ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদের সেই অসামান্য স্মৃতি

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৬ আগস্ট ২০১৬

নিরাপদের সেই অসামান্য স্মৃতি

বিডিনিউজ ॥ মাগুরা শহরের ৮৫ বছর বয়সী নরসুন্দর নিরাপদ বিশ্বাসের সাধারণ জীবনে অসামান্য এক স্মৃতি হয়ে আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পঞ্চাশ বছর আগের কথা। ১৯৬৬ সালের একদিন তরুণ নিরাপদ বিশ্বাস কাঁপা কাঁপা হাতে অথচ পরম যতেœ কেটে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর চুল-দাড়ি। ক্ষৌরকর্মের পর তার কাছ থেকে টাকা নিতে না চাওয়ায় জুটেছিল স্নেহমাখা বকাও। তরুণ বয়সে যে ‘মহামানবকে’ দেখেছিলেন অল্প সময়ের জন্য, তাকে নির্মমভাবে হত্যার শোক বৃদ্ধ বয়সেও মন থেকে মুছে ফেলতে পারেন না নিরাপদ। মাগুরা শহরের পুরাতন জেলখানা সড়কে সাধনা ঔষধালয়ের পাশে খোলা জায়গায় এখনও কাজ করেন এই ক্ষৌরকার। দীর্ঘ ৬৫ বছরের কর্মজীবনে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি নামীদামী অনেকের চুল-দাড়ি তিনি কেটেছেন। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে বঙ্গবন্ধুর মুখচ্ছবি স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করে সবসময়, যার মৃত্যুর খবর পেয়ে অঝোরে কেঁদেছিলেন। ‘তখন বারবার একটা কথাই মনে হচ্ছিল- জন্মিলে মানুষের মৃত্যু অনিবার্য। কিন্তু মানুষ মানুষকে কীভাবে হত্যা করে! আর এমন একজন মহামানবকে যারা হত্যা করল তাদের হৃদয় কতটা পাষাণ? কিন্তু সাহস করে সেকথা প্রকাশ্যে বলা হয়নি কখনও,’ বলেন নিরাপদ। স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বলতে শুরু করেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা হওয়ার ঘটনা। ‘সম্ভবত ১৯৬৬ সালের কথা। মাগুরা শহরের বর্তমান সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে তখন আমার সেলুন। উকিল সাহেবের (সাবেক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন) বাড়ি থেকে আমাকে ডেকে নেয়া হলো। তার বাড়ির একটি ঘরে ঢুকে দেখলাম বঙ্গবন্ধু বসে আছেন। তাকে দেখেই তো আমার গা ছমছম। আমাকে দেখে তিনি বলে উঠলেন- এই সোহরাব, বেটা কেটে-টেটে ফেলবে না তো? উকিল সাহেব আমার কাজের প্রশংসা করলে, তিনি বললেন ‘শুরু কর’। তার অনুমতিতে সাহস নিয়ে আমি কাজ শুরু করলাম। জীবদ্দশায় বঙ্গবন্ধুর মতো ‘দরাজ কণ্ঠের সুপুরুষ’ আর দেখেননি মন্তব্য করে বৃদ্ধ নিরাপদ বলেন, ‘এতবড় একজন নেতার আড়ালে কি পবিত্র আর সহজ সরল অসাধারণ সেই মুখ; আমি কখনও ভুলতে পারব না।’ সেদিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে বঙ্গবন্ধু তার পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছিলেন বলে জানান নিরাপদ। কাজ শেষ হলেই বঙ্গবন্ধু তখনকার দুটি ১০ টাকার জিন্নাহ নোট আমার হাতে ধরিয়ে দেন। তখন দাড়ি কাটা ৩ আনা, চুল কাটতে লাগে ৫ আনা। আমি বললাম, ‘আপনার কাছ থেকে টাকা নিলে উকিল সাহেব রাগ করবেন’। আমার কথা শেষ না হতেই বঙ্গবন্ধু ধমক দিয়ে বললেন ‘এই বেটা, রাখ। উকিল সাহেব দিলে সেইডাও রাখিস, এটার কথা বলার দরকার নাই’। নিরাপদ বিশ্বাস দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানান, মাগুরা থেকে যশোর গিয়েই গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু। পরে আসামি হন ছয় দফা মামলায়। এরপর দীর্ঘ কারাভোগ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমণ্ডিতে সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
×