ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাদিয়া ইউসুফ বৃতা

বন্ধুত্বের সাতকাহন

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ১৬ আগস্ট ২০১৬

বন্ধুত্বের সাতকাহন

‘প্রয়োজনে বন্ধু; অপ্রয়োজনে নয়’- একথা বলা মাত্র আপত্তি তুলবার লোকের অভাব হবে না। সেটা জেনেই বলছি, বন্ধু মাত্রই প্রয়োজনীয় বটে। একে অপরের প্রয়োজন মেটাতে না পারলে আর বন্ধুতা কিসের দরকার! বন্ধুর সঙ্গ প্রয়োজন; দম নেয়ার জন্য বন্ধুদের প্রয়োজন, যখন দম ফেলবারও ফুরসত পাওয়া যায় না। তখন কোন বন্ধুর সঙ্গে এক কাপ চা এর সমান সময়েও বেশ ক’বার দম নেয়াও যায় আর দম ছাড়াও যায়। এবার বলুন নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব বলতে কি বোঝাচ্ছেন? আর আপনার বন্ধুতা স্বার্থহীন একথাই বা বলছেন কোন সাহসে? কাউকে কাউকে বলতে শুনেছি ‘আমার কোন (ভাল) বন্ধু নেই। অথবা দেখেছিও হয়ত, আসলেই কি নেই! নাকি আপনি তাদের ভাল বন্ধু ভাবতে পারছেন না? বন্ধুত্বকে সঙ্গায়ন করবার কোন নিয়মাবলী আছে কি! তবে বন্ধুদের বোধকরি কিছু ভাগে ভাগাভাগি করে নেয়া যেতে পারে; কিছু বন্ধু থাকে, যাদের সঙ্গে আড্ডা দিলেই মন ভাল হয়ে যায়, ধোঁয়া সহযোগে এক কাপ চা, সঙ্গে নিশ্চিন্ত একান-ওকান অট্টহাস্য; সঙ্গে যদি পানির গ্যালন কিংবা টেবিল বাজিয়ে গলা ছেড়ে গান গাওয়া যায় তাহলে তো কথাই নেই! এমন একটা বিকেল সপ্তাহান্তে পাওয়া গেলে ফুরফুরে থাকা যায় বোধহয়! এতভালো সময় কাটলো যাদের সঙ্গে, তারা আমার ভাল বন্ধু না এ কথা বলি কি করে! তবে কি ভাল বন্ধু হতে হলে আরও চাওয়া পাওয়া পূরণ হওয়া চাই...সঙ্গাটা তেমন কি? তাদের কেউ আপনার কোন কঠিন প্রয়োজনে ডাকলে আসবে না তেমন হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে আশা করে বসে থাকলে আশাহত হতেই পারেন! তখন রাগ করে বলবেন, ‘কেমন বন্ধু আমার বোঝা হয়ে গেছে’ তাই না? কর্মক্ষেত্রে প্রায়শই এক আধজন ভাল বন্ধু পেয়ে যেতেই পারেন কারণ, আপনার মতো আরও কিছু মানুষ ও পৃথিবীতে আছে যারা অন্যকে ঘাঁটানোর চাইতে নিজের মতো থাকতেই ভালবাসে। তাদের সঙ্গে আপনার ওভার নাইট বন্ধুত্ব না হলেও সময় যেতে যেতে হয়েই যায়। সেটা বেশ দারুণ হতে পারে কারণ শুরুটা ফর্মাল থাকে। আপনারও চাহিদা থাকে না তার প্রতি, তারও না আপনার প্রতি; আর শুধু সংগ ভাল লাগা থেকেই যদি বন্ধুত্বটা হয় তবে তো কর্মক্ষেত্র ছেড়ে দিলেও বন্ধুতা ছাড়ে না। এত বন্ধুর মাঝে স্কুল কলেজের বন্ধুরা জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কিন্তু অবহেলিত বন্ধুগণ, যাদেরকে আলাদা করে মনোযোগ দেবার প্রয়োজন হয় না, দাওয়াত দেয়া লাগে না, খবরটা কানে পৌঁছুলেই চলে! কিছুই দেয়া হয় না পাওয়া ছাড়া, সকল অন্যায় অনাচারের পরও শাস্তির আল্টিমেটামপূর্বক যারা আপনাকে সহ্য করবেই তারা ন্যাংটাকালের বন্ধু অর্থাৎ স্কুল ফ্রেন্ডজ! ছোট্টবেলায় বুঝে না বুঝে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। সুতরাং যে যেমন তার কাছে অন্যদের চাওয়া পাওয়াগুলোও তেমন করেই তৈরি হয়। কখনও কখনও চূড়ান্ত বিরক্তি, অসহ্য যন্ত্রণা নিয়েও তারা অভ্যস্ততায় পরিণত হয়। ফ্যামিলি যেমন চাইলেও কেউ ছেড়ে যেতেও পারে না আর ফ্যামিলিও ছেড়ে যায় না, ক্ষেত্রবিশেষে এখানেও তাই। প্রতিটি উদ্ভূত পরিস্থিতেই বন্ধুকে চিনে ফেলবার চেষ্টা করলে অনেক দিকই উঠে আসতে পারে। ছেড়ে দিন না! বন্ধুত্বই তো একমাত্র সম্পর্ক যেখানে নিজস্ব স্পেস রেখেও ভালবাসা যায়। যেই স্পেসটুকু আপনি চাইলেও সংসার কিংবা পরিবারে পাবেন না। পরিবার কিংবা সংসার মধুর বটে, কিন্তু একে অপরের সম্পূর্ণ (ভাল-মন্দ)টা দেখে ফেলবার বিকল্প নেই; বন্ধুতায় আছে তো! অন্যের অ-ভালটুকু পাশ কাটিয়ে শুধু ভালটুকু ভালবেসে যাওয়া যায় যতক্ষণ ইচ্ছে।
×