ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঝুলে আছে মিউচুয়াল সংশোধনী বিধিমালা

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ১৬ আগস্ট ২০১৬

ঝুলে আছে মিউচুয়াল সংশোধনী বিধিমালা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মিউচুয়াল ফান্ডে লভ্যাংশ হিসেবে রিইনভেস্টমেন্ট বন্ধ করতে আইনের সংশোধন খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বরে। একই দিনে আইপিও আইনেও (পাবলিক ইস্যু রুলস) সংশোধন খসড়া অনুমোদনের পর জনমত যাচাই শেষে তা চূড়ান্ত ও কার্যকর করেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর মধ্যে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর আইপিও আইন সংশোধন হয়ে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। অথচ আট মাস পরও আলোর মুখ দেখেনি মিউচুয়াল ফান্ডের আইন সংশোধন। এর মধ্যে কিছু মিউচুয়াল ফান্ড রিইনভেস্টমেন্ট ঘোষণাও করে ফেলেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, মিউচুয়াল ফান্ডের অবসায়ন নিয়ে উচ্চ আদালতে কয়েকটি রিট মামলা দায়েরের পর আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। এর কারণ রিটের বিষয়ের সঙ্গে সংশোধন ইস্যুর কিছুটা সংশ্লিষ্টতা ছিল। এসব বিবেচনায় সংশোধন কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয় বলে জানান তিনি। তবে ওই কর্মকর্তা জানান, মিউচুয়াল ফান্ডসংক্রান্ত মামলাটি ইতোমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে। এর পরও আইনটির সংশোধন প্রক্রিয়া ঝুলে থাকার বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি তিনি। শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনাকারী একাধিক সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি চায় না, আইনের প্রস্তাবিত সংশোধন চূড়ান্ত হোক। তারা প্রস্তাবিত সংশোধনে ব্যাপক রদবদল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। যোগাযোগ করা হলে সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানিগুলোর এ বিষয়ে মন্তব্য পাওয়া যায়নি। কমিশনও এ বিষয়ে মুখ খুলছে না। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর বিএসইসি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালার প্রস্তাবিত সংশোধনের ধারণা প্রকাশ করে। সেখানে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা করে গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলোতে সংশোধন আনার কথা বলা হয়। প্রস্তাবিত সংশোধন খসড়ায় বলা হয়েছে, কোন মিউচুয়াল ফান্ড থেকে বিনিয়োগকারীদের কখন লভ্যাংশ হিসেবে রিইনভেস্টমেন্ট বা পুনর্বিনিয়োগ দিতে পারবে, তা নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে। সংশোধনী খসড়ায় বলা হয়েছে, কোন মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট প্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি) ওই ফান্ডের বাজারদরের তুলনায় কম হলে সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি লভ্যাংশ আকারে রিইনভেস্টমেন্টের প্রস্তাব করতে পারবে না। তা ছাড়া লভ্যাংশ আকারে রিইনভেস্টমেন্ট অনুমোদন হলেও বিনিয়োগকারীকে নগদ বা রিইনভেস্টমেন্ট, এই উভয় পদ্ধতির মধ্যে যে কোন একটি বেছে নেয়ার সুযোগ দিতে হবে। গত কয়েক বছর একাধিক সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি রিইনভেস্টমেন্ট আকারে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিচ্ছে। এতে দেখা যায়, ৪-৫ টাকা বাজারদরের ফান্ড বিনিয়োগকারীদের বাধ্যতামূলকভাবে ১১ টাকা দরে কিনতে হয়েছে। এতে তাদের অন্তত ৩০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। জেনেবুঝেই সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি এমন লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করেছিল। ফান্ডগুলো ট্রাস্টি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা না করে ওই লভ্যাংশ অনুমোদন করে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার প্রেক্ষাপটে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ সংক্রান্ত আইনের ধারায় সংশোধন আনার উদ্যোগ নেয়। নতুন সংশোধন খসড়ায় মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বমোট মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর রাখার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বর্তমানে এ নীতি কমিশনের একটি নির্দেশনা অনুসারে কার্যকর রয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, চাইলে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডকে বেমেয়াদিতে রূপান্তরের সুযোগ বহাল থাকবে। এ ছাড়া মেয়াদী ফান্ডের ন্যায় বেমেয়াদী ফান্ড স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে লেনদেনের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। এক্ষেত্রে এ ধরনের ফান্ডের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের ব্যবধান ৩ থেকে ৫ শতাংশ সীমাবদ্ধ রাখা নিশ্চিত করা হবে। বিনিয়োগের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রতিমাসে সব ধরনের মিউচুয়াল ফান্ডের মাসিক ভিত্তিতে পোর্টফোলিও প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হবে।
×