ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে স্মরণকালের বৃহত্তম মানব প্রাচীর

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৬ আগস্ট ২০১৬

চট্টগ্রামে স্মরণকালের বৃহত্তম মানব প্রাচীর

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সুখী-সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে দৃঢ় শপথের মধ্য দিয়ে নানা আনুষ্ঠানিকতায় সোমবার চট্টগ্রামে পালিত হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস। ‘শোকের শক্তিতে রুখো সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ’ এ স্লোগানে এদিন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) আহ্বানে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডজুড়ে পালিত হয় মানবপ্রাচীর কর্মসূচী। এতে যোগ দেন কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে সাধারণ মানুষ। চসিক ও প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও শামিল হন মানবপ্রাচীরে। এছাড়া আওয়ামী লীগ, অঙ্গ সংগঠন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোও যথাযথ মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবস পালন করে। জাতীয় শোক দিবসে এবার চসিকের ব্যতিক্রমী কর্মসূচীর মধ্যে ছিল মানবপ্রাচীর। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত নগরীর কর্ণফুলী সেতুর বশিরুজ্জামান চত্বর থেকে বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, সিডিএ এভিনিউ শেখ মুজিব রোড, এমএ আজিজ রোড হয়ে কাটগড় কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ পর্যন্ত এবং দেওয়ানহাট থেকে অলঙ্কার, ষোলশহর ২ নম্বর গেট থেকে বায়োজিদ বোস্তামি রোড হয়ে অক্সিজেন এবং বহদ্দারহাট থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটারজুড়ে ছিল এ কর্মসূচী। সংসদ সদস্য ডাঃ আফছারুল আমীন ও এমএ লতিফ নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় মানবপ্রাচীরে নেতৃত্ব দেন। চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সড়কের পাশে মানবপ্রাচীরে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে শুভেচ্ছাবিনিময় করেন এবং বেলা ১১টার দিকে টাইগারপাস এলাকায় এসে এক ঘণ্টার এ কর্মসূচী সমাপনী ঘোষণা করেন। চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ আস্তানা গাড়তে পারবে না। চট্টগ্রাম শান্তি ও নিরাপদ এলাকা। এ চট্টগ্রামে জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের কোন স্থান নেই। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চট্টগ্রাম থেকে শুরু হয়। কিন্তু চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এখনও থেমে নেই। সকল ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে চট্টগ্রামবাসী প্রস্তুত আছে। সকল ষড়যন্ত্র ও প্রতিবন্ধকতা প্রতিহত করেই চট্টগ্রামের উন্নয়ন এগিয়ে যাবে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিনের সভাপতিতে বক্তব্য রাখেনÑ পুলিশের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার, ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার শঙ্কর রঞ্জন সাহা, জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা কমান্ডার মোঃ সাহাব উদ্দিন, মহানগর কমান্ডার মোজাফফর আহমদ প্রমুখ। বক্তারা বলেন, যারা স্বাধীন বাংলাদেশ চায়নি তারাই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। ধর্মের নাম তরুণ প্রজন্মকে ভুল বুঝিয়ে বিপথে পরিচালিত করছে। কিন্তু তাদের সেই অপচেষ্টা সফল হবে না। কারণ এ দেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগেও যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়। কর্মসূচীর মধ্যে ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, আলোচনা সভা, কালো ব্যাজ ধারণ, দোয়া মাহফিল, কাঙালিভোজ ইত্যাদি। এদিন নগরী ও জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছিল জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচী। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি, শোক শোভাযাত্রা ও বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচারিত হয়। নগরী ও জেলার সর্বত্রই মাইকে বাজানো হয় ৭ মার্চের সেই ভাষণ। চট্টগ্রাম মহিলা অধিদফতরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর আবিদা আজাদ, জেলা মহিলা অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিতা চাকমা। বক্তারা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন দেশ জাতির জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। জীবনের ১৪ বছরের কাছাকাছি জেলাখানায় আবদ্ধ থেকেও তিনি সংগ্রাম থেকে পিছু হটেননি। আলোচনা সভায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন নারী সংস্থা প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ॥ জাতির জনকের শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল ব্যাপক আয়োজন। সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বের হয় শোক র‌্যালি। এরপর বঙ্গবন্ধু চত্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবন ও কীর্তির ওপর অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। বক্তব্যে তিনি বলেন, চিরঞ্জীব মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতির অন্তহীন প্রেরণার উৎস। চবির আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেনÑ উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীন আখতার, ডিনস কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মোঃ সেকান্দর চৌধুরী, শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. এএফএম আওরঙ্গজেব ও সাধারণ সম্পাদক সুকান্ত ভট্টাচার্য, সিনেট সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জসীমউদ্দিন, সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. ফরিদ উদ্দিন আহামেদ, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কামরুল হুদা, আলাওল হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সফিউল আলম, প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী, অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. আবুল হোসাইন, চবি ক্লাব (ক্যাম্পাস) সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী আজাদী, সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল আলম, অফিসার সমিতির সাধারণ সম্পাদক রশিদুল হায়দার জাবেদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ড. অরুণ কুমার দেব, কর্মচারী সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ ওমর ফারুক এবং কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি জোস মোহাম্মদ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার (তথ্য) মোঃ ফরহাদ হোসেন খান। চবি উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন। প্রতিটি বাঙালীর হৃদয়ে তাঁর চেতনা বহমান। চিরঞ্জীব মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধু বাঙালীর অন্তহীন প্রেরণার উৎস। আজ বঙ্গবন্ধু তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য ও গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, চক্রান্তকারীদের সকল অপচেষ্টা ব্যর্থ হবে। সকল চক্রান্ত জঙ্গীপনা ও সন্ত্রাস প্রতিহত এবং প্রতিরোধের মাধ্যমে উন্নয়নের চাকা সচল রাখতে হবে। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ও সিইউজে ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) যৌথ উদ্যোগে নানান কর্মসূচী পালন করা হয়। সকাল সাড়ে এগারোটায় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বেলা বারোটায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল আয়োজন করা হয়। এর আগে ১ মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি কলিম সরওয়ার ও সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহসভাপতি শহীদ উল আলম, যুগ্মমহাসচিব তপন চক্রবর্তী, নির্বাহী সদস্য আসিফ সিরাজ, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আলী আব্বাস, সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির চেয়ারম্যান মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমানসহ সাংবাদিক সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
×