ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৪১তম শাহাদাত বার্ষিকী পালন;###;নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল চোখে পড়ার মতো;###;সারাদেশের রাস্তায় ছিল মানুষের ঢল

কৃতজ্ঞ জাতির শ্রদ্ধাঞ্জলি

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৬ আগস্ট ২০১৬

কৃতজ্ঞ জাতির শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ৪১ বছর হয়ে গেল। মৃত্যুঞ্জয়ী মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এতটুকু ভোলেনি কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি। তাঁর প্রয়াণ দিবসে সোমবার যেন শোকস্তব্ধ ছিল দেশের সব প্রান্তর। শোকাচ্ছন্ন নীরবতায় থমকে গিয়েছিল গোটা দেশ। ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর নশ্বর শরীর কেড়ে নিলেও তাঁর অবিনশ্বর চেতনা ও আদর্শ যে মৃত্যুঞ্জয়ী, ঘাতকের সাধ্য ছিল না ইতিহাসের সেই মহানায়কের অস্তিত্বকে বিনাশ করে- কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি স্বাধীনতার প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতি সার্বজনীন শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে প্রতিবছর তারই জানান দেয়। শেখ মুজিব বাড়ন্ত বটবৃক্ষের মতো ধাপে ধাপে বাঙালীর সামনে উদ্ভাসিত হয়েছিলেন। মৃত্যুর চার দশক পরেও সমান ভাবেই রয়েছেন সমুজ্জ্বল। শোককে শক্তিতে পরিণত করে নতুন শপথে বলিয়ান বাঙালী জাতি ৪১ বছর আগের ভয়াল এক রাতের শোকাবহ স্মৃতি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে। এবার শ্রদ্ধা জানাতে আসা শোকার্ত মানুষের স্রোত থেকে প্রধান তিনটি দাবি উচ্চারিত হয়েছে সর্বত্র। তা হলো- জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ, বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের বিচারের মুখোমুখি করতে জাতীয় কমিশন গঠন এবং বিদেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা। গোটা জাতি বিনম্র শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণের পাশাপাশি তাঁর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ও ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার দৃঢ় শপথও নিয়েছে। এই দৃঢ় প্রত্যয় আর অঙ্গীকারের মধ্যে দিয়ে পুরো জাতি সোমবার স্মৃতিভারাতুর হয়ে এবং বিনম্র চিত্তে শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছে স্বাধীনতার মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় যথাযোগ্য মর্যাদায় ও নানা আনুষ্ঠানিকতায় দেশব্যাপী পালিত হয় জাতির পিতার ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস। প্রাণের অর্ঘ্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি সাম্প্রতিক একাত্তরের পরাজিত শক্তির দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ ও নির্মূল করে আরও উন্নত দেশ গড়ার শপথও নিয়েছে জাতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু ব্যক্তি নামে সীমাবদ্ধ নন, তিনি একটি আদর্শ। ইতিহাসের স্রষ্টা। তাঁর আদর্শ ছড়িয়ে পড়েছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। বঙ্গবন্ধু মৃত্যুঞ্জয়ী। তাই ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তাঁর আদর্শকে যে হত্যা করা সম্ভব হয় না তা আবারও চোখে আঙ্গুল দিয়ে পঁচাত্তরের ঘাতক ও নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের জানিয়ে দিল জাতি। আদর্শিক বঙ্গবন্ধু যে চিরঞ্জীব তা টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, দেশের পথে-প্রান্তরে শ্রদ্ধা জানাতে আসা শোকার্ত মানুষের অস্বাভাবিক ঢল আবারও তা প্রমাণ করেছে। বাঙালী জাতি এতটুকু ভোলেননি বজ্রকণ্ঠের এই মহামানবকে। যিনি জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ, লাখো শহীদের রক্তস্নাত লাল-সবুজের পতাকা। শুনিয়েছিলেন সেই অমর বাণী- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ধানম-ির ৩২ নম্বর ছিল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও নানা শ্রেণী-পেশাসহ সর্বস্তরের শোকার্ত মানুষের ঢল। শহর জুড়ে দেয়ালে দেয়ালে শোকের পোস্টার। সর্বত্র শোকের তোরণ, কালো পতাকা, বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠের সেই ৭ মার্চের ভাষণ ও স্মৃতি জাগানিয়া গানে সোমবার রাজধানীসহ পুরো দেশের পরিবেশটাই পাল্টে গিয়েছিল। সাম্প্রতিক গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার ঘটনায় এবারের শোক দিবসে নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল উল্লেখ করার মতো। শুধু আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীই নয়, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদেরও কড়া নজরদারিও ছিল চোখে পড়ার মতো। বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণের পাশাপাশি দেশের সর্বত্র শোকার্ত মানুষের কণ্ঠে ছিল অভিন্ন