ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুর পুষ্টিহীনতা

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ১৬ আগস্ট ২০১৬

শিশুর পুষ্টিহীনতা

অপুষ্টির ঝুঁকিতে ৬০ লাখ শিশু- সম্প্রতি জনকণ্ঠে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম। অপুষ্টির ঝুঁকিতে থাকা এত বিপুলসংখ্যক শিশুর জন্য জরুরীভিত্তিতে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সেটাই বিবেচ্য। দরিদ্র পরিবারে বহু স্বাস্থ্যহীন শিশুর বাস। আবার শহুরে শিক্ষিত পরিবারের শিশু অপুষ্টির শিকার হচ্ছে মায়ের দুধ থেকে বঞ্চিত হওয়ায়। শিশুদের চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টির যোগান দিতে ব্যর্থ হলে অন্যক্ষেত্রে উন্নতির জন্য আমাদের সন্তুষ্টি অর্থহীন হয়ে পড়বে। কারণ শিশুরাই জাতির ভবিষ্যত। শিশুমৃত্যু রোধে বাংলাদেশ বড় সাফল্য দেখিয়ে বিশ্বসভায় প্রশংসা অর্জন করেছে। ১৯৯০ সালে যেখানে বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি হাজার শিশুর মধ্যে মারা যেত ১৪৪ জন, সেখানে সংখ্যাটি ৩৮ জনে নেমে এসেছে ২০১৫ সালে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে গত ২৫ বছরে শিশুমৃত্যু রোধে বাংলাদেশের এমন সাফল্য নিঃসন্দেহে একটি বিরাট অর্জন। শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ওপরে। যেখানে ভারতে ২৯ ও পাকিস্তানে প্রতি হাজারে ৪২ জন শিশু নবজাতক অবস্থায়ই মারা যায়, সেখানে বাংলাদেশে সংখ্যাটি ২৪ জন প্রতি হাজারে। লক্ষণীয়, বাংলাদেশী শিশুদের জন্মকালীন আয়ু প্রত্যাশাও প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বেশি। এ সাফল্যের একক দাবিদার খুঁজে পাওয়া কঠিন। বরং কয়েক দশক ধরে সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টা, উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার নিরবচ্ছিন্ন সহায়তা এবং জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনই এ অর্জনের প্রধান কারণ। ১৩ সহস্রাধিক কমিউনিটি ক্লিনিক বর্তমানে মাতৃত্বকালীন সেবা দিচ্ছে স্থানীয়দের। গবেষণায় দেখা গেছে, পাঁচ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগেই বেশির ভাগ শিশু মারা যায় মূলত অপুষ্টি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও ম্যালেরিয়ায়। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক শিশুই অপুষ্টির কারণে মারা যাচ্ছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদি এসব ইস্যুর প্রতি সরকারের মনোযোগ বাড়ানো গেলে পরিস্থিতির অধিকতর উন্নয়ন সম্ভব বলে বিশ্বাস। মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে শিশুদের জন্য কৌটা বা প্যাকেটজাত গুঁড়োদুধ, অন্যান্য খাদ্য ও সরঞ্জামাদির প্রলুব্ধকর বিজ্ঞাপন বা প্রচারের ক্ষেত্রে আইনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেটা মানা হচ্ছে না। চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা বলছেন, জন্মের পর থেকে দুই বছর পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধই শিশুর জন্য শ্রেষ্ঠ পুষ্টিকর খাদ্য। বিকল্প হিসেবে গুঁড়োদুধ শিশুর জন্য খুবই ক্ষতিকর। এ দুধ নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। শারীরিক বিকাশ ঠিকমতো হয় না। দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩০ লাখ শিশু জন্মায়। তাই বছর ঘুরতেই দুই বছর বয়সী বাচ্চার সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৬০ লাখ। এই বিপুলসংখ্যক শিশুর প্রত্যেককে দুই বছর পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করাটা একটা চ্যালেঞ্জ। আমাদের অভিভাবকদেরই এ বিষয়ে অসচেতনতা রয়েছে। শিশুর অপুষ্টি রোধ করতে হলে কয়েকটি বিষয় সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। প্রথমত শিশুর দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতেই হবে। মায়ের অনুপস্থিতি কিংবা স্বাস্থ্যগত কারণে একান্ত বাধ্য হলে বিকল্প খাদ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। দরিদ্র পরিবারের শিশুদের অপুষ্টি রোধকল্পে কেবল শিশুর স্বাস্থ্য সমস্যা বিবেচনা করলেই চলবে না, শিশুর মায়ের স্বাস্থ্যের দিকটিতেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
×