ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই বঙ্গবন্ধু হত্যার রায় দেন বিচারক ॥ সিনহা

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৬ আগস্ট ২০১৬

রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই বঙ্গবন্ধু হত্যার রায় দেন বিচারক ॥ সিনহা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে বিচার বিভাগ এগিয়ে এসেছে। ‘রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই’ বিচারক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীতে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সোমবার বিচার বিভাগ আয়োজিত এক রক্তদান কর্মসূচীর উদ্বোধন করে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগ কোনদিনই পিছপা হয়নি। রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে এই বিচার বিভাগ এগিয়ে এসেছে এবং যখনই অন্যায় দেখেছে সেখানেই হস্তক্ষেপ করেছে।’ সুপ্রীমকোর্টের বর্ধিত ভবন প্রাঙ্গণে এ আয়োজনে সুপ্রীমকোর্টের দুই বিভাগের বিচারপতি, আইনজীবী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিভিন্ন পর্যায়ের কথা স্মরণ করেন প্রধান বিচারপতি। সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ছাড়াও সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন ও সাবেক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম উপস্থিত ছিলেন। রক্তদান কর্মসূচী উদ্বোধনের পর সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে গাছের চারা রোপণ করেন প্রধান বিচারপতি ও আপীল বিভাগের বিচারপতিরা। অন্যদের মধ্যে আপীল বিভাগের রেজিস্ট্রার জাকির হোসেন, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, আপীল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী, হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) সাব্বির ফয়েজ ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার ফারজানা ইয়াসমিন উপস্থিত ছিলেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘জেল জুলুম, ছেলে-মেয়ে, পরিবার, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে ছেড়ে এত আত্মত্যাগের পরও তাকে কিছু বিপথগামী সৈন্য এ রকম হত্যা করতে পারে! যা হোক, শুধু তাকেই হত্যা করা হলো না, হত্যাকারী যারা তাদের রক্ষার জন্য তৎকালীন সরকার ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স জারি করেছিল। তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল’। ‘এরপরে এই বিচার বিভাগ-তখনকার বিচার বিভাগকে অনেকে সমালোচনা করে। যে স্বৈরশাসক সরকার নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা করেছিল, আমাদের সিনিয়র জাজেস ছিলেন, তারা কিন্তু পিছপা হননি, এই কালো আইন বাতিল করলেন। সরকার যখন (ইনডেমনিটি) বাতিল করল, তখন উচ্চ আদালত পর্যন্ত এটা বহাল করলেন’। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার নিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের পরিপ্রেক্ষিতে যাদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল, সেই ঘটনায় বিচারের পথ খুলে গেল। এখানে খেয়াল করবেন, সাক্ষী ছিলেন না, কত কষ্ট করে আমাদের একজন জেলা জজ মরহুম কাজী গোলাম রসুল তখনকার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রায় দিলেন। এরপরে হাইকোর্টে ডেথ কনফারমেশনের জন্য প্রতিকূলতা ছিল’। উচ্চ আদালতে বেঞ্চ গঠন ও অন্যান্য প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক ‘নাটকীয়তা’ হয়েছিল জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এরপর বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলো। আমি সৌভাগ্যবান যে এই বিচার প্রক্রিয়ায় আপীল বিভাগে ফাইনাল রায়ের সময় আমি একজন মেম্বার ছিলাম ও নিজে রায় দিতে পেরেছি।’ এই বিচার বিভাগ থেকেই যে জেল হত্যা মামলার রায় এসেছে, সে কথাও মনে করিয়ে দেন বিচারপতি সিনহা। ‘অষ্টম সংশোধনী, যেটা বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণভাবে পঙ্গু করার জন্য সুপ্রীমকোর্টকে ভেঙ্গে চুরমার করেছিল, সেটাকেও আমরা বাতিল করেছি। আমরা পঞ্চম সংশোধনী ও ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দিয়েছি। শেষ পর্যন্ত ষোড়শ সংশোধনী যেটা বিচারাধীন আছে, এ ব্যাপারে আমি মন্তব্য করতে চাই না।’ শ্রীলঙ্কা থেকে ঢাকায় ফিরে শোক দিবসের অনুষ্ঠানের কথা জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, তাকে শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতা দিবসে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের জন্য থেকে যাওয়ার অনুরোধ করা হলেও শোক দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। বিচার বিভাগের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই রক্তদান কর্মসূচীতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ অংশ নেয়ায় বিচারক ও আইনজীবীদের প্রশংসা করেন তিনি। ‘আজ আমরা প্রথম ঐতিহাসিক দিন হিসেবে এটি পালন করতে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে রাষ্ট্রের এ রকম গুরুত্বপূর্ণ দিবসে বিচার বিভাগ কোনদিন পিছপা হবে না, আমরা পালন করব।’ রক্তদান কর্মসূচীতে সহায়তা করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
×