সেøাগান- ‘কে বলেছে মুজিব নাই, মুজিব আছে সারা বাংলায়’, ‘মুজিবের বাংলায় জামায়াত-শিবির-জঙ্গীদের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি। জাতির পিতার শাহাদাতবার্ষিকী জাতীয় শোক দিবস পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালিত হয়েছে। সকালে দেশ ও জাতির পক্ষ থেকে ধানম-ির ৩২ নম্বরে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শোকের কর্মসূচী সূচনা করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। পরে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে তাঁরা মোনাজাত করেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা, বঙ্গবন্ধুর নাতনি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনী প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। বিদেশ থাকায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় সব হারানোর বেদনার্ত অশ্রু সবাইকে আবেগতাড়িত করে। সরকারীভাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দলের নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানম-ি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত বাড়ির ভেতরে যান। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের কালরাতে যে সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর মতো মহাপুরুষের নিথর দেহ পড়ে ছিল, সেখানে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে ও নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ভয়াল ওই রাতের শোকাবহ স্মৃতি স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা। আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই বাঙালীর। পরে ওই ভবনের একটি কক্ষে বসে কিছু সময় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময়ে প্রধানমন্ত্রীর পাশে শেখ রেহানা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল উপস্থিত ছিলেন। প্রায় আধা ঘণ্টা পর বঙ্গবন্ধু জাদুঘর থেকে বোন শেখ রেহানা ও মেয়ে পুতুলকে সঙ্গে নিয়ে বনানী কবরস্থানে যান শেখ হাসিনা। সেখানে মা, ভাইসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। ১৫ আগস্ট শহীদদের প্রতিটি কবরে গোলাপের পাপড়ি ছিটান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাসহ আওয়ামী লীগ নেতারা যান গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায়। সেখানে জাতির পিতার সমাধিতে প্রধানমন্ত্রী পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এছাড়া টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দেয়ার পর মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন তারা। পরে সেখানে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। মোনাজাতে দেশ-জাতি এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়। এ দুটি স্থানেও তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল বঙ্গবন্ধুর প্রতি গার্ড অব অনার প্রদান করে। বাদ আছর বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর মাজার, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও বনানীতে ১৫ আগস্টে শহীদদের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে আসা শোকার্ত মানুষের স্রোত অতীতের সকল রেকর্ডকে যেন এবার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর বাসভবন প্রাঙ্গণ এবং টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারস্থল হয়ে উঠেছিল শোকার্ত লাখো মানুষের মিলন মোহনা। দিনভর কৃতজ্ঞ বাঙালীর শ্রদ্ধা আর ভালবাসার পুষ্পাঞ্জলিতে ভরে উঠেছিল ধানম-ির ৩২ নম্বর জাতির পিতার প্রতিকৃতি, টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার এবং বনানীর ১৫ আগস্টের শহীদদের সমাধিস্থল। অগণিত মানুষের হৃদয়ের আবেগ, প্রগাঢ় শ্রদ্ধা আর ১৯৭৫ সালের সেই ভয়ঙ্কর কালরাতের বেদনাবিধুর স্মৃতিচারণ করেছে জাতি। দল ও মতো পার্থক্যের উর্ধে উঠে এবার অনেকটা সর্বজনীনভাবে জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়। প্রতিবছর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ঘটা করে কেক কেটে জš§দিন পালন করলেও এবার তিনি তা করেননি। শুধু আওয়ামী লীগই নয়, সারাদেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসহ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ, সংগঠন এবার বিস্তারিত কর্মসূচীর মাধ্যমে স্মরণ করছে মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। দিনব্যাপী শহরজুড়ে মাইকে প্রচারিত হয়েছে কোরান তেলাওয়াত এবং এর ফাঁকে ফাঁকে দেশাত্মবোধক ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাগানিয়া গান। এছাড়া মাইকে উচ্চারিত হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর তেজোদীপ্ত বলিষ্ঠ কণ্ঠের সেই আহ্বান : ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক... এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এবার জাতীয় শোক দিবসের দলীয় আয়োজনকে বহুগুণে ছাপিয়ে গিয়েছিল গণমানুষের আয়োজন। শহরের প্রত্যেক পাড়া মহল্লায়, সড়কের পাশ দিয়ে যেতে যেতে চোখে পড়েছে খানিক পরপরই কালো ব্যানার, কালো পতাকা উড়িয়ে চলছে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ। সোমবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারী, আধা সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ভবন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে তোলা হয়। