ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অল্পের জন্য পদক ফসকে গেল ত্রিপুরার কন্যা দীপার

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১৬ আগস্ট ২০১৬

অল্পের জন্য পদক ফসকে গেল ত্রিপুরার কন্যা দীপার

রাত জেগে টিভির সামনে বসে থাকা ভারতবাসী শোকে মুহ্যমান। আর চুরমার হওয়া স্বপ্নটা ছিল যাকে ঘিরে, সেই মেয়েটা ত্রিপুরার বাঙ্গালী দীপা কর্মকার। একেবারেই অল্পের জন্য হলো না। পদক ছুঁই ছুঁই করেও ভাগ্য বিড়ম্বনায় হয়ে গেলেন চতুর্থ। লড়াই শেষে দীপা হাসছিলেন। অলিম্পিকের মতো আসরে এর চেয়ে আর বেশি কি করা সম্ভব। সেরাটা দিয়েছি। প্রতিদিন উন্নতি করেছি। তিন মাসের অনুশীলনে বিদেশে না গিয়ে শুধু আমার কোচের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। প্রতিপক্ষরা তো কয়েক বছর অনুশীলন করে এখানে এসেছে। পদক তো ওদেরই প্রাপ্য। পদক তো আমিও প্রায় পেয়েই গিয়েছিলাম। কিন্তু সামান্য ভারসাম্যহীনতায় সব ধূলিসাৎ হয়ে গেল। অনরগল বলে যাচ্ছিলেন দীপা। তারপর যেন কিছুটা উদাস লাগলো ত্রিপুরার কন্যাকে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে সামলে নিলেন আবেগ। তারপর বললেন, যা হয়েছি তাতেই আমি তৃপ্ত। আমি খুশি। আমার কোচ খুশি। এর বেশি স্কোর করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। প্রোদুনোভায় সবচেয়ে বেশি স্কোর কিন্তু আমার। দেশে ফিরলে বাবার কাছে শুনতে হবে কেন চার নম্বর হয়েছিস। পাঁচ-ছয় হলে আফসোস থাকতো না। আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্সের ভল্ট ফাইনাল শুরুর ঘণ্টা খানেক আগেই দর্শকে ভর্তি রিওর বারহা স্টেডিয়াম। পতাকা হাতে শুধু ভারতীয়রা নন, দীপাকে সমর্থন দিতে দেখা গেল অনেক ব্রাজিলীয়কেও। দীপা ফাইনালের দিন পোশাক পরিবর্তন করেছিলেন। নীল পোশাকে স্টেডিয়ামে ঢুকে ব্যাগটা রেখেই ছটফট করতে দেখা গেল তাকে। একের পর এক নাম ঘোষণা হচ্ছিল বিশ্বের নামি জিমন্যাস্টদের। দীপার নামটা যখন ঘোষণা হলো, তখন ফেটে পড়লো গোটা স্টেডিয়াম করতালিতে। দীপা হাত তুলে গ্রহণ করলেন অভিবাদন। আটজনের মধ্যে ছয় নম্বরে নাম ছিল তার। যখন ভল্ট শুরু ১৪ পয়েন্টের বেশি উঠতে পারেননি কেউ। কিন্তু দীপা যেন তৈরি ছিলেন সবাইকে চমকে দিতে। তার মুখে কোন টেনশনের ছাপ দেখা যায়নি। স্ট্র্যাটেজি পাল্টে প্রথমেই বেছে নিলেন সুকাহরা ভল্ট। প্রথম ভল্টে দারুণ ল্যান্ডিং করলেন বাঙ্গালী মেয়েটা। জায়ান্ট স্ক্রিনে স্কোর দেখাচ্ছিল ১৪. ৮৬৬। করতালির ঝড়। এরপর সেই প্রোদুনোভা। যে ভল্টের ওপর ভর করেই রিও অলিম্পিকের টিকেট পেয়েছিলেন দীপা। শুরু করলেন দীপা। কিন্তু সেরা অস্ত্রের প্রয়োগ করতে গিয়ে সামান্য গ-গোল হয়ে গেল। ল্যান্ডিংয়ের সময় শরীর ঠেকে গেল ম্যাটে। প্রায় বসে পড়লেন দীপা। তার একটু আগেই প্রোদুনোভা ভল্ট দিতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন উজবেকিস্তানের ওকসানা চুসোভিতিনা। তারচেয়ে অনেক ভাল ল্যান্ডিং। দীপাও হাসছিলেন। জড়িয়ে ধরছিলেন কোচ বিশ্বেশ্বর। জায়ান্ট স্ক্রিনে বারবার দেখাচ্ছিল, দ্বিতীয় ভল্টে তার স্কোর ১৫. ২৬৬। চূড়ান্ত স্কোর ১৫. ০৬৬। স্কোরবোর্ড দেখাচ্ছিল, সুইজারল্যান্ডের মেয়ে স্টেইনগ্রুবার তখনও পর্যন্ত শীর্ষে। তার পরেই দীপা। একটা ব্রোঞ্জ বা রৌপ্য কি হবে না? আশার সঙ্গে চিন্তাও বেড়ে গেল সবার। কারণ দীপার পরই আসবেন বিশ্বের সেরা দুই মহিলা জিমন্যাস্ট। রাশিয়ার মারিয়া পাসকে এবং যুক্তরাস্ট্রের সিমোন বিলেস। বিলেসকে বলা হয় জিমন্যাস্টিক্সের মাইকেল ফেলপস। ভল্ট ফাইনালের আগেই যার ঝুলিতে জমা পড়েছিল রিও গেমসের দুই সোনার পদক। স্কোর দেখেই নিজের ব্যাগ গোছাতে দেখা গেল দীপাকে। আশঙ্কা সত্যি করেই স্বর্ণ পদক ছিনিয়ে নিলেন সিমোন বিলেস। রৌপ্য পেলেন পাসকে। স্টেইনগ্রুবারের ভা-ারে জমা পড়ল ব্রোঞ্জ। সুইস মেয়ের পয়েন্ট ১৫. ২১৬। দীপার সঙ্গে ব্যবধান চুল পরিমাণ, মাত্র ০. ১৫। প্রোদুনোভার সময় ব্যালেন্স শতভাগ ঠিক রাখতে না পরায় বসে পড়াটাই কাল হলো দীপার জন্য। মিডিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে দীপা বলছিলেন, আমাকে যখন আপনারা তিন নম্বরে দেখছেন, তখনও বিশ্বসেরা সিমোন আর পাসকের ভল্ট বাকি। আর তখনই আমার বুঝতে বাকি ছিল না, আমার পক্ষে এর চেয়ে বেশি কিছু করা সম্ভব নয়। এখন কি করবেন? উত্তরে দীপা বললেন, কয়েকদিন বিশ্রাম নেব। তারপর আবার প্রশিক্ষণ শুরু করবো। পরিশেষে বললেন, আমি কিন্তু আবার আসবো। টোকিও যেন তৈরি থাকে। জিমন্যাস্টিক্সের মতো যে খেলার মানচিত্রে কোথাও ছিল না ভারত। সে খেলাকেই বিশ্বদরবারে নিয়ে গেলেন দীপা। এটা কম কিসের, যেখানে অবস্থান ৪।
×