ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যথাযথ মর্যাদায় ঢাবিতে জাতীয় শোক দিবস পালিত

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৬ আগস্ট ২০১৬

যথাযথ মর্যাদায় ঢাবিতে জাতীয় শোক দিবস পালিত

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ যথাযথ মর্যাদায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) পালিত হয়েছে জাতীয় শোক দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সোমবার ঢাবি ক্যাম্পাসে আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ ছিল নানা আয়োজন। এছাড়া ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে সকালে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে তাঁর জীবন ও কর্মের উপর এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোঃ কামাল উদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. নীলিমা আকতার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোঃ এনামউজ্জামান। উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ১৯৭৫ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমনের কথা ছিল। সেদিন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা প্রদান করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা হয়নি। এর আগেই ঘাতকদের নির্মম বুলেটে তাঁকে শাহাদাতবরণ করতে হয়। উপাচার্য বঙ্গবন্ধু চরিত্রের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, তিনি অত্যন্ত সৎ, উদার, দেশপ্রেমিক, সাহসী ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মহান ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের সংগ্রামে তিনি মৃত্যু, জেল, জুলুমকে কখনও ভয় পাননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারীদের পক্ষে আন্দোলন করতে গিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৬ মার্চ তিনি ছাত্রত্ব হারান। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন কর্তৃপক্ষ মুচলেকা ও ১৫ টাকা জরিমানার বিনিময়ে তাঁকে ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিল। তখনও তিনি অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করেননি এবং ছাত্রত্ব ফিরিয়ে নেননি। বঙ্গবন্ধু পরবর্তীতে জাতীয় রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং বাংলাদেশের স্বাধীকার আন্দোলন শুরু করেন। উপাচার্য আরও বলেন, ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তান বাহিনীর বন্দুকের মুখেও তিনি বাসায় অবস্থান করছিলেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনও আত্মগোপন করেননি বা পালিয়ে যাননি। আজীবন তিনি আভিজাত্য নিয়ে রাজনীতি করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের বুলেটের সামনেও তিনি অবিচল ছিলেন। এই আভিজাত্য নিয়েই তিনি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন। আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ১৫ আগস্টকে শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য উপাচার্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। ঢাবি সাংবাদিক সমিতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী ॥ জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ‘মানচিত্রে রক্তের ফোয়ারা’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করে। এই প্রদর্শনীতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১১৫টি দুর্লভ আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে। সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) করিডরে উক্ত প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আসিফ ত্বাসীন, সাধারণ সম্পাদক লালন মাহমুদ ও সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের কোষাধ্যক্ষ তারিক হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাঁরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পুরো প্রদর্শনীস্থল ঘুরে দেখেন। প্রদর্শনী উদ্বোধনের পর আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির প্রদর্শনীতে অনেক বিরল আলোকচিত্র রয়েছে। যেখানে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যাচ্ছেন, বিদেশী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দেখা করছেন। এই ছবিগুলো দেখলে আমরা একইসঙ্গে শোকাহত হই-বেদনাহত হই যে, আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি। আবার একইসঙ্গে আমরা শক্তি খুঁজে পাই যে, এমন একজন নেতা আমাদের মাঝে ছিলেন ও আমাদের একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর চেয়ার উদ্বোধন ॥ এদিকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর আগমন উপলক্ষে প্রস্তুত করা চেয়ারের উদ্বোধন করা হয়েছে। বেদনা বিধুর স্মৃতির স্মারক এই চেয়ারটি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আসন স্বরূপ টিএসসি মিলনায়তনে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। কিন্তু ঘাতকদের হাতে সেদিন সপরিবারে শহীদ হন বঙ্গবন্ধু। ফলে ঢাবিতে আসা হয়নি বঙ্গবন্ধুর। এরপর থেকে চেয়ারটি টিএসসি মিলনায়তনের পাশে দীর্ঘদিন স্টোর রুমে রাখা ছিল। পরে এই চেয়ারটি টিএসসি পরিচালকের কক্ষে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। টিএসসির পরিচালক এম এম মহিউজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। আমি টিএসসির দায়িত্ব নেয়ার পর চেয়ারটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই। এছাড়া চারুকলা অনুষদ আয়োজন করে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এছাড়া বাদ যোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদসহ প্রত্যেক হল ও আবাসিক এলাকার মসজিদে দোয়া মাহফিল এবং বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। বুয়েটে আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন ॥ এদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। সোমবার বিকেলে বুয়েট কেন্দ্রীয় অডিটরিয়ামে এই আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান হয়। বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোঃ এহসান প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকা- ছিল পরিকল্পিত এবং যারা মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল তারাই ইতিহাসের এই নির্মম হত্যাকা- ঘটিয়েছিল। আমরা যেন বিশ্বের দরবারে গৌরবের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি সেই লক্ষ্যে জাতির পিতা আজীবন শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। একটি সদ্য স্বাধীন হওয়া ভঙ্গুর দেশকে যখন তিনি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক সেই সময়ে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি পরিকল্পিতভাবে জাতির পিতাকে হত্যা করে। আজকে বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক সেই সময়েও স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি ষড়যন্ত্র করছে।
×