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনসমূহেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সোমবার ছিল সরকারী ছুটি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু ভবন ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলোচনা সভা, জাতীয় শোক দিবসের সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ কবিতা পাঠ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, হামদ্ ও নাত প্রতিযোগিতা ও দোয়ার আয়োজন করা হয়। বাদ জোহর সারাদেশে সকল মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। দিনভর চলেছে কাঙ্গালী ভোজ। দেশের সকল সরকারী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালসহ জেলা, উপজেলা হাসপাতাল এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়। মা-ভাইয়ের সমাধিপাশে শোকবিহ্বল বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা ॥ ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় বনানীর কবরস্থানের সারি বাঁধা ১৮টি কবর। এসব কবর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে নরপিশাচ ঘাতকচক্রের নির্মম বুলেটে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে নিহত বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, শিশুপুত্র রাসেলসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের। ৪১ বছর আগে ঘাতকদের বন্দুকের নলের মুখে স্বজনদের চোখের জলে শেষ বিদায়টুকু দিতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা। সোমবার সকালে মা-ভাইদের কবরে গিয়ে চোখের জল থামিয়ে রাখতে পারেননি একসঙ্গে সব স্বজনহারা শোকবিহ্বল শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। অশ্রুসিক্ত নয়নে তাঁরা প্রিয় স্বজনদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে মোনাজাত ও ফাতেহা পাঠ করেন। জাতির পিতার দুই কন্যা নিজ হাতে মুঠো মুঠো ভালবাসার ফুল ছড়িয়ে দেন প্রিয় স্বজনদের কবরে। নেতাকর্মী, মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বনানী কবরস্থানে গেলে সেখানে এক অন্যরকম আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সকাল থেকেই সেখানে চলছিল শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় কোরানখানি ও দোয়া মাহফিল। প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে একে একে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহীদদের কবরে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুুল হক এবং সাঈদ খোকন ১৫ আগস্টে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে সর্বস্তরের শোকার্ত মানুষের ঢল ॥ ধানম-ি ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ ও বিশিষ্টজনসহ সর্বস্তরের শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সকল সংগঠন এবং নগরীর প্রতিটি শাখা থেকে শোক মিছিলসহ বঙ্গবন্ধু ভবনের সম্মুখে আগমন এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করে। সকাল ৬টার মধ্যেই ভরে ওঠে পুরো ৩২ নম্বর সড়ক। লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় পুরো এলাকা। কালো ব্যানার হাতে ও বুকে কালোব্যাজ ধারণ করে নারী-পুরুষ এবং শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে জাতির পিতাকে স্মরণ করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পক্ষে এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ওবায়দুল কাদের, মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডাঃ দীপু মনিসহ সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। সর্বস্তরের মানুষ সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে মিলাদে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাতাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সোমবার বাদ আছর ধানম-ি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মিলাদ ও দেয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন। খবর বাসসর। