৯ প্রান্তিক পেশার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ ও পরিবার (হাউজহোল্ড) মাছ ধরার সঙ্গে যুক্ত। সারাদেশে জেলে পরিবারের সংখ্যা প্রায় সাত লাখ ৮০ হাজার। আর এসব পরিবারের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩১ লাখ ১০ হাজার জন। পেশায় সবচেয়ে কম সংখ্যক মানুষ হলেন বেদে সম্প্রদায়ের। সারাদেশে এদের পরিবারের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার, জনসংখ্যার হিসেবে যা প্রায় ৬৯ হাজার জন। এছাড়া সারাদেশে কাঠমিস্ত্রির পরিবারের সংখ্যা প্রায় এক লাখ ৭৫ হাজার (জনসংখ্যা প্রায় সাত লাখ ২৫ হাজার জন), বাঁশ ও বেত প্রস্তুতকারকদের পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৮১ হাজার (জনসংখ্যা প্রায় তিন লাখ ৩২ হাজার)। সারাদেশে নাপিতদের পরিবার রয়েছে প্রায় ৮১ হাজারটি, যাদের মোট সংখ্যা প্রায় তিন লাখ ৩০ হাজার। মিষ্টি প্রস্তুত করেন এমন পেশার মানুষের পরিবারের সংখ্যা সারাদেশে প্রায় ৫৩ হাজার। এদের মোট জনসংখ্যা প্রায় দুই লাখ ১০ হাজার। এছাড়া দেশে স্বর্ণকারদের পরিবার আছে প্রায় ৪৪ হাজারটি, যাদের মোট সংখ্যা প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার জন। কামার পরিবারের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩২ হাজার, যাদের মোট সংখ্যা প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার। মাটির কারিগর কুমোরদের পরিবার আছে প্রায় ৩২ হাজার, যাদের মোট সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অন্যান্য জনগোষ্ঠী, এমনকি আদিবাসীদের তুলনায়ও এসব প্রান্তিক পেশাগোষ্ঠীর মানুষ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে রয়েছে। দেশে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের হার ২৬ শতাংশ। তবে এসব প্রান্তিক পেশাগোষ্ঠীর এই হার ৯৬ শতাংশ। ২০১৪ সালের এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫৩ শতাংশ কামার সম্প্রদায়ের মাসিক আয় দুই থেকে তিন হাজার টাকা। এসব পেশার মানুষকে অর্থনীতির মূল স্রোতে সম্পৃক্ত করতে না পারলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করা যাবে না। তাই এসব পিছিয়ে পড়া মানুষকে উন্নয়নের মূল স্রোতে টেনে আনতে চায় সরকার। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এখন থেকে অবকাঠামো নির্মাণের বড় প্রকল্পের পাশাপাশি ছোট ছোট প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। বর্তমানে প্রকল্পের সংখ্যা হচ্ছে ১২০০। এটি বেড়ে ১৫০০ হবে। পিছিয়ে পড়া মানুষদের অর্থনীতির মূল স্রোতে নিয়ে আসতে এসব ছোট ছোট প্রকল্প নেয়া হবে। যাতে তারাও প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।
×