ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সেলাই মেশিনের চাকায় সহোদর দু’ভাইয়ের ভাগ্য পরিবর্তন

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ১৭ আগস্ট ২০১৬

সেলাই মেশিনের চাকায় সহোদর দু’ভাইয়ের ভাগ্য পরিবর্তন

রাজুমোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম ॥ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়ার সুযোগ হয়েছে আনিছুরের। দরিদ্র পিতার দিনজুরিতে নিত্য অভাব ছিল সংসারে। ফলে ১৪ বছর বয়সেই স্কুলের পাঠ চুকিয়ে যেতে হয়েছে কর্মজীবনে। তার ছোট ভাইকেও বড় ভাইয়ের পথ অনুসরণ করতে হয়েছে। কারণ বাবার জমিজমা বলতে কিছুই ছিল না। তিনি পরের বাড়িতে কাজ করতেন। দিন শেষে যা পেতেন তা দিয়ে চলত টানাটানির সংসার। ফলে চরম অভাবের মধ্যে কাটাতে হয়েছে তাদের। অভাব দূর করতে কাজে যোগ দেয় আনিছুর। তাও দর্জির কাজ। প্রথম বছর বিনা বেতনেই কাজ করতে হয়েছে তাকে। এর পর দিনশেষে ৫০ টাকা বা ৭০ টাকা। এটাই সংসারে দিত সে। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের সীমান্তঘেঁষা গজেরকুটি গ্রামের দিনমজুর সাইদুল ইসলামের ছেলে আনিছুর রহমান। তিন ভাই, বাবা-মা ও দাদা-দাদি নিয়ে তাদের পরিবার। ছোট ভাই আতাউর পঞ্চম শ্রেণীতে ইতি টেনে তার সঙ্গে দর্জির কাজ শিখছে। ইউনিয়নের বালাহাট বাজারে সান টেইলার্সে তারা কাজ করছে। এখানে টানা পাঁচ বছর কাজ শেখে আনিছুর। এর পর বাবার পুরাতন সাইলেকটি এক হাজার ৫শ’ টাকায় বিক্রি করে দেয়। সেই সঙ্গে স্থানীয় এক এনজিওর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে। এ টাকা দিয়ে সে একটি সেলাই মেশিন ও বিভিন্ন কাপড় কিনে নিজেই দর্জির দোকান খুলে বসে। সব ছোট ভাই আশরাফুলকে স্কুলে ভর্তি করে দেয়। অল্প সময়ে এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে সে। কিন্তু আয়ের বেশিরভাগ অর্থ সংসারে খরচ হওয়ায় ঋণের চাপ বাড়তে থাকে। এক সময় ঋণ পরিশোধ করার মানসে ছোট ভাই আতাউরকে দর্জির দোকানের দায়িত্ব দিয়ে সে ভারতে চলে যায়। এ গ্রামের অনেকেই ভারতে গিয়ে কাজ করে। ওদের কাছে শুনেছে, সেখানে দর্জির কাজের চাহিদা বেশি। তাই সে বন্ধুদের সঙ্গে ভারতের দিল্লী শহরের ইন্ধানগরে গিয়ে গার্মেন্টসে কাজ যোগাড় করে। সেখানেই পাঁচ-পাঁচটি বছর কেটে যায় তার। এর পর বাড়িতে ফেরে আনিছুর। ফেরার সময় ভারত থেকে উন্নতমানের সেলাই মেশিন কিনে আনে। এর পর সঞ্চিত পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে নিজেদের থাকার জন্য ৯ শকত জমি তিন লাখ টাকা দিয়ে কেনে। সেখানে একটি ঘরে বড়ুসড় আকারে টেইলার্সের দোকান খুলে বসে। নাম দেয় ‘ভাই-ভাই টেইলার্স’। বর্তমানে এলাকার জনপ্রিয় টেইলার্সের দোকান এটি। বর্তমানে আনিছুরের মাসিক আয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। ছোট ভাই আশরাফুলকে রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা বিভাগে বিএ অনার্সে ভর্তি করানো হয়েছে। তাকে প্রতি মাসে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পড়াশোনার খরচ দেয়া হচ্ছে। অভাব-অনটনের কারণে নিজেরা পড়তে না পেরে ছোট ভাইকে তারা পড়াশোনা করাচ্ছে। চলতি বছর আনিছুর ও আতাউর বিয়ে করেছে। বাবা-মা আর দাদীকে নিয়ে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করছে।
×