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন এবং তাঁর স্বামী খন্দকার মাসরুর হোসেইন, শেখ রেহানার পুত্র রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং তার স্ত্রী পেপি সিদ্দিক এবং ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এমপিসহ পরিবার-পরিজন এবং আত্মীয়-স্বজন মিলাদে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এমপি, ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, মহিলা আওয়ামী লীগ এবং যুব মহিলা লীগের নেতাকর্মীরা মিলাদে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন যারা ॥ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য স্থানটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। স্পীকারের পর মোহাম্মদ নাসিম, রাশেদ খান মেনন ও দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ১৪ দল জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে। পরে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এছাড়া জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল, জাতীয় পার্টিসহ (জেপি) বিভিন্ন দলের নেতারা শ্রদ্ধা জানান বঙ্গবন্ধুকে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি), মহিলা শ্রমিক লীগ, তরুণ লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, হকার্স লীগ, তাঁতী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, স্বাধীনতা ব্যবসায়ী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, যুব উন্নয়ন অধিদফতর, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন শ্রমিক-কর্মচারী লীগ, গণপূর্ত শ্রমিক লীগ, মোটরচালক লীগ, রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগ, ওলামা লীগ, জাতীয় বিদ্যুত শ্রমিক লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ফিল্ম আর্কাইভ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিষদ, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, গণগ্রন্থাগার অধিদফতর, জাতীয় জাদুঘর, নজরুল ইনস্টিটিউট, শিশু একাডেমি, খেলাঘর, বাংলাদেশ বেতার, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, বিনিয়োগ বোর্ড, শিল্প গবেষণা পরিষদ, পলিটেকনিক শিক্ষক পরিষদ, ঢাকা আইনজীবী সমিতি, তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জাতীয় মহিলা সংস্থা, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বেসরকারী মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা কৃষিবিদ পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, জাতীয় গীতিকবি পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আদর্শ মূল্যায়ন ও গবেষণা সংসদ, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ, আওয়ামী প্রজন্ম লীগ, শেখ রাসেল শিশু সংসদ, বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকসহ এসব ব্যাংকের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন, ছিন্নমূল হকার্স লীগ, রেলওয়ে শ্রমিক লীগ, ঢাকাস্থ টুঙ্গিপাড়া সমিতি, হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বাস্তুহারা লীগ, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ, জয় বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, আবদুস সামাদ আজাদ ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু শিল্পীগোষ্ঠী, সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ, ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু ফেডারেশন, টিএ্যান্ডটি শ্রমিক ফেডারেল ইউনিয়ন, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত স্মৃতি পরিষদ, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ, সাধনা সংসদ, আওয়ামী শিশু-কিশোর যুবজোট, নির্মাণ শ্রমিক লীগ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযোদ্ধা সমাজকল্যাণ পরিষদ, জননেত্রী পরিষদ, আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম, আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু আইন পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা বিসিএস অফিসার্স কল্যাণ সমিতি, বঙ্গবন্ধু ললিতকলা একাডেমি, সোনার বাংলা যুব পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড শ্রমিক-কর্মচারী লীগ, স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ, বিসিএস পাবলিক ওয়ার্কার্স ইঞ্জিনিয়ার্স এ্যাসোসিয়েশন, টেলিযোগাযোগ শ্রমিক ইউনিয়ন, বিআইডব্লিউটিএ ঘাট শ্রমিক ইউনিয়ন, ঢাকা নৌবন্দর ঘাট শ্রমিক বহুমুখী সমবায় সমিতি, বঙ্গবন্ধু কবিতা পরিষদ, শান্তি পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিশু একাডেমি, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম, স্বাধীনতা ডিপ্লোমা চিকিৎসক পরিষদ, বঙ্গমাতা পরিষদ, স্বাধীনতা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স এ্যাসোসিয়েশন, বঙ্গবন্ধু সাহিত্য পরিষদ, বৃহত্তর ফরিদপুর চাকরিজীবী কল্যাণ সমিতি, গোপালগঞ্জ জেলা সমিতি, নৌকার নতুন প্রজন্ম, আওয়ামী আইন ছাত্র পরিষদ, খ্রীস্টান এ্যাসোসিয়েশন, বৌদ্ধ ছাত্র সংসদ, শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ, ডিপ্লোমা নার্সেস এ্যাসোসিয়েশন, সেন্টার ফর মেডিক্যাল এডুকেশন, সনাতন আইনজীবী কল্যাণ পরিষদ, চিলড্রেন্স ভয়েস, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাসহ (বাসস) অজস্র দল ও সংগঠন। ৩২ নম্বরের আশপাশের রাস্তাসহ রাজধানীজুড়ে শোকের প্রতীক কালো পতাকার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড ও তোরণ তৈরি করা হয়েছিল। বঙ্গভবনে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সোমবার বঙ্গভবনে এক মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। যোহরের নামাজের পর দরবার হলে অনুষ্ঠিত মিলাদ মাহফিলে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ যোগ দেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের নিহত সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মিলাদ মাহফিলে রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্যগণ এবং বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গভবন মসজিদের ইমাম মাওলানা মাসুদুর রহমান মোনাজাত পরিচালনা করেন। এর আগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর প্রযোজিত ‘চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সভায় বক্তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উল্লেখযোগ্য দিক নিয়ে আলোচনা করেন। এদিকে সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। শ্রদ্ধা নিবেদনকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সমকাল পত্রিকার সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ শফিকুর রহমান, বিএফইউজের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ। জাতীয় শোক দিবসে জাতীয় প্রেসক্লাবে রক্তদান কর্মসূচীরও আয়োজন করা হয়। শোক দিবস উপলক্ষে যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবকদের মধ্যে আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্পের জন্য যুব ঋণের চেক বিতরণ করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার। অধিদফতরের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মহাপরিচালক আনোয়ারুল করিম সভাপতিত্ব করেন। নগরীর কাকরাইলের জনপ্রকৌশল অধিদফতর মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা বক্তব্য রাখেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল। শোক দিবস উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মুকাররম মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সারাদেশের সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে দরিদ্র রোগীদের দুই ঘণ্টা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বহির্বিভাগে বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবার উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান। এর পর বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী পালিত হয়। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের আয়োজনে হোটেল অবকাশের ব্যাংককুয়েট হলে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। দুপুরে নিজেদের প্রধান কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করে রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সভাপতিত্ব করেন। এর আগে আরেফিন সিদ্দিক ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর বসার জন্য নির্মিত চেয়ারটি টিএসসি মিলনায়তনে উদ্বোধন করেন। উপাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত ‘মানচিত্রে রক্তের ফোয়ারা’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং চারুকলা অনুষদ আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন। দিবসটি উপলক্ষে সংগঠনের কার্যালয়ে কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি। এতে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা, সংগঠনের মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহসহ বিভিন্ন টার্মিনালের নেতারা। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ॥ জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সোমবার এ উপলক্ষে বিজিবির সকল মসজিদ ও স্থাপনায় খতমে কোরান সম্পন্ন এবং বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের নিহত সদস্যবর্গের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জীবনীর ওপর নির্মিত প্রমাণ্যচিত্র চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু ও অসমাপ্ত মহাকাব্য এবং বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে প্রথম ব্যাচের ক্যাডেটদের পাসিংআউট অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বাহিনীটির সকল সদস্যকে বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ ও উপদেশ অনুসরণের আহ্বান জানান।
×