ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাউশির সেই বিতর্কিত কর্মকর্তারা অবশেষে বদলি, চাঞ্চল্য

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৬ আগস্ট ২০১৬

মাউশির সেই বিতর্কিত কর্মকর্তারা অবশেষে বদলি, চাঞ্চল্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে বিতর্কে জড়িয়ে পড়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) সেই কর্মকর্তাদের বদলির আদেশ দিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। রবিবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বদলির আদেশ দিলে সোমবার সরকারী ছুটির মধ্যেই বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারসহ সরকারী-বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বদলি করা এক ডজন কর্মকর্তার তালিকায় আছেন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কেবল অর্থ আর তদ্বিরের জোরে মাউশিতে পদায়ন পাওয়া সাবেক ছাত্রদল-শিবিরের সদস্যরা। তালিকায় আছেন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া বেশ কয়েক কর্মকর্তাও। মাউশিতে একসঙ্গে এতবড় বদলির ঘটনা এর আগে ঘটেনি বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। বিতর্কিত হলেও প্রভাবশালী এসব কর্মকর্তার বদলির চেষ্টা করে করে নানান মহলের তদ্বিরে খোদ মন্ত্রণালয়ই পিছু হটে কয়েকবার। তবে এবার সব ধরনের বিতর্ক এড়িয়ে মাউশিকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান সোমবার জনকণ্ঠকে বলেছেন, সরকারী চাকরিতে বদলি হবে এটা স্বাভাবিক। তবে আমরা মাউশিকে সব রকমের বিতর্কের উর্ধে রাখতে চাই। আমরা চাই এখানে যারাই আসুক তারা যেন ভাবেন এটা সেবা প্রদানের স্থান, সেবা দিতে হবে। কর্মকর্তাদের সেবাদানের মানসিকতার সেই শক্তি থাকতে হবে। আমরা চাই সবাই জানুক মাউশিতে সেবা পাওয়া যায়। কেউ যেন মাউশি নিয়ে বিতর্ক তুলতে না পারে। জানা গেছে, বদলি হওয়াদের সবাই মূলত বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারী কলেজ শিক্ষক। কিন্তু তদ্বির করে, ঘুষ দিয়ে রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রেখে প্রেষণে অধিদফতরে বদলিভিত্তিক পদায়ন বাগিয়েছন গত কয়েক বছরে। অধিদফতরে পদায়ন পেয়ে খারাপ ব্যবহার করেছেন সহকর্মীদের মধ্যে, যারা কলেজে চাকরি করেন তাদের সঙ্গে। খারাপ ব্যবহার করেন বেসরকারী শিক্ষকদের সঙ্গে। দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়েছেন। এসব কারণে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে সংসদ সদস্য, শিক্ষক নেতা থেকে শুরু করে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন বহুবার। এরই ধারাবাহিকতায় মাউশি অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ তাজিব উদ্দিন, এসএম বশীর উল্লাহ, সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, এটিএম আল ফাত্তাহ, মোঃ আনোয়ার হোসেন, শারমিন সুলতানা এবং পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক এসএম কামরুজ্জামানকে বিভিন্ন সরকারী কলেজে বদলি করা হয়েছে। বদলি করা হয়েছে আরও বেশ কয়েকজনকে। অধিদফতরের উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) এসএম বশীর উল্লাহকে ভোলা সরকারী কলেজের সহযোগী অধ্যাপক পদে বদলি করা হয়েছে। সরকারী কলেজের ২০ বছরের চাকরি জীবনে ১৯ বছরই তার কেটেছে মাউশি ও এনসিটিবিতে। সহকারী পরিচালক এটিএম আল ফাত্তাহকে গোপালগঞ্জের সরকারী নজরুল কলেজে বদলি করা হয়েছে। উপ-পরিচালক (ফিন্যান্স এ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) মোহাম্মদ তাজিব উদ্দিনকে গোপালগঞ্জের ফজিলাতুন্নেছা সরকারী মহিলা কলেজে বদলি করা হয়েছে। সহকারী পরিচালক (কলেজ-২) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে ঢাকা কলেজের সহকারী অধ্যাপক পদে বদলি করা হয়েছে। সহকারী পরিচালক (কলেজ-৪) ড. মোঃ আনোয়ার হোসেনকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া সরকারী আকবর আলী কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বদলি করা হয়েছে। আরেক প্রভাবশালী সহকারী পরিচালক শরমিন সুলতানাকে ঢাকা কলেজে বদলি করা হয়েছে। পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক এসএম কামরুজ্জামানকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া সরকারী কলেজের সহযোগী অধ্যাপক পদে বদলি করা হয়েছে। একই আদেশে সরকারী বরিশাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আনিসুর রহমানকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (প্রেষণে) উপ-পরিচালক (ফিন্যান্স এ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট), ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক (সেসিপ) ড. মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন চৌধুরীকে অধিদফতরের উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন), উচ্চ মাধ্যমিক উপবৃত্তি প্রকল্পের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনকে অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (কলেজ-২) করা হয়েছে। অধিদফতরের গবেষণা কর্মকর্তা (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) একেএম মাসুদকে সহকারী পরিচালক (কলেজ-৪), ঢাকা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ জাকির হোসনকে অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ও অধিদফতরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবায়দুল কাদের মিয়াজীকে ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক (সেসিপ) পদে পদায়ন করা হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) প্রশিক্ষণ বিশেষজ্ঞ পদে মুন্সীগঞ্জের সরকারী হরগঙ্গা কলেজের অধ্যাপক মাহমুদা খাতুন ও ময়মনসিংহ সরকারী শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের (মহিলা) সহকারী অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ আলীকে পদায়ন করা হয়েছে।
×