ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গেল অর্থবছর জুড়েই সরকার ঋণ নেয়নি, উল্টো শোধ করেছে

সরকারের ব্যাংক ঋণ কমছে

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ১৭ আগস্ট ২০১৬

সরকারের ব্যাংক ঋণ কমছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাজেটে ঘাটতি পূরণে বিদায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল সরকার। টাকার প্রয়োজন না হওয়ায় অর্থবছর জুড়েই সরকার ঋণ নেয়নি, উল্টো শোধ করেছে। নতুন অর্থবছরের প্রথম মাসেও কমেছে সরকারের ব্যাংক ঋণ। এই সময়ে প্রায় ৩ হাজার ৭৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সরকার। অর্থবছরের শুরুতেই সরকারের এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। ফলে সরকারের ঋণের চাহিদা কম থাকে। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারের ঋণের চাহিদা কমছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে কোন ঋণ নেয়নি বরং আগের ঋণ পরিশোধ করেছে। যদিও এ সময় সরকারের ট্রেজারি বিল বা বন্ডে সুদহার ছিল ৩ শতাংশেরও নিচে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ৩১ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর জুন শেষে ছিল ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। সে হিসেবে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ কমেছে ৩ হাজার ৭৬ কোটি টাকা। সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার ৭ হাজার ৮৯০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। এ সময় তফসিলি খাতের ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে কোন ঋণ নেয়নি সরকার। বরং এ সময় সরকার আগের ঋণ পরিশোধ করেছে। আলোচ্য সময়ে সরকার তফসিলি ব্যাংকের ১০ হাজার ৩২০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বর্তমানে বিনিয়োগ মন্দা পরিস্থিতিতে সরকারের সিকিউরিটিজ এ্যান্ড ট্রেজারি বিল বা বিভিন্ন বন্ডে বিনিয়োগ করে অনেক ব্যাংক ন্যূনতম সুদহারে কিছু মুনাফা করার চেষ্টা করছে। তবে সঞ্চয়পত্র বিক্রির হার বেড়ে যাওয়ায় কমে গেছে সরকারে ঋণের চাহিদা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মীর্জা এবি আজিজুল ইসলাম জানান, বছরের শুরুর এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। ফলে সরকারের ব্যাংক ঋণের চাহিদা কম থাকে। তবে ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকগুলোর কাছে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা তারল্য পড়ে আছে, কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো সরকারের বাজেট ঘাটতি পূরণে ট্রেজারিতে বিনিয়োগ করে আয় করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ঋণের চাহিদা কম থাকায় সেখানেও ভাটা পড়েছে। তাদের মতে, চলমান স্থিতিশীল অর্থনীতির মধ্যে বেসরকারী খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়তে শুরু করেছে। একই সময় সরকারের মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ত্বরিত গতিতে এগোচ্ছে। ফলে শিগগির সরকারের ঋণের ব্যাপক চাহিদা দেখা দিতে পারে বলে মনে করেন তারা। সূত্র আরও জানায়, চলতি অর্থবছরের শুরুর দিকে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার বিপুল পরিমাণে ঋণ নিচ্ছিল। এতে জুলাই মাসের প্রথম ৯ দিনেই ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা, যা গত ২১ জুলাই তারিখে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা। তবে ঋণ ফের কমতে কমতে ৮ হাজার কোটি টাকায় নেমে আসে। সেপ্টেম্বর শেষে তা সামান্য বেড়ে ৮ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকায় দাঁড়ায়, যা চলতি বছরে ঋণাত্মক ধারায় চলে আসে। সরকার প্রতি অর্থবছরে ঋণ গ্রহণ করে। আবার ঋণ শোধ করে। এর মধ্যে যে অংশ বকেয়া থাকে, সেটি স্থিতি হিসেবে ধরা হয়। প্রতিবছর সরকারের ঋণের অংক বাড়ায় বাড়ছে স্থিতির পরিমাণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিলে বাজারে গিয়ে তা কয়েক গুণ বেশি অর্থের সৃষ্টি করে। কেননা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকাকে হাই পাওয়ার্ড মানি বলা হয়। এ কারণে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ে। জানা যায়, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে সরকার ৪৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ নেয়া হবে ২৮ হাজার কোটি টাকা, আর স্বল্পমেয়াদী ঋণ ১৫ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের ঘাটতি পূরণে এ ঋণ নেয়ার প্রাক্কলন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এদিকে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ ২৪ হাজার ১৮২ কোটি টাকা এবং স্বল্পমেয়াদী ঋণ ছিল ১৪ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। গত অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩১ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা। আর সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক-বহির্ভূত খাত থেকে ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছর ব্যাংকের তুলনায় সঞ্চয়পত্রের সুদহারে অনেক বেশি ব্যবধান থাকায় সেখানে বিনিয়োগ বেড়েছিল। অবশ্য গতবারও আশার তুলনায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে বেশি অর্থ আসায় অর্থবছর শেষে ব্যাংকে ঋণ কমেছিল ৬ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের শুরুতে সরকারের ব্যাংকঋণ বাড়লেও পরে তা কমতে থাকে। আলোচ্য সময়ে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছে তার চেয়ে বেশি পরিশোধ করেছে। ফলে সরকারের নিট ঋণ কমেছে। নির্দিষ্ট একটি সময় থেকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত নেয়া ঋণ নিট ঋণ হিসেবে বিবেচিত